নিজস্ব সংবাদদাতা, পূর্ব বর্ধমান:-পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করে ইতিহাস গড়লেন বর্ধমানের সৌমেন সরকার। ১৫ মে, বৃহস্পতিবার ভোরে আট সদস্যের একটি আন্তর্জাতিক অভিযাত্রী দলের সঙ্গে সৌমেন পৌঁছান এভারেস্টের চূড়ায়। সফলভাবে পতাকা উত্তোলনের পর ধাপে ধাপে নেমে বর্তমানে পৌঁছে গিয়েছেন নিরাপদ স্থানে। এই ৫৬ দিনের অভিযানটির আয়োজন করেছিল ‘৮ কে এক্সপেডিশন’ নামক সংস্থা। সংস্থার তরফে সামাজিক মাধ্যমে সৌমেনের সাফল্যের খবর জানানো হয়েছে। পেশায় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের পূর্ত দপ্তরের সহকারী বাস্তুকার সৌমেন থাকেন বর্ধমান শহরের রানিসায়র পূর্ব পাড় এলাকায়। অভিযানে তাঁর সঙ্গী ছিলেন চিন, আমেরিকা-সহ বিভিন্ন দেশের পর্বতারোহীরা এবং অভিজ্ঞ চারজন শেরপা। সৌমেনের সহযাত্রীদের মধ্যে ছিলেন বাফা মুসায়েবা, জুলিয়া লিউবোভা, চেন জেনজুয়ান, লাকপা শেরপা, দাওয়া শেরপা, দাওয়া তেনজেন শেরপা এবং মিঙ্গমা দর্জি তামাং।
দলের অন্যতম সদস্য লাকপা শেরপার মতে, প্রবল ঝোড়ো হাওয়া ও প্রতিকূল পরিস্থিতি জয় করে চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছেছেন সকলে। তবে সৌমেনের সাফল্যের মাঝে ছায়া ফেলেছিল আরেক বাঙালি অভিযাত্রী রানাঘাটের সুব্রত ঘোষের মৃত্যুর খবর। এভারেস্ট জয় করার পর নামার পথে অসুস্থ হয়ে তিনি প্রাণ হারান। সেই খবরে উদ্বেগে ছিলেন সৌমেনের পরিবার ও শুভানুধ্যায়ীরা। শুক্রবার সন্ধ্যায় স্বামীর সঙ্গে ফোনে কথা হলে কিছুটা স্বস্তি পান স্ত্রী তনুশ্রী মণ্ডল, যিনি বর্ধমান হরিসভা হিন্দু বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। তাঁদের মেয়ে তেজস্বী মণ্ডলও রয়েছেন বাড়িতে। তনুশ্রী জানান, “বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা ৪৫ মিনিটে এভারেস্ট সামিট হয়েছে বলে ও ফোনে জানিয়েছে। ওঁর এভারেস্ট জয় স্বপ্ন ছিল, সেটা সফল হয়েছে শুনে খুব ভালো লাগছে। তবে যতক্ষণ না বেস ক্যাম্পে পুরোপুরি ফিরে আসছে, ততক্ষণ চিন্তা থাকছেই”।

সৌমেন সরকারের পর্বতারোহণ যাত্রা দীর্ঘদিনের। প্রায় ২০ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন এই পর্বতারোহী দেশের ও বিদেশের পাঁচটি উচ্চতম শৃঙ্গ অভিযান সফলভাবে সম্পূর্ণ করেছেন। বয়স ৫৪ হলেও এখনও তিনি অত্যন্ত সক্রিয়। উত্তরকাশীর পর্বতারোহণ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে সেরা শিক্ষার্থীর খেতাব পেয়েছেন তিনি। তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রথম ভারতীয় মহিলা এভারেস্টজয়ী বাচেন্দ্রি পালও।
সৌমেন পূর্বে সফলভাবে অভিযান করেছেন —
২০১৮: মাউন্ট স্টক কাংগ্রি
২০১৯: মাউন্ট নুন (৭১৩৫ মিটার)
২০২২: মাউন্ট ইউনাম
২০২৩: মাউন্ট এলব্রুস (রাশিয়া)
২০২৪: মাউন্ট ডেও টিব্বা
এভারেস্ট অভিযানকে সৌমেন অন্য সব অভিযানের তুলনায় সম্পূর্ণ আলাদা এবং কঠিন বলে মানেন। তাঁর কথায়, “এখানে আবহাওয়ার অনিশ্চয়তা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। কখনও হঠাৎ ঝড়-বৃষ্টি, কখনও প্রবল তুষারপাতে অভিযান বাতিল হয়ে যায়। বিশেষ করে খুম্ব গ্লেসিয়ার, হিলারি স্টেপ আর এভারেস্ট উইন্ডোর মতো পয়েন্টগুলো পার হওয়া অত্যন্ত কঠিন”। চলতি বছরের ১ এপ্রিল বর্ধমান থেকে রওনা দিয়েছিলেন সৌমেন। প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা সম্পূর্ণ নিজের খরচে তিনি এই অভিযানে অংশ নেন। তাঁর এই ঐতিহাসিক সাফল্য শুধুই ব্যক্তিগত নয়, বরং বাংলার পর্বতারোহণ ইতিহাসে এক গর্বের অধ্যায়।