প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় বর্ধমান ১৬ জানুয়ারি
এক ঝলক দেখলে মনে হবে এযেন এক অন্য গঙ্গা সাগর। বৃহস্পতিবার লাখো আদিবাসী পূণ্যার্থী পূণ্য স্নান সেরে পিতৃপুরূষের উদ্দেশ্যে তর্পন সারলেন দামোদরে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের তেলকুপি গয়া ঘাটে । তর্পন সেরে তারা পুজোও দিলেন তেলকুপি ঘাটের মারাংবুরু মন্দিরে। পৌষ সংক্রান্তিতে গঙ্গা সাগর যেমন ভরে গিয়েছিল হিন্দু পূণ্যার্থী সমাগমে ঠিক তেমনই এই দিন দামোদরের তেলকুপি ঘাটের বালির চড় ঢাকা পড়লো আদিবাসী পূণ্যার্থীদের ভিড়ে ।
প্রতিবছর ১ মাঘ জামালপুরের তেলকুপি গয়া ঘাটে পূণ্য স্নান ও অস্থি বিসর্জন সমারোহে সামিল হন রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা আদিবাসী পূণ্যর্থীরা। শুধু এই রাজ্যের আদিবাসীরাই নয় ,ঝাড়খণ্ড , বিহার ও ওড়িষ্যা রাজ্যের হাজার হাজার পূণ্যার্থীও এদিন পূণ্য স্নান সারলেন তেলকুপি গয়া ঘাটে ।
পূণ্য স্নান পর্ব নির্বিঘ্নে সমাপ্ত করতে গঙ্গাসাগরের মতো এখানেও এদিন মোতায়েন রাখা হয় বিশাল পুলিশ বাহিনী । জেলা পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় , জেলাপরিষদ সভাধিপতি শম্পা ধারা , সহ সভাধিপতি দেবু টুডু জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মেহেমুদ খান, বিডিও শুভঙ্কর মজুমদার প্রমুখরা এদিন তেলকুপি ঘাটে আয়োজিত বিশেষ অনুষ্ঠানে যোগদেন । তেলকুপি ঘাটের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সামাল দিতে এদিন হিমশিম খেতে হয় পুলিশ কর্মীদের । দামোদরে বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থাও রাখা হয়েছিল । দামোদরের চরেই এদিন বসানো হয়েছিল মেডিকেল ক্যাম্প । জেলা পুলিশ সুপার আদিবাসী সমাজের ৫০ জন্য বিশিষ্ঠ জনের হাতে তাঁদের ধর্মীয় পোষাক পাঞ্চি তুলেদেন ।
তর্পন উৎসব আয়োজকদের তফরে রবীন মাণ্ডি বলেন ,“বর্ণ হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজনের কাছে গঙ্গাই সবথেকে পবিত্র জলাশয় ।কিন্তু সেই সুপ্রাচীন কালথেকেই দামোদর নদকেই সবথেকে পবিত্র জলাশয় হিসাবে মান্যতা দিয়ে আসছেন আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষজন। দামোদরের তেলকুপি গয়া ঘাট এই দেশের আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষজনের কাছে সর্বশ্রেষ্ঠ পূণ্য তীর্থভূমি হিসাবে পরিচিত ।বর্ণ হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজন মহালয়ার দিন গঙ্গায় পিতৃপুরুষের উদ্দ্যেশ্যে তর্পন সারেন । আর আদিবাসীরা প্রতিবছর ১ মাঘ দামোদরের তেলকুপি গায়া ঘাটে পূণ্য স্নান সেরে পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে তর্পন সারেন। তর্পন সেরে আদিবাসীরা তাদের আরাধ্য দেবতা “ শিব তথা মারাং বুরুর” মন্দিরে পুজো দেন । ” আদিবাসী সমাজের বিশিষ্ঠ ব্যক্তিবর্গ , কবি , সাহিত্যিক ও শিল্পীরা এদিন পূণ্য তীর্থ তেলকুপি ঘাটে সমবেত হয়েছিলেন। ধর্মীয় উপাচার সেরে আদিবাসী পুরুষ ও মহিলারা এদিন দামোদরে বালির চরে নাচ গানে মাতোয়ারা হন । বালির চরেই চললো রান্না করে স্বপরিবার খাওয়া দাওয়া । আদিবাসী তর্পন উৎসব উপলক্ষে দামোদরের বালির চরে এদিন জমজমাট মেলাও বসেছিল। রীতি মেনে সূর্যাস্তের প্রাক্কালেই দামোদর ছেড়ে যে যার নিজের বাড়ির উদ্দ্যেশ্যে রওনা হন পূণ্যার্থীরা ।