সিটিজেনসিপ অ্যামেন্ডমেন্ট বিল (সিএবি ) ইতিমধ্যেই পাশ করিয়েছে কেন্দ্রের সরকার ।এবার কেন্দ্রের সরকার চাইছে পশ্চিম বাংলায় এনআরসি চালু করতে। এসব শোনার পর থেকেই একমাত্র ছেলে কমলের ভবিষ্যৎতের কথা ভেবে চরম আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন মা । ছেলের জন্ম সার্টিফিকেট ও ভোটার কার্ড জোগাড়ের জন্য কয়েকদিন যাবৎ তিনি নানা মহলে দরবার করে চলেছিলেন। কিন্তু জোগাড় করতে পারেন নি ।এনআরসি চালু হলে ছেলেকে দেশছাড়া হতে হবে এই আতঙ্কে শেষমেষ আত্মহত্যার পথ বেছেনিলেন মা শিপ্রা শিকদার (৩৬)। মর্মান্তিক এই ঘটনাটি শনিবার ঘটেছে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানার জৌগ্রামের তেলে এলাকায়। বেলায় জামালপুর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বর্ধমান হাসপাতাল পুলিশ মর্গে পাঠায় । অস্বাভিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে পুলিশ তদন্ত শুরু করে ।
মৃত বধূর ভাসুর বিপুল শিকদার জানিয়েছেন , তেলে গ্রামে পাশাপাশি বাড়িতে থাকতেন তিনি ও তাঁর ভাই সুভাষ । ১০০ দিনের কাজ করতো সুভাষের স্ত্রী শিপ্রা । আর সুভাষ মোটর ভ্যানে মালবয়ে যেটুকু রোজগার করতো তা দিয়ে তাঁদের সংসার চলে । বছর ১৯ বয়সী সুভাষের একমাত্র ছেলে কমল তাঁর বাবাকে মোটর ভ্যানে মাল বওয়ায় সাহায্য করে । পারিবারিক অবাভ অনটনের জন্য নবম শ্রেশীতে পাঠরত কালে কমলকে স্কুল ছাড়তে হয় । মেয়ে শুমি জৌগ্রাম স্কুলে দশম শ্রেণীতে পড়ে ।

বিপুল বাবু জানান , প্রায় ২৫-৩০ বছর ধরে তাঁরা তেলে গ্রামে বসবাস করছেন । সিটিজেনসিপ অ্যামেন্ডমেন্ট বিল পাস হয়েযাবার পর এরাজ্যেও এনআরসি চালু হবে এমনটা শোনার পর থেকেই তাঁর বৌমা নিজের ছেলের ভবিষ্যৎতের কথা ভেবে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল । আতঙ্কের কারন কি ছিল ? এই প্রশ্নের উত্তরে বিপুল বাবু বলেন , তাঁর ভাই , বৌমা ও ভাইজীর সমস্ত নাগরিক প্রমানপত্রই রয়েছে । কিন্তু শিপ্রা চিন্তিত হয়ে পড়েছিল তাঁর একমাত্র ছেলের কি হবে এইকথা ভেবে । কারণ তাঁর ছেলের আধার কার্ড থাকলেও জন্ম সার্টিফিকেট ও ভোটার কার্ড যোগাড় করেরাখা হয়নি । এনআরসি চালু হলে ওইসব নথি দেখাতে না পারলে একমাত্র ছেলেকে দেশছাড়া হতেহবে একথা ভেবেই শিপ্রা আতঙ্কিত দিন কাটাচ্ছিল । ছেলের ওই সব নথি জোগাড়ের জন্য শিপ্রা বহুবার পঞ্চায়েত অফিস ও বিডিও অফিসে গিয়েছিল ।
কিন্তু ওই সব নথি জোগাড় করতে না পারায় তাঁর দুশ্চিন্তা আরো বাড়ে । বিপুল বাবু বলেন, শেষমেষ এনআরসি আতঙ্কেই এদিন ভোরে গলায় মাফলারের ফাঁস দিয়ে ঝুলে তাঁর ভাতৃবধূ আত্মঘাতী হয়ে বসে । মৃতার প্রতিবেশী শুভ তালুকদার বলেন , শিপ্রাদেবীর ছেলে কমলের আধার কার্ড থাকলেও জন্ম সার্টিফিকেট দেখাতে না পারায় ভোটার কার্ড ও রেশন কার্ড হয়নি । এনআরসি চালু হলে এইসব নথি দেখাতে না পারলে ছেলে কমলকে দেশছাড়া হতে হবে । একথা ভেবে শিপ্রাদেবী আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছিলেন । শনিবার ভোরে তিনি মর্মান্তিক ঘটনা ঘটিয়ে বসেন ।ছেলের জন্ম সার্টি ফিকেট জোগাড় করতে না পারার কি কারন থাকতে পারে সে বিষয়ে পরিবারের সদস্যরাও কিছু জানাতে পারেননি ।
জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মেহেমুদ খান বলেন , পরিবারের লোকজনের বক্তব্য থেকে জেনেছি ওই বধূ তাঁর ছেলের জন্ম সার্টিফিকেট সহ অন্য প্রয়োজনীয় নথি জোগাড় করতে পারেননি । এনআরসি চালু হলে ছেলের সব নথি দেখাতে না পারলে ছেলেকে দেশছাড়া হতে হবে । এই আতঙ্কে বধূ হতাশাগ্রস্ত হয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন । মেহেমুদ খান আরো বলেন , এনআরসি আতঙ্কে সম্প্রতি জৌগ্রামের টেঙ্গাবেড়িয়ার বাসিন্দা কমল ঘোষ ও অসুস্থ হয়েপড়ে মারা গিয়েছেন । যদিও জৌগ্রামের টেঙ্গাবেড়িয়া নিবাসী জেলা বিজেপি সহ সভাপতি সুধাময় বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন জানিয়েছেন,
এনআরসি আতঙ্কে বধূ শিপ্রা শিকদার আত্মঘাতী হন নি ।চরম আর্থিক অনটনের মধ্যে দিন কাটাচ্ছিল বধূর পরিবার । তারজন্য পরিবারে স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে অশান্তি হত । এসবের কারণেই বধূ শিপ্রা শিকদার আত্মঘাতী হয়েছেন ।