দেবনাথ মোদক,বাঁকুড়া, শালবনি:- “কল আছে, জল পড়ে না” – এই চরম বাস্তবতার বিরুদ্ধে গর্জে উঠলেন বাঁকুড়ার শালবনি গ্রামের মহিলারা। দীর্ঘ তিন বছর আগে পানীয় জল সরবরাহের জন্য পাইপলাইন বসানো হলেও, একটি ফোঁটাও জল পাননি গ্রামবাসীরা। অন্যদিকে, এলাকার টিউবওয়েলের জলও পানের অযোগ্য। তীব্র গরমে যখন জলের জন্য হাহাকার করছে গ্রাম, তখন জল পেতে বাধ্য হয়ে হাড়ি-কলসি হাতে রাস্তায় নেমে অবরোধ ও প্রবল বিক্ষোভ দেখালেন স্থানীয় মহিলারা।
মঙ্গলবার সকালে বাঁকুড়া শহর লাগোয়া শালবনি মোড়ে পানীয় জলের দাবিতে বাঁকুড়া-পুরুলিয়া রাজ্য সড়ক অবরোধ করেন মহিলারা। হাতে হাড়ি, কলসি নিয়ে রাস্তায় বসে পড়েন তাঁরা, যার জেরে বেশ কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় বাঁকুড়া সদর থানার পুলিশ। তবে অবরোধ তুলতে গেলে পুলিশের সামনেও বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন স্থানীয়রা। তাঁদের স্পষ্ট দাবি, যতক্ষণ না জল সমস্যার স্থায়ী সমাধান হয়, ততক্ষণ তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বাঁকুড়া ২ নম্বর ব্লকের শালবনি গ্রামে প্রায় তিন বছর আগে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের উদ্যোগে পানীয় জলের পাইপলাইন বসানো হয়। প্রতিটি বাড়িতে সংযোগ দেওয়া হয় জলের কল। কিন্তু বিগত কয়েক বছরে সেই কল থেকে এক ফোঁটাও জল মেলেনি। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, এলাকায় যে কয়েকটি টিউবওয়েল রয়েছে, সেগুলির জলও পান করার মতো উপযুক্ত নয়। গ্রীষ্মের শুরুতেই জলস্তর নামতে শুরু করায় গ্রামের মানুষ চরম জলকষ্টে ভুগছেন। দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য পানীয় জল সংগ্রহ করতে গ্রামবাসীদের প্রায় দুই কিলোমিটার পথ হেঁটে যেতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে ক্ষুব্ধ মহিলারা জলের দাবিতে একত্রিত হয়ে আন্দোলনে নামেন।

অবরোধকারী মহিলাদের বক্তব্য, তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে জল সমস্যার কথা স্থানীয় পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং বিডিও অফিসে জানিয়ে এসেছেন। কিন্তু কোনও স্তরেই তাঁদের অভিযোগের সুরাহা হয়নি। বাধ্য হয়েই তাই তাঁরা রাস্তায় নেমে আন্দোলনে সামিল হয়েছেন। যতক্ষণ পর্যন্ত তাঁদের গ্রামে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানীয় জলের ব্যবস্থা না করা হচ্ছে, ততক্ষণ এই অবরোধ চলবে বলে তাঁরা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন।এই ঘটনায় বাঁকুড়া-পুরুলিয়া রাজ্য সড়কে দীর্ঘক্ষণ যানজট সৃষ্টি হয়, যার ফলে সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগের শিকার হন। তবে জল পাওয়ার দাবিতে অনড় গ্রামবাসীরা তাঁদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সংকল্পবদ্ধ। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে দ্রুত কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয় কিনা, সেটাই এখন দেখার।