বিদেশ বিভুঁই থেকে সাতসমুদ্র তেরো নদী পেরিয়ে এখনও অনেকেই পুজোর চারটে দিনে আনন্দ গ্রামের মাটিতে লুটোপুটি খাবার জন্য ছুটে আসেন গ্রামের বাড়িতে৷ পূর্ব বর্ধমান জেলায় অনেক জায়গাতেই এখনও ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে জমিদার বাড়ি৷ জমিনদারি না থাকলেও এখনও এলাকার মানুষের মনে তারা জমিদারই৷ আরও পরিস্কার করে বললে বলা যায় গ্রামে এই সমস্ত বড় পেল্লাই বাড়ি গুলোর নাম ‘বাবুদের বাড়ি’৷ এমনই কিছু বাড়ির দুর্গা পুজোর খোঁজ নিতে গিয়েই দেখা মিলল সেই পুরানো বড় থাম্বা সাদা চুন মেখে দাঁড়িয়ে আছে৷ কবে দুর্গা আসবেন, আবারও কবে তাদের গায়ে হাত পড়বে বাড়ির সদস্যদের৷

এই সমস্ত বাড়ি গুলোর দুর্গা মন্দিরের সামনেই থাকে মস্ত বড় একটা ফাঁকা জায়গা৷ যার মাথার উপরে থাকে আচ্ছাদন৷ আর এগুলোই এলাকায় পরিচিতি দুর্গা দালান হিসাবেই৷ মন্দিরে পুজো হবার সময়ে বাড়ির ও অনান্য অথিতিরা এই দালানে বসেই পুজো দেখতেন৷ চারিদিকে তখন ঝুলত হ্যাচাক৷ কোথাও বা মোমের ঝাড়বাতিও৷ এখন অবশ্য সেই ঝাড়বাতি কোথাও থাকলেও সেখানে রংবেরঙের লাইট বসেছে৷ ‘চায়না’ টুনির আলোয় এখন এই সমস্ত বাড়ির পরিবেশ মায়াবী হয়ে ওঠে পুজোর সময়ে৷
বিভিন্ন জায়গায় হাজারো ব্যস্ততার মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পরিবারের সদস্যরা নিজেদের একটা করে ঘরে ঢুকে পড়েন৷ আগে জমিদার বাড়ি গুলো ঘিরে থাকত বেশ কিছু পরিচারক-পরিচারিকায়। এখন আধুনিকরণে সেখানে জায়গা নিয়েছে ক্যাটারারের লোকেরা। পুজোর দিনগুলিতে সমস্ত খাওয়া দাওয়া থেকে অন্য অনেক কাজের দায়িত্ব পালন করেন৷ অবশ্যই সেটা টাকার বিনিময়ে৷ কারন এই সময়ে এটাও তাদের একটা বাড়তি রোজকার৷ তবে পরিবারের বয়স্ক মহিলারা এখনও হাত লাগান পুজোর কাজে৷ কোথাও আবার বাড়ির পুরুষরাও৷ আর এই পুজোর ক’টা দিন সারাবছর ঝিম মেরে দাঁড়িয়ে থাকা দুর্গা দালান গুলো মানুষের ভিড়ে কেমন প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে৷
আমাদপুর জমিদার বাড়ির পুজো মেমারি ১ ব্লকের আমাদপুর পঞ্চায়েতের আমাদপুর জমিদার পাড়ার পুজোও তেমনই৷ তবে এখানের দুর্গা দালান একেবারেই একটু অন্যরকমের৷ প্রায় ৩৫০ বছরের প্রাচীন এই চৌধুরী বাড়ির পুজোর দুর্গা দালানের মাথার ছাদ ফাঁকা৷ মন্দিরে সামনে খোলা আকাশের নিচে বাঁধানো উঠুন৷ পাশে সারি দিয়ে ঘর৷ পুজোর নানা উপকরণের জন্য৷ পুজোর সময়ে মাথায় ত্রিপলের ছাওনি দেওয়া হলেও বছরভর খোলাই থাকে৷ লক্ষণ সেনের সভাকবি ছিলেন এই পরিবারের সদস্য৷
তখন এই পরিবারে পদবি ছিল সেনশর্মা৷ পরবর্তী সময়ে এই পরিবারের পূর্ব পূরুষ কালীপ্রসন্দ সেনশর্মা চৌধুরী পদবি পান তৎকালীন রাজার কাছ থেকে৷ চৌধুরী পরিবারের নাট মন্দিরে তৈরী হচ্ছে একচালের দেবী দুর্গা৷ সাবেকি ঢঙের এই প্রতিমার লক্ষ্মী ও সরস্বতীর কোন বাহন থাকে না৷ কোন প্রতিমার হাতে দেওয়া হয়না কোন চাঁদমালা৷ কালিকা পুরান মতেই পুজো হয় এই দুর্গার৷ নবমীর দিন বলি হয়, তবে সেটা আখ ও চাল কুমড়ো৷ প্রতিমার বিসর্জনও দেখার মতনই৷ ছ’পুরুষ ধরে চৌধুরী পরিবারের পুজোর সঙ্গে জড়িত ম্যানেজার আশিষ চক্রবর্তী বলেন, ‘আমাদপুরের জমিদার বাড়ির ঐতিহ্য এখন সেভাবে নষ্ট হতে দেননি পরিবারের সদস্যরা৷ এই দেবীর নামে নিজস্ব কোন সম্পত্তি নেই৷
কিন্তু পরিবারের সকল সদস্যরা নিয়ম করে নিজেরাই টাকা দিয়ে মায়ের পুজো চালিয়ে আসছে যথেষ্টই ধুমধামের সঙ্গে৷’ পুজোর প্রসঙ্গে জানাতে গিয়ে পুজারি কেশব গোস্বামী বলেন, ‘কলাবউ প্রতিষ্ঠা এখানে এখনও রাজকীয় ভাবেই করা হয়৷ আনন্দময়ী ঘাটে কলা বউ স্নানের পরে নাট মন্দিরের সামনের উঠোনে এনে রাখা হয়৷ অষ্ট কলসের মধ্যে অষ্ট পদ্ম দিয়ে চলে পুজার্চনা৷ তারপরে মন্দিরে নিয়ে আসা হয়৷ এখানে কোন চাঁদ মালা থাকে না দেব দেবীর হাতে৷ দেবীর বিসর্জন হয় গ্রামের দাস পরিবারের কাঁধে চেপে৷ আর সঙ্গে থাকে ঘুঁটে, পাটকাটি আর পাটের তৈরী মশাল৷ এই মশালের আলো ছাড়া অন্য কোন আলোর ব্যবহার হয় না৷
এটাই এই পরিবারের রীতি৷ সাড়ে তিনশো বছর ধরে এটাই হয়ে আসছে৷’ চৌধুরী পরিবারের বর্তমান সদস্য শিলাদিত্য চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের পরিবারের সদস্যরা সবাই নানা কাজে বিভিন্ন জায়গায় ব্যস্ত৷ কিন্ত্ত পুজোর চারটে দিন আমরা সবাই সমস্ত কিছু ভুলে এখানে আসবই৷ পঞ্চমীর দিন আমরা সবাই হাজির হয়ে যাই। পুজোর ঐতিহ্য মেনে এটাও যেমন বলতে পারেন, তেমন এটাও বলা যেতে পারে আগামী এক বছরের কাজ করার রসদ নতুন করে ভরে নিতে আমাদের এই দুর্গা অনেক সাহায্য করেন৷’ পুজোর চারদিন আমাদপুরের জমিদার বাড়ি এলাকায় লোকজনে গমগম করে৷ গ্রামের লোকেরা যেমন আসেন, তেমনই অনেক বহিরাগতরাও আসেন চৌধুরী পরিবরের নিমন্ত্রিত হয়ে চৌধুরীদের দুর্গা দালানে বসে পুজো দেখার জন্য৷
জামালপুরের সিংহরায় পরিবারের পুজো
জামালপুর ব্লকের চকদীঘি এলাকায় সিংহরায় পরিবারের দুর্গা দালানে এখন সেই সাড়ে তিনশো বছর আগের পুরানো দিনের ছোঁয়া৷ বিশালাকার জমিদারবাড়ি৷ সামনে তারা আকৃতির এক তুলসি মন্দির৷ আর দুর্গা দালানও বেশ অনেকটাই জায়গা নিয়ে৷ একসঙ্গে কয়েকশো লোক বসে যাতে বসে পুজো দেখতে পারেন, তেমনই ব্যবস্থা করা আছে আজও৷ সেদিন ছিলনা নিয়নের আলো, গোটা দুর্গা দালান থেকে নাটমন্দির জুড়ে আমপাতা ও খোলা শুদ্ধ নারকোল লাগিয়ে সাজানো হত নাট মন্দির ও দুর্গা দালান৷
এখনও সেই প্রথাই চলে আসছে এখানে৷ অন্য জায়গায় যখন ষষ্ঠীর দিন শুরু হয় পুজো, তখন এখনও চকদীঘির এই সিংহরায় পরিবারের জমিদার বাড়িতে পুজো শুরু হয় প্রতিপদের দিন থেকেই৷ মহালয়ার ভোরে পিতৃপক্ষের অবসান ঘটে শুরু হয় দেবীপক্ষ৷ আর সেই সময় থেকেই সমস্ত ধর্মীয় আচার মেনেই পুজো শুরু হয় চকদীঘির জমিদার বাড়ির পুজোয়৷ এই পরিবারের পুজোয় অংশ নিয়েছিলেন বিদ্যাসাগর৷ বহুবার তিনি সিংহরায় পরিবারের পুজোয় উপস্থিত থেকেছেন৷ পারিবারিক নানা দলিল, পুঁথি ঘিরে এই সিংহরায় পরিবারের লোমহর্ষক এমনই নানা ইতিহাস জানতে পারা যায়৷ বৃটিশদের কাছ থেকে পাওয়া এই জমিদারি স্বত্ত্ব সিংহরায় পরিবারের৷ এই বাড়িতে লর্ড কার্জন এসেছেন৷ তাঁর জন্য একটি ঘরও নির্দিষ্ট করা ছিল৷ এখনও রয়েছে কার্জনের স্মৃতি বিজরিত সেই ঘর, সেই পালঙ্ক, যেখানে তিনি শুতেন৷ এস্টেট ম্যানেজার কমলাপতি উপাধ্যায় বলেন, ‘শেষ জমিদার যিনি ১৫ বছরেরও বেশী জমিদারি করেছেন সেই কমলাপ্রসাদ সিংহ রায়ের আমলে আমি এখানে যোগ দিয়েছি৷
এই বাড়ির দুর্গা পুজোয় বিদ্যাসাগর এসেছেন৷ প্রতিপদে শুরু হয় এই সিংহরায় পরিবারের জমিদার বাড়ির পুজো৷ এই পরিবারের মহিলা সদস্যরা আগে দেবীর কাছে পুষ্পাঞ্জলী যখন দিতে আসতেন তখন গ্রামের সাধারণ মানুষ তাঁদের মুখ দেখতে পেতেন না৷ মন্দিরের ভিতরে পর্দা ঘেরা জায়গায় বসে তারা অঞ্চলি দিতেন৷ একমাত্র পুরোহিত মহিলাদের মুখ দেখতে পেতেন৷ এখনও সেই প্রথাই চলে আসেছে সিংহরায় পরিবারের৷ এই পরিবারের পুজোর সমস্ত আয়োজন আজও সেই পুরানো রীতি মেনেই বাড়ির পুরুষরা করে আসছেন৷ এখনও কোন মহিলারা পুজোর কোন কাজে অংশ নেন না৷ তবে আগে যেমন এখানে বলিদান প্রথা চালু ছিল৷ এখন সেই বলিদান আর হয় না, তার পরিবের্ত বলিদানের সময়ে দেবীকে সন্দেশ দর্শন করানো হয়৷ এখনও জমিদার বাড়ির পুজো ঘিরে এই চকদীঘি এলাকা ছাড়াও আশপাশের গ্রামের মানুষের উন্মাদনা চোখে পড়ার মতন৷’ পুজোর আগে এখন চকদীঘি সিংহরায় পরিবারের দুর্গা দালানে চলছে শেষ মুহূর্তের পরিস্কার করার কাজ৷ গোটা এলাকা জুড়েই ব্যস্ততা৷ পাশে ফুটেছে এক ঝাঁক কাশ৷ তারাও যেন দেবীর আগমনীর অপেক্ষায় সিংহরায় পরিবারের দুর্গা দালানের সামনে ঝুঁকে আছে৷
মেমারির দত্তপাড়ার লাহা বাড়ির পুজো
লাহা বাড়ির দুর্গা দালানে এখন থেকেই শিউলি ফুলের ছোঁয়া৷ মন্দির লাগোয় রয়েছে একটি শিউলি গাছ৷ সেখান থেকে ঝড়ে পড়া ফুলের গন্ধে প্রতিমা তৈরীর সময়েই দুর্গা দালান জুড়ে ভেসে বেড়াচ্ছে শিউলির গন্ধ৷ লাহা বাড়ির সাবেকিয়াবনার এই দুর্গা দালানে এখনও পুরানো ঐতিহ্যের ছোঁয়ার পরশ দু’শো বছর পরেও৷ একচালের প্রতিমা৷ ছেলেমেয়েদের সঙ্গেই নিয়েই এখানে একসঙ্গে আসেন গৌড়ি৷ লাহা বাড়ির পুরানো দস্তাবেজস ঘেঁটে বর্তমান প্রজন্মের সদস্যরা জানতে পারেন, এই বংশের মাখনলাল লাহাকে স্বপ্ন দিয়েছিলেন দুর্গা, তার পুজো করার৷ সামান্য ডাব ও নারকেল বিক্রেতা মাখনলাল লাহা দেবীর স্বপ্নাদেশে ভেঙে পড়েন কিভাবে এই সামান্য রোজকারে তিনি দুর্গার পুজো করবেন ভেবে৷ কথিত আছে, দেবী তাকে স্বপ্ন দেন আবারও ঘটে পটে পুজো করার জন্য৷ সেই পুজো করার পর থেকেই এই লাহা পরিবারের আর্থিক শ্রীবৃদ্ধি ঘটতে শুরু করে৷
সেদিন খড় দিয়ে তৈরী হওয়া দুর্গা দালান পরবর্তীতে সিমেন্ট দিয়ে মন্দির করা হয়৷ মন্দিরের গায়েই নিজে হাতে মাখনলাল লাহা যে শিউলি গাছ লাগিয়েছিলেন, সেই গাছ আজও রয়ে গিয়েছে সেখানেই৷ এই শিউলি গাছের ফুলেই অর্ঘ্য দেওয়া হয় দেবীকে৷ বৈষ্ণব মতে পুজো হয় লাহা বাড়িতে৷ আর তাই এখানে কোন বলিদান প্রথা চালু নেই৷ তবে আগে সর্বমঙ্গলা মন্দিরের কামান দাগার পরে, সেই শব্দের আওয়াজেই সন্ধি পুজো বসত লাহা বাড়িতে৷ এখন সর্বমঙ্গলা মন্দিরের সেই কামান দাগা বন্ধ৷ পঞ্জিকা মতেই বসে সন্ধি পুজো৷ দশমীর দিন মন্ডপের সামনে লাহা বাড়ির বধূরা সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠেন৷ বাড়ির প্রবীণ সদস্য দেবীকে বরণ করার পরে লাহাদেরই পুকুরে বিসর্জিন করা হয় দেবীকে৷
মনিরামবাটি গ্রামের মনিরাম বাটির দুর্গা
জামালপুর থানার মনিরামবাটি গ্রামের মনিরাম বাটির দুর্গা পুজোর আনন্দ এখনও একই ভাবে উপভোগ করেন এলাকার বাসিন্দারা৷ পুরানো ভেঙে পড়া দুর্গা দালানের ঢোকার মুখেই এক গা ছমছমে পরিবেশ৷ চারিদিকে ভেঙে পড়েছে পুরানো দিনের বাড়ির অংশ৷ তারই মধ্যে বিশালাকার দুর্গা দালনের ভিতরে ঢুকলেই ঝোজা যায় তিনশো বছর আগের আভিজাত্য ও জৌলুস৷ দুর্গামন্ডপের ভিতরের দেওয়াল জুড়ে থাকা কাজ গুলি এখন পরিস্কার৷ আগে দুর্গা দালানে বসে গ্রামের মানুষরা পুজো দেখলেও মন্দিরের পাশেই থাকা দোতলায় জানালার মতন অংশ থেকে বাড়ির মেয়েরা পুজো দেখতেন৷ পরে তারা যখন অঞ্চলি দিতে আসতেন, তখনও সেই পর্দাসীন প্রথা চালু ছিল৷
মহিলারা অঞ্জলি দিতে যাবার আগে পুজো দালান কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়৷ মহিলারা চলে যাবার পরে খুলে দেওয়া হয় সেই কাপড়৷ এখানেও মহালয়ের পরের দিন প্রতিপদে শুরু হয় পুজো৷ মনিরাম বাটির দুর্গা দালানে ঢুকলেই দেখা যাবে একটা ভগ্নস্ত্তপের মধ্যে তৈরী হচ্ছে প্রতিমা৷ পুজোর আগে অবশ্য এলাকার সমস্ত আর্বজনা, জঙ্গল কেটে পরিস্কার করা হয়৷ পুজোর সমস্ত আয়োজন করেন পুরুষরা৷ এখনও পুজোর সময়ে আসা লোকেরা এখানেই থাকেন৷ দশমীর দিন প্রতিমা নিরঞ্জনের পরে গোটা যারাই এখানে আসেন, তাদের মিষ্টিমুখ করানো হয়৷ পরে রাত্রে গোটা গ্রামের লোককে খাওয়ানো হয় দুর্গা দালানে বসিয়েই৷ পুরানো দিনের রীতি মেনেই চলে আসছে এখনও এই প্রধা৷ এক চালের তৈরী সাবেকি প্রতিমা৷ তবে সবথেকে আশ্চর্যের বিষয় এখনও পুরানো রীতি মেনেই গ্রামের বিধবাদের হাত দিয়ে ধুনো পোড়ানো হয়৷ জমিদারি দেখাশুনার দায়িত্বে থাকা কমলাপতি উপাধ্যায় বলেন, ‘গ্রামের ও পরিবারের যারা বিধবা রয়েছেন, অষ্টমীর সন্দিপুজোর শেষে নবমী তিথিতে তাদের নতুন পোশাক পড়ানোর পড়ে, সকলেরই মাথায় একটি বাটিতে ধুনো রাখা হয়৷
দুটো হাতে৷ এরপরে আগুন জ্বালানো হয়৷ শুধু বসেই নয় বিভিন্ন ভাবে শুইয়েও তাদের উপরে ধুনোর পাত্র রেখে ধুনো পোড়ানো হয়৷ এছাড়াও এখনও আমাদের পুরানো প্রধা মেনেই কুমারী পুজো হয়৷’ মনিরাম বাটির এই ধুনে পোড়ানোর অনুষ্ঠান দেখতে এখনও ভিড় জমান অনেকেই৷ তবে এই দুর্গা দালানে ঢুকলেই পুরনো দিনের গন্ধ পাবেন নিশ্চিতভাবেই শিউলির গন্ধের মধ্যেই৷ একটা সময়ে এই পুজোর জৌলুস থাকলেও এখন সে জৌলুস অনেকটাই নেই৷ অনেকদিনই সংস্কার হয়নি মন্দির ও দুর্গা দালান৷ ভেঙে পড়ছে কড়ি কাঠ থেকে ছুন সুড়কি৷ দুর্গা দালানের ডান দিকে দোতলার অংশ ভেঙে পড়ছে৷ যেকোন সময়ে ভেঙে পড়তে পারে পুরোটাই৷ কমলাপতি উপাধ্যায় বলেন, ‘এই বিশালাকার বাড়ি নিয়ম করে মেরামতি না করার কারনেই কিছুটা ভগ্নপ্রায় অবস্থা সেটা বলতে পারেন৷ এখন আর জমিদারি নেই৷ ফলে রোজকারও নেই৷’
হাজরা পরিবারের সিংহবাহিনী দুর্গা পুজো
ভাতার ব্লকের ভাতার গ্রাম পঞ্চায়েতের ভাতার গ্রাম৷ এই গ্রামে হাজরা পরিবারের সিংহবাহিনী দুর্গা পুজো কে ঘিরে মেতে ওঠেন আট থেকে আশি সকলেই৷ এর কারন জানাতে গিয়ে হাজরা পরিবারের সদস্যদের দাবি, এই গ্রামে আর কোন দুর্গাপুজো না হওয়ায় গোটা ভাতার গ্রামের মানুষের কাছে হাজরা বাড়ির পুজো নিজেদের পুজো হয়ে উঠেছে৷ হাজরা পরিবারের পূর্বপুরুষ দামোদর হাজরা এই সিংহবাহিনী পুজোর প্রতিষ্ঠা করেন৷ সেদিন গোটা গ্রামের মানুষকে পুজোয় আনন্দ দেবার জন্য যে অষ্টধাতুর প্রতিমা তৈরী করেছিলেন দামোদর হাজরা, সেই মূর্তিতেই আজও হয়ে আসছে পুজো৷
দেবী এখানে সিংহের পিঠে বসে আছেন ছেলে মেয়েকে ছাড়াই৷ সারা বছর হাজরা পরিবারের পুরানো বাড়ির চিলোকোঠায় দেবীর নিত্যসেবা হলেও পুজোর চারদিন দেবীকে বসানো হয় নতুন মন্দিরে৷ সেখানেই সমস্ত রীতি মেনে পুজিত হন সিংহবাহিনী৷ সেদিনের হাজরা পরিবার এখন ২৪টি পরিবারের ভাগ হয়ে গিয়েছে৷ তবে প্রতিবছরই নিয়ম করেই পরিবারের সদস্যরাই আয়োজন করেন পুজোর৷ পরিবারের বর্ষীয়ান সদস্য পরেশনাথ হাজরা বলেন, ‘আমাদের পূর্বপুরুষ দাশরথি হাজরার হাতে এই পুজো তিনশো বছর আগে শুরু হয়েছিল৷ এই ভাতার গ্রামে মা সিংবাহিনী ছাড়া আর অন্য কোথাও দুর্গাপুজো হয় না৷ এই পুজো হাজরা পরিবারের হলেও, এটা গোটা গ্রামের৷ সবাই মেতে ওঠেন পুজোকে ঘিরেই৷’ পরিবারের আরও এক সদস্য আশিষ হাজরা বলেন, ‘আমাদের পরিবার এখন বড় হয়ে ২৪টি পরিবার হয়ে গিয়েছে৷ পালা করেই আমাদের এই পুজো হয়ে আসছে৷ গ্রামের সকলেই আমাদের পুজোয় সামিল হন নিজেদের পুজোর মতনই নবমীর দিন পুজো মন্ডপে গ্রামের সকলকেই খাওয়ানোর ব্যবস্থা করে আসছি আমরা৷’