প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় বর্ধমান ১৫ সেপ্টেম্বর
রাজ্যের বিধায়কদের বেতন বৃদ্ধি হলেও প্রায় এক বছর ধরে বেতন পাচ্ছেন না মৎস্যবীজ খামারের ঠিকা শ্রমিকরা।সামনেই বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গোৎসব।তার আগে বেতন মিলবে এমন নিশ্চয়তা কর্তৃপক্ষ দিতে পারে নি। এরই প্রতিবাদে শুক্রবার বৃহত্তর আন্দোলনে নামলেন পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের যমুনাদিঘি মৎস্যবীজ খামারের ৫১ জন ঠিকা শ্রমিকরা। তারা এদিন প্রোজেক্ট ইনচার্জের অফিসে ও যমুনাদিঘির অতিথিশালায় তালা ঝুলিয়ে দিয়ে বিক্ষোভ দেখান।পাশাপাশি বেতন পরিষোধের দাবিতে তারা
শ্লোগানও তোলেন। তবে এত কিছুর পরেও বেতন মিলবে এমন কোন আশ্বাস প্রোজেক্ট ইনচার্জ অঙ্কুর মজুমদার এদিন দিতে পারেন নি।এই পরিস্থিতিতে আন্দোলন আরো জোরদার করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন যমুনাদিঘি মৎস্যবীজ খামারের ঠিকা শ্রমিকরা।
আউশগ্রামের রঘুনাথপুর গ্রামের কাছে রয়েছে রাজ্য মৎস্যবীজ উন্নয়ন নিগমের অধীনে যমুনাদিঘি মৎস্যবীজ খামার। এই মৎস্যবীজ খামারে মাছের ডিম থেকে চারাপোনা উৎপাদন করা হয়।যমুনাদিঘি মৎস্যবীজ খামারে ১৯ জন স্থায়ী শ্রমিক ও ৭ জন অস্থায়ী শ্রমিক রয়েছে। বাকি ৫১ জন দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করেন। ওই ৫১ জনের মধ্যে কেউ ৮ বছর,আবার কেউ তার থেকে বেশি সময় ধরে কাজ করছেন । তাদের অনেকেরই সরকারি চাকরির পাওয়ার বয়স পেড়িয়ে গেছে। এই ৫১ জন শ্রমিকই এখন দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন।খামারে কাজ করে চললেও দীর্ঘ ১৪ মাস ধরে তাদের বেতনে দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগআর বেতন না মেলাতেই চরম সংকটে পড়ে গিয়েছেন দৈনিক মজুরির ৫১
জন শ্রমিক ।
এদিন আন্দোলনে অংশ নেওয়া শ্রমিকরা বলেন,
গতবছর দুর্গাপুজোর আগে থেকে তারা বেতন পাচ্ছেন না। তবুও দীর্ঘ প্রায় ১৪ মাস বিনা বেতনে তাদের কাজ করে যেতে হচ্ছে।বেতনের কথা বারে বারে কর্তৃপক্ষকে বলা হলেও সুরাহা মেলে নি।
দীর্ঘদিন বেতন বন্ধ থাকায় তাদের সংসার চালাতো
হিমসিম খেতে হচ্ছে। বহু টাকা দেনায় পড়ে গিয়েছেন। যমুনাদিঘি মৎস্যবীজ খামারের কর্মী কল্যাণ পাল, মফিজুল সেখরা জানান ,“তারা দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করছেন। কেউ আট বছর ধরে, কারও সাতবছর অতিক্রান্ত হয়ে গেল। প্রথম দিকে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও এখন তারা সকলেই সংকটের মধ্যে পড়েছেন। বেতনের জন্য বহু আবেদন নিবেদন করেও সুরাহা না মেলায়
আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছেন বলে কল্যাণ পাল, মফিজুল সেখরা জানিয়েছেন“।
যমুনাদিঘি মৎস্যবীজ খামারের প্রোজেক্ট ইনচার্জ অঙ্কুর মজুমদার জানান,“মাস চারেক হল আমি খামারের দায়িত্বে এসেছি। তার অনেক আগে থেকেই এই সমস্যা রয়েছে।শ্রমিকদের দাবির কথা আমি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানিয়েছি। তবে এই প্রোজেক্টে যে সংখ্যক কর্মী প্রয়োজন তার থেকে অনেক বেশি কর্মী রয়েছেন বলে ইনচার্জ অঙ্কুর মজুমদার মন্তব্য করেছেন“।
যমুনাদিঘি মৎস্যবীজ খামারের ৫১ জন শ্রমিকের বেতন না পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে আউশগ্রামের বিধায়ক অভেদানন্দ থান্ডার কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন,“এদিন কি হয়েছে তা আমার জানা নেই। তবে ওই শ্রমিকরা তাদের সনস্যার বিষয়টি নিয়ে অনেক আগে একবার আমাকে জানিয়েছিল।আমি তখন বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দফতরের মন্ত্রীকে জানিয়ে ছিলাম। শ্রমিকরা যদি আমার কাছে আসে অবস্যই বিষয়টি দেখবো । তারা যাতে তাদের বেতন অর্থ পায় সে ব্যাপারে সাধ্য মত চেষ্টা করবো“।
এই বিষয়টি নিয়ে অবশ্য কটাক্ষ করতে ছাড়ে নি বিজেপি নেতৃত্ব । জেলা বিজেপি নেতা মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বলেন, এই রাজ্যে স্থায়ী কর্মী নিয়োগ এখন
ইতিহাস হয়ে গিয়েছে।তবে খেলা মেলায় এই রাজ্যের সরকার দু’হাতে টাকা খরচ করে। বিধায়কদের বেতন এক লাফে বহুগুন বাড়িয়ে দেয় । অথচ প্রায় ১৪ মাস ধরে যমুনাদিঘি মৎস্যবীজ খামারের ৫১ জন ঠিকা শ্রমিক বেতন না পেলেও সবাই উদাসীনতা দেখিয়ে চলেছে। এটাই এখন এই রাজ্যের শ্রমিকদের ভবিতব্য হয়ে গিয়েছে বলে মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র মন্তব্য করেছেন।