আবহাওয়া দক্ষিণবঙ্গ শিক্ষা লাইফ স্টাইল স্বাস্থ্য ভ্রমন ধর্ম কৃষি কাজ ক্রাইম

সঠিক পদ্ধতিতে বোরো ধানের চারা রোপণ

krishna Saha

Published :

WhatsApp Channel Join Now

রথীন রায়:- পূর্ব বর্ধমান জেলার মেমারি, জামালপুর, রায়না, খণ্ডঘোষ, গলসি সহ সারা বর্ধমান বাঁকুড়া মেদিনীপুর জুড়ে কয়েক লক্ষ হেক্টর জমিতে ভালো ফলনের আশায় বোরো ধানের বীজ রোপন করেছেন চাষিবন্ধু সমাজ ! সারা দেশে এখন বোরো ধানের চারা রোপণের কাজ প্রায় শেষ হয়েছে ! কেউ কেউ নিচু জমিতে জমে থাকা প্রাকৃতিক জলের সদ্ব্যবহার করতে একটু আগেই চারা রোপণের কাজ শুরু করেছেন ! আবার দেশের দক্ষিণাঞ্চলের চেয়ে উত্তরাঞ্চলে চারা রোপণ হবে একটু পরে !

 

 

তবে অনেক সময়ই চারা রোপণের পর বোরোচাষিরা গাছ আশানুরূপভাবে বেড়ে না ওঠার সমস্যার কথা বলেন ! কেউ কেউ বোরো ধানের ক্ষেতে বেশি রোগ ও পোকা আক্রমণের সমস্যায় ভোগেন ! আসলে সঠিকভাবে বীজতলা বা পাতাখোলা থেকে বোরো ধানের চারা না তুলতে পারলে এবং সঠিক পদ্ধতিতে তা রোপণ করতে না পারলে এসব সমস্যা দেখা দেয় ! সার দিয়েও জমির গাছ বড় করে তোলা যায় না এবং বিভিন্ন বালাইয়ের আক্রমণে ফলন অনেক কমে যায় ! তাই গোড়ায় গলদ না রেখে চারা রোপণের সময়ই বোরোচাষিরা একটু সতর্ক হয়ে সঠিক পদ্ধতিতে চারা তুললে ও রোপণ করলে ভালো ফসল পেতে পারেন !

 

আসুন, চারা তোলা ও রোপণের সেই সঠিক পদ্ধতিগুলো জেনে নেয়া যাক !
চারা তোলা ; বীজতলা থেকে চারা তোলার আগে বীজতলা শুকনো থাকলে তা জল দিয়ে একরাত ভিজিয়ে রাখতে হবে ! বীজতলা থেকে চারা সাবধানে তুলতে হবে ! তোলার সময় লক্ষ রাখতে হবে যাতে চারার গোড়া ছিঁড়ে না যায় বা শিকড় কম ছেঁড়ে ! এসব ক্ষতের মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া জীবাণু জমিতে থাকলে সুস্খ চারায় তার অনুপ্রবেশ ঘটে এবং পরে তা ক্ষেতের গাছে পাতাপোড়া রোগ সৃষ্টি করে ! চারা তোলার পর পায়ের গোড়ালিতে আঘাত করে গোড়ার মাটি ছাড়ানো ঠিক নয়, এতে চারার ঘাড় ভেঙে যেতে পারে ! পরে এসব চারা জমিতে রোপণ করলে মরে যেতে পারে বা আঘাত সেরে উঠে জমিতে রোপণ করতে বেশি দিন লাগতে পারে !

See also  ২২০০ কোটি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী কৃষক বন্ধু প্রকল্পে ৭৭ লক্ষ কৃষকের জন্য

 

চারা মজুদ ও স্খানান্তর ; চারা বীজতলা থেকে তোলার পর দুই দিনের মধ্যেই রোপণ করতে হবে ! কোনো কারণে চারা রেখে দিতে হলে চারার গোড়া জলের মধ্যে চুবিয়ে রেখে দিতে হবে ! চারা কখনো বস্তায় ভরে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নেয়া ও রাখা উচিত নয় ! ঝুড়িতে নিতে হবে ও খোলা জায়গায় ছায়ায় রাখতে হবে ! চারা বাছাই ও শোধন ; চারা তোলার পর রোপণের আগে তা থেকে রোগগ্রস্ত ও পোকায় আক্রান্ত চারা বেছে বাদ দিতে হবে ! সম্ভব হলে চারা রোপণের আগে প্রতি লিটার জলে এক গ্রাম ব্যাভিস্টিন ছত্রাকনাশক গুলে সেই জলে ১০ মিনিট চারার গোড়া বা শিকড় ভিজিয়ে রেখে জমিতে রোপণ করতে হবে ! এতে চারা তোলার সময় যদি তাতে কোনো জীবাণুর সংক্রমণ ঘটে তবে সেগুলো নষ্ট হবে !

 

জমি তৈরি ; চারা রোপণের আগে অবশ্যই জমি ভালো করে চাষ দিয়ে কাদা করতে হবে ও আইল বাঁধতে হবে ! চাষের সময় অনুমোদিত মাত্রায় জৈব ও রাসায়নিক সার (ইউরিয়া বাদে অন্যান্য সার) শেষ চাষের সময় মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে ; জমি চাষের পর তা সমতল করে অল্প জলের (২-৩ ইঞ্চি) আটকে রাখতে হবে ! যে দিন চারা রোপণ করা হবে ঠিক তার আগের দিন জমি চাষ দিয়ে সমতল করা ভালো ! এতে নরম হয়ে যাওয়া মাটি একটু থিতিয়ে যায় ! ফলে রোপণ করা চারা সহজে হেলে পড়ে না বা রোপণের পর উঠে আসে না ! তবে বেলে মাটিতে দিনে দিনেই চাষ দিয়ে চারা রোপণ করতে হবে, না হলে মাটি শক্ত হয়ে যাবে এবং সে জমিতে চারা রোপণ করতে অসুবিধা হবে !

 

রোপণ উপযোগী চারার বৈশিষ্ট্য ; রোপণের জন্য চার-পাঁচটি পাতাযুক্ত চারা নির্বাচন করতে হবে ! সঠিক বয়সের চারা রোপণ করতে হবে ! চারার বয়স হবে হাইব্রিড জাতের বেলায় ২০-২২ দিন, মাঝারি জীবনকালের জাতের বেলায় ২৫-৩০ দিন এবং দীর্ঘ জীবনকালের বা নাবি জাতের চারার বেলায় ৩৫-৪০ দিন ! কোনো কারণে চারার বয়স বেশি হলে আঁটি ধরে চারার মাথা বা আগা থেকে কিছুটা পাতা ছিঁড়ে ফেলে রোপণ করতে হবে !

See also  মাটির দেওয়াল চাপা পড়ে আহত ৩

 

চারা রোপণ ; প্রতি গুছিতে দুই থেকে তিনটি চারা রোপণ করা উচিত ! এতে এক দিকে বীজের যেমন সাশ্রয় হয় তেমনি গাছে কুশিও ভালো গজায় ! মাটির ২ থেকে ২.৫ সেন্টিমিটার (১-১.৫ ইঞ্চি) গভীরে চারা রোপণ করা উচিত ! বেশি গভীরে চারা পুঁতলে মাটিতে লাগতে ও কুশি ছাড়তে দেরি হয় এবং বাড়তি কমে যায় !

 

রোপণ দূরত্ব ; হাইব্রিড জাতের ক্ষেত্রে চারা থেকে চারার দূরত্ব ২০ সেন্টিমিটার ও সারি থেকে সারির দূরত্ব ২৫ সেন্টিমিটার দিতে হবে ! অন্যান্য আধুনিক জাতের ক্ষেত্রে সব দিকে ২০ সেন্টিমিটার দূরত্ব দিলেই চলে ! স্বল্প জীবনকালের জাতের ক্ষেত্রে এই দূরত্ব ১৫ সেন্টিমিটার থেকে ২০ সেন্টিমিটার দেয়া যেতে পারে ! চারা রোপণের পর জমিতে অবশ্যই ছিপছিপে জল রাখতে হবে !
ফাঁকা জায়গা পূরণ ; রোপণের পর কিছু চারা মরে যেতে পারে ! সে জন্য রোপণের সময় জমির এক কোণে কয়েক গুছি চারা পুঁতে রাখতে হবে, যাতে পরে সেসব চারা থেকে ফাঁকা জায়গায় আবার চারা লাগানো যায় ! এতে চারার বয়স ঠিক থাকে ! ফলে গাছের বাড়তি ও ফলন হয় প্রায় একই রকম !

krishna Saha

আমার নাম কৃষ্ণ কুমার সাহা, আমি ফুল টাইম সাংবাদিকতা করি।গত ৮ বছর ধরে এই পেশায় আছি