আবহাওয়া দক্ষিণবঙ্গ শিক্ষা লাইফ স্টাইল স্বাস্থ্য ভ্রমন ধর্ম কৃষি কাজ ক্রাইম

রবীন্দ্রনাথের শুভদৃষ্টি গল্পে পিতলের রেকাবিতে ‘বাতাসা’ নিয়ে বিয়ের সম্বন্ধ

krishna Saha

Published :

WhatsApp Channel Join Now

রথীন রায় : – সেই রবিঠাকুরের স্বপ্নের বোলপুর শান্তিনিকেতন এলাকায় বসেই অনুব্রতর মুখে শোনা যায় বারবার গুড় বাতাসার দাওয়াই ! বসন্তের ঝরা পাতার দিনগুলিতে তীক্ষ্ণ তাপের দাবদাহ থেকে রক্ষা পেতে একটু বাতাসা জল ! চ্যাপ্টা আকারের ২-৪ সেন্টিমিটার ব্যাস এর এই মিষ্টি খাবার টি চিনি অথবা গুড় থেকে তৈরি হয় ! ছোট বাচ্চাদের নিকট বেশ জনপ্রিয় ! প্রাচীন কাল থেকেই পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের হিন্দুরা বাতাসা প্রসাদ হিসাবে ব্যবহার করেন ! অনেক মন্দিরে “হরির লুট” নামে বাতাসা প্রসাদ হিসেবে ছড়িয়ে দেওয়ার রীতি আছে ! কড়াইতে চিনি অথবা গুড়, জল একসঙ্গে ফোটাতে হবে !

ফুটে উঠলে দুধ দিয়ে ফেনার মতো ময়লা পরিষ্কার করে খাবার সোডা দেওয়া হয় ! ঘন ঘন হলে গোল চামচের এক চামচ করে বাঁশের ডালায় ফেলে ঠান্ডা করে জমিয়ে নিয়ে বাতাসা তৈরী করা হয় ! সাধারণত পৌষ সংক্রান্তিতে কদমা, বাতাসা, তিলের খাজা বেশি খাওয়া হয় ! মেলা, রথ প্রভৃতিতে বাতাসা অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ ! লক্ষ্মীপুজাতেও এর ব্যবহার আছে ! বাঙালির অতিথি আপ্যায়নে বাতাসার ব্যবহারের রীতি বেশ পুরনো ! বিভিন্ন লেখকের গল্পে লেখায় এর পরিচয় পাওয়া যায় ! পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ২৫০০ কদমা বাতাসা ও নকুলদানা তৈরির ছোট ‘কারখানা’ রয়েছে ! বর্ধমানের নীলপুর, মালদার হরিশ্চন্দ্রপুর, গড়িয়া-বেলেঘাটা, উত্তরবঙ্গের বালুরঘাটে প্রচুর কারিগর বাতাসা-নকুলদানা তৈরির সঙ্গে যুক্ত !

ভাল চাহিদা থাকা সত্বেও বাতাসা-নকুলদানা-কদমাকে তেমন ভাবে বাজারজাত করায় সমস্যা আছে ! তবে এই প্রাচীন কুটির শিল্পের হাল ফেরাতে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার আসরে নেমেছে ! পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার ক্লাস্টার তৈরি-করে রপ্তানি করার বিভিন্ন পদক্ষেপ করার পরিকল্পনা নিয়েছে ! পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যসরকারের খাদি গ্রামদ্যোগের উদ্যোগে ক্লাস্টার তৈরি করে কারিগরদের এক ছাদের তলায় এনে প্রথমে ছোটছোট ‘হাব’ তৈরি করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে ! সেখানেই আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে কারিগরদের ! উদ্যগতাদের অভিমত, ওড়িশা, উত্তরপ্রদেশে বাতাসা্‌ কদমা এবং দেশের দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে নকুলদানার চাহিদা রয়েছে ! হাবে তৈরি হওয়া কদমা নকুললদানা বাতাসা আধুনিক প্রযুক্তিতে প্যাকেটজাত করে রপ্তানি করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে !

See also  ৩ ফুট ৮ ইঞ্চি বরের সঙ্গে ২ ফুট ৯ ইঞ্চি কনের বিয়ে

ফলত কারিগর ও ব্যবসায়ী, উভয় পক্ষই লাভবান হবেন বলে মনে করছেন খাদি গ্রামোদ্যোগের কর্তারা ! বাতাসা চিনি বা গুড় দিয়ে তৈরি এক ধরনের মিষ্টিজাতীয় খাবার ! বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে এর প্রচলন বেশি ! একসময় মুড়ি ও বাতাসা দিয়ে অতিথি আপ্যায়ন করা হতো ! গ্রামাঞ্চলে এখনো এই রীতি কদাচিৎ চোখে পড়লেও শহরাঞ্চলে খুব একটা দেখা যায় না ! তবে প্রাচীনকাল থেকেই পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের হিন্দুরা বাতাসাকে প্রসাদ হিসেবে ব্যবহার করে আসছে ! সুস্বাদু এই বাতাসা তৈরিতে চিনি বা গুড়ের পাশাপাশি দুধ, খাবার সোডা ও পানির প্রয়োজন হয় ! সাধারণত পৌষসংক্রান্তিতে মুড়ি, খই, কদমা, তিলের খাজার পাশাপাশি বাতাসাও খাওয়া হয় ! মেলা, রথ প্রভৃতিতে বাতাসা অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ ! দেশীয় ঐতিহ্যবাহী এসব খাবার মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া, ঢাকার ধামরাই, সাভার এবং বগুড়ার সদর উপজেলার হরিপুর গ্রামে সবচেয়ে বেশি তৈরি হয় !

এ ছাড়া দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা আরো ছোটখাটো কারখানায় বাতাসা তৈরি হচ্ছে ! এসব খাবার আশপাশের এলাকার পাইকারদের মাধ্যমে সারা দেশে বিক্রি হয় ! এসব খাবার কবে থেকে, কিভাবে বাংলা অঞ্চলে চালু হলো তার ইতিহাস খুব একটা জানা যায় না ! রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘শুভদৃষ্টি’ গল্পে পিতলের রেকাবিতে করে বাতাসা নিয়ে বিয়ের সম্বন্ধ আনার বিষয়টি উল্লেখ আছে ! বাতাসায় চিনি বা গুড়ের পরিমাণ বেশি থাকায় এটি খেলে তাত্ক্ষণিক শক্তি পাওয়া যায় ! আমাদের হজমশক্তি বৃদ্ধি ও বিষণ্নতা দূর করতে সাহায্য করে এটি ! এটি মিষ্টিজাতীয় খাবার বলে ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য ক্ষতিকর ! চাঁদিফাটা গরমে এক টুকরো বাতাসা, সঙ্গে এক গ্লাস ঠান্ডা জল পেলে সব ক্লান্তি, অবসাদ দূর !

তাই বাতাসার কদর নেহাত কম নয় ! যে কোনও শুভ কাজে, মন্দিরে-মসজিদ-গুরুদ্বারে বাতাসা লাগেই ! ইদানীং রাজনৈতিক তরজাতেও বাতাসার নাম বার বার উঠে আসছে ! বারাসতের কাছে মধ্যমগ্রামে বাতাসার আধুনিক কারখানা থাকলেও ভাঙড়ের কাশীপুর, মিনাখার মালঞ্চ, জীবনতলা, বারুইপুরেও ঘরে ঘরে বাতাসা তৈরি হয় ! ছোট ছোট হাঁড়ি, শীতল পাটির চাটাই আর কাঠ কয়লার উনুনে আজও গ্রামীণ বাতাসাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন প্রান্তিক বাতাসা শিল্পীরা ! এক কেজি বাতাসা ৫২ টাকা দরে পাইকারি বাজার বিক্রি করেন ! মুদির দোকানে তা খুচরো বিক্রি হয় ৬০ টাকা কেজিতে !

See also  আইসিডিএস সেন্টার থেকে বুজরুকদিঘি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ছাত্র ছাত্রীর অভিভাবকদের মিড ডে মিলের চাল বিতরণ

প্রতিদিন সাত আট ঘণ্টা কাজ করলে একজন কর্মচারী কমবেশি ১০০ থেকে ১২০ কেজি বাতাসা তৈরি করতে পারেন ! যা করতে খরচ পাঁচ হাজার টাকা ! আর বিক্রি, ছয় থেকে সাড়ে ছয় হাজার টাকা ! প্রসঙ্গত আগামী আসানসোল লোকসভা উপ-নির্বাচনে কখন আবার বলতে শোনা যাবে “গুড় বাতাসার ব্যবস্থা আছে” !!

krishna Saha

আমার নাম কৃষ্ণ কুমার সাহা, আমি ফুল টাইম সাংবাদিকতা করি।গত ৮ বছর ধরে এই পেশায় আছি