বর্ধমানের জামালপুরের কোলসরা গ্রামে অবস্থিত ঘোষাল বাড়ির দুর্গা পুজো শুরু হয় ১৬৫৫ খ্রিষ্টাব্দে। এটি কোনো ক্লাব বা বারোয়ারী পুজো নয়, বরং এক বনেদি ব্রাহ্মণ পরিবারের পুজো, যা আজও সযত্নে রক্ষা করা হচ্ছে। ৩৭০ বছরের এই পুজোর সঙ্গে সম্রাট শেরশাহের নাম নিবিড়ভাবে জড়িয়ে রয়েছে, যা এই পুজোর এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য।
শেরশাহের স্মৃতি: ঘোষাল বাড়ির পুজোয় অনন্য অবদান
ঘোষাল বাড়ির বর্তমান বংশধর সমীর ঘোষালের মতে, তাঁদের পূর্বপুরুষ দিগম্বর ঘোষাল ছিলেন সম্রাট শেরশাহের অধীনে কাজ করা একজন বিশ্বস্ত কর্মচারী। শেরশাহের নির্দেশে দিগম্বর ঘোষাল জিটি রোডের নির্মাণ কাজ তদারকি করতেন এবং সেই কাজ করতে গিয়ে তাঁর কোলসরা গ্রামে আগমন ঘটে। এখানেই দিগম্বর ঘোষাল শেরশাহের অনুগ্রহে ৫০০ বিঘা জমি পান, যা শেরশাহ তাম্রপত্রে খোদাই করে দেন। এই জমিতেই স্থাপিত হয় দেবী সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির।
Highlight
- ঘোষাল বাড়ির দুর্গা পুজো: ৩৭০ বছরের ঐতিহ্য
- শেরশাহের স্মৃতি: ঘোষাল বাড়ির পুজোয় অনন্য অবদান
- স্বপ্নাদেশ ও দুর্গা পুজোর সূচনা
- কুমারী পুজো ও অন্যান্য রীতি
- শেরশাহের সহযোগিতা ও দেবী সিদ্ধেশ্বরী কালী
স্বপ্নাদেশ ও দুর্গা পুজোর সূচনা
কথিত আছে, সপ্তম পুরুষ ঈশ্বরচন্দ্র ঘোষাল একদিন কংসা নদীর তীরে একটি ছোট মেয়েকে দেখতে পান, কিন্তু মেয়েটি হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে যায়। পরে ঈশ্বরচন্দ্র স্বপ্নে দেবী দুর্গার নির্দেশ পান এবং ১৬৫৫ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম দুর্গা মূর্তি তৈরি করে পুজো শুরু করেন। সেই থেকে আজ পর্যন্ত ঘোষাল পরিবারের সদস্যরা দেবী দুর্গার আরাধনা করে আসছেন।
কুমারী পুজো ও অন্যান্য রীতি
ঘোষাল বাড়ির পুজোতে বেশ কিছু বিশেষ রীতিনীতি আছে, যার মধ্যে অন্যতম হলো দশমীতে ১১ কুমারীর পুজো। প্রতি বছর জন্মাষ্টমীর তিথিতে একচালার কাঠামোয় প্রতিমা গড়া শুরু হয়, যা ডাকের সাজে সাজানো হয়। পুজোর প্রতিটি দিনেই গঙ্গাজলে ভোগ তৈরি করা হয়, আর প্রতিদিনের নৈবেদ্যে থাকে থোড়, মোচা এবং কলা। আগের সময় ছাগ বলিদান চললেও বর্তমানে সেই রীতি বন্ধ হয়েছে। তবে কুমারী পুজো আজও চালু রয়েছে, যা এই পুজোর এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য।
শেরশাহের সহযোগিতা ও দেবী সিদ্ধেশ্বরী কালী
দিগম্বর ঘোষাল কোলসরা গ্রামে দেবী সিদ্ধেশ্বরী কালী প্রতিষ্ঠার স্বপ্নাদেশ পান। শেরশাহ তাঁর বিশ্বস্ত কর্মচারী দিগম্বর ঘোষালের কথায় অত্যন্ত আন্তরিক সহযোগিতা করেন এবং দেবীর মন্দির নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় জমি দান করেন। সেই স্মৃতির কারণেই আজও শেরশাহের নাম ঘোষাল পরিবারের পুজোতে বারবার উচ্চারিত হয়।