আবহাওয়া দক্ষিণবঙ্গ শিক্ষা লাইফ স্টাইল স্বাস্থ্য ভ্রমন ধর্ম কৃষি কাজ ক্রাইম

প্রত্নতাত্ত্বিক কালিদাস দওের বাড়িকে হেরিটেজ ঘোষণা ও সংগ্রহশালা তৈরির দাবিতে জয়নগরে মৌন পদযাত্রা হয়ে গেল

krishna Saha

Published :

WhatsApp Channel Join Now

উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়, জয়নগর: অবিভক্ত চব্বিশ পরগনার ইতিহাস চর্চার পথিকৃৎ শ্রদ্ধেয় কালিদাস দত্তের মজিলপুরের বাড়ি ‘ঐতিহ্য ভবন’ (হেরিটেজ ভবন) ঘোষণা করে সরকারী অধিগ্রহণ ও সংগ্রহশালায় করার দাবী উঠলো তার ১৩১ তম জন্ম দিবসে জয়নগরে।অবিভক্ত চব্বিশ পরগনার ইতিহাস চর্চার পথিকৃৎ প্রয়াত প্রত্নতত্ত্ববিদ শ্রদ্ধেয় কালিদাস দত্তের (জন্মঃ ১০ই ডিসেম্বর ১৮৯৫-প্রয়াণঃ ১৪মে ১৯৬৮) মজিলপুর কালিদাস দত্ত রোডের দ্বিতল ভবনটি ‘ঐতিহ্য ভবন’ বা হেরিটেজ ব্লিডিং হিসাবে পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্তৃক ঘোষণা করে অধিগ্রহণ ও একটি সংগ্রহশালায় রূপান্তরিত করার উদ্দেশ্যে যথোপযুক্ত ব্যবস্থাদি গ্রহণের জন্য সমগ্র চব্বিশ পরগনা তথা নিম্নবঙ্গের ইতিহাস ঐতিহ্যপ্রিয় মানুষেরা এক হয় সম্প্রতি প্রত্নতাত্ত্বিক কালিদাস দত্ত স্মৃতিরক্ষা সমিতির গঠন করা হয়।

আর সেই কমিটির উদ্যোগে বুধবার জয়নগর মজিলপুর জে এম টেনিং স্কুলে কালিদাস দওের উপর আলোচনা সভা ও মজিলপুর থেকে তার বাড়ি পর্যন্ত একটি মৌন পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। যাতে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ জন অংশ নেন। এদিনের সভা থেকে তার পৈতৃক বাড়িটিকে হেরিটেজ ঘোষণা করার দাবি তোলা হয় এবং তার নামে সেখানে একটি সংগ্রহ শালা করার ও দাবি তোলা হয়।সম্প্রতি এই বাড়িটি ব্যক্তিগত ভাবে বিক্রয় করে দেওয়া হয় তার বংশধরদের পক্ষ থেকে।

তাই স্মৃতি রক্ষা কমিটি তরফে সরকারি স্তরে যোগাযোগ করে এই বাড়িটিকে হেরিটেজ ঘোষণা করা ও সংগ্রহ শালা করার দাবি তোলা হলো এদিন।মজিলপুরের জমিদার দত্ত পরিবারের সন্তান কালিদাস দত্ত ১৯২৪ সালে জমিদারি দেখাশোনার কাজে তৎকালীন মথুরাপুর বর্তমানে রায়দিঘী থানাভুক্ত পশ্চিম জটা গ্রামে ঘন জঙ্গলের মধ্যে প্রায় ১০০ ফুট উঁচু উত্তর ভারতীয় রেখ দেউল ঘরানার মন্দির দেখে প্রচণ্ড বিঘ্নিত হন। এই ঘটনা তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়, তাঁকে পরিণত করে অবিভক্ত বাংলা তথা ভারতের অন্যতম সেরা অপেশাদার প্রত্নতত্ত্ববিদে। স্বাধীনতার আগে যে সময়ে সুন্দরবনে প্রাণঘাতী বাঘ, কুমীর, সাপের ভয়, রাস্তাঘাট নেই, সেতু নেই, যানবাহন নেই সেই সময়ে ধনী জমিদার সন্তান মাইলের পর মাইল পায়ে হেঁটে অথবা নৌকা করে ঘুরেছেন।

See also  নেতাজি স্মৃতি বিজড়িত কালনার জ্ঞানানন্দমঠে নবনির্মিত মন্দির উদ্বোধন, শুরু হয় ১৩৭তম জন্মতিথি ও সপ্তসতী মহোৎসব

নৌকাতে বা চাষীর চালাঘরে রাত কাটিয়েছেন।ভালো করে খাওয়া হয়নি, বিশ্রাম হয়নি এইভাবে আবিষ্কার করেছেনজৈন, বৌদ্ধ, হিন্দু মঠ মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ, কাঁচা ও পোড়া মাটির পুতুল, পাথরের হাতিয়ার, ধাতুর মূর্তি, মুদ্রা, বিভিন্ন যুগের মাটির পাত্র, ইট, মাটির ও মাঝারি দামী পাথরের পুঁতিদানা, সুন্দরবনে ভারতের অন্য অঞ্চলের মত প্রাচীন সভ্যতার গৌরবময় ঐতিহ্য আছে তার প্রমাণস্বরূপ এসব প্রত্নসম্ভার চাক্ষুষ করতে বিদেশের ও অবিভক্ত ভারতের শেষ্ঠ পণ্ডিতগণ এসেছেন তাঁর এই বাড়িতে। তাঁদের মধ্যে অন্যতম ননীগোপাল মজুমদার, রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, সুনীতি চট্টোপাধ্যায়, দীনেশ চন্দ্র সেন, স্টেলা ক্রেমরিশ, রমাপ্রসাদ চন্দ, দেবপ্রসাদ ঘোষ, নীহাররঞ্জন রায়, বিনয় ঘোষ, হেমচন্দ্র রায় সহ আর ও অনেকে।

ভবনের দ্বিতলের কক্ষে উৎকীর্ণ ফলকে দেখা যায়, এই বাড়িতে ১৮৬৪ সালে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কিছুদিন ছিলেন ও তাঁর বিষবৃক্ষ উপন্যাসের কিছু অংশ এই বাড়িতে লেখা হয়। আরও উল্লেখযোগ্য, এই বাড়িতেই অবিভক্ত চব্বিশ পরগনার প্রথম প্রত্ন সংগ্রহশালাটি গড়ে তুলেছিলেন শুধু জ্ঞান পিপাসু মনের নিবৃত্তি নয়, সিন্ধু সভ্যতার আবিষ্কার ও পরাধীন ভারতে দেশমাতা তথা জন্মভূমির গৌরববৃদ্ধির আকৃতিও তাঁকে জীবনের চারটি দশক উৎসর্গ করতে অনুপ্রাণিত করেছিল। তাঁর চিন্তাধারা ছিল সুদরপ্রসারী ও গঠনমূলক। তিনি তাঁর আবিষ্কার ও অন্যান্য প্রসঙ্গে মোট ১০০টির মত প্রবন্ধ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পত্রিকায় প্রকাশ করেন।

শুধু তাই নয়,একদল যুবককে অনুপ্রাণিত করেন যাঁরা তাঁর পদক্ষেপ অনুসরণ করে সংগ্রহশালা গড়ে তোলেন এবং পরবর্তী প্রজন্মের মনে ইতিহাস বোধ ও সাংস্কৃতিক চেতনার স্ফুরণ ঘটান। যার পরিণতিতে আজ ২০-৩০টি সংগ্রহশালা গড়ে উঠেছে দুই চবিবশ পরগনায়। পত্র পত্রিকায় প্রবন্ধ প্রকাশ, অনুসন্ধান সমীক্ষা, গবেষণা,সংরক্ষণের প্রচলন হয়েছে যার উৎস কালিদাস দত্ত ও তাঁর এই বাড়ির সংগ্রহশালা। সুন্দরবন তথা বাংলার ইতিহাস ঐতিহ্যপ্রেমীদের কাছে এই বাড়ি শুধু কিছু ইট, কাঠের সমাহার নয়। এক পবিত্র ঐতিহাসিক তীর্থক্ষেত্র যার প্রতিটি ধূলিকণায় প্রত্নদ্রব্যের সৌরভ অবিভক্ত ভারতের শ্রেষ্ঠ পণ্ডিতগণের পদধূলিতে ধন্য।আর তাই এই বাড়ি হেরিটেজ ঘোষণা করে সরকারী অধিগ্রহণ ও সংগ্রহশালা নির্মাণের উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি তুললো প্রত্নতাত্ত্বিক কালিদাস দত্ত স্মৃতিরক্ষা সমিতির সদস্যরা।

krishna Saha

আমার নাম কৃষ্ণ কুমার সাহা, আমি ফুল টাইম সাংবাদিকতা করি।গত ৮ বছর ধরে এই পেশায় আছি