আবহাওয়া দক্ষিণবঙ্গ শিক্ষা লাইফ স্টাইল স্বাস্থ্য ভ্রমন ধর্ম কৃষি কাজ ক্রাইম

সোনামুখীর ইতিহাস সমৃদ্ধ মাঁ-ই-ত কালী নামকরন কাহিনী

By krishna Saha

Published :

WhatsApp Channel Join Now

সৈয়দ মফিজুল ( বাঁকুড়া ) :- ইং ১৭৪২ খ্রী: বাংলা সন ১১৪৯ সালে মারাঠা সেনাপতি ভাস্করপন্ডিত বর্গীদের একটি দলসহ বিষ্ণুপুর থেকে সোনামুখী আসে । এখানে লুটপাট করার জন্য বাদ্যভাণ্ড সহ
‘হর হর বোম বোম’ শব্দ করতে করতে রাণীরবাজারে মাঁ কালীর মন্দিরের সামনে বর্গীদল সমবেত হয় ।

এখানে তখন মন্দিদের চারদিক গাছপালাতে পরিপূর্ণ ছিল । দিনের বেলাতেই অনেকে মন্দিরের সামনে আসতে সাহস করতো না । তখন দিবা অপরাহ্ণ । এই অঞ্চলের মানুষ জন সকলে বর্গীদের ভয়ে নিজ নিজ ঘরে নিজেদের বন্ধ করে রাখলেন ।
বর্গীদল বাজনা বাজাতে বাজাতে নাচতে লাগলো ।

তখন এক বৃদ্ধ সন্ধ্যায় দেবীমন্দিরে আলো দেবার জন্য একটি প্রদীপ নিয়ে মন্দিরে মাঁয়ের ঘটের সামনে রেখে বলিস্থানে হাড়িকাঠের সামনে প্রনামরত হলেন । এমন সময় বর্গীদলের সর্দার একটি খাঁড়া উঠিয়ে প্রনামরত বৃদ্ধকে বলি দিতে উদ্যত হলেন , কিন্তু মায়ের দৈবশক্তিতে ঐ উদ্যত খাঁড়া আর নামলো না , যেন পেছন থেকে কেউ টেনে রেখেছে এবং ঐ ঘাতক অন্ধ হয়ে গেলেন ।

তখন সেনাপতি তাঁর সাথীদের বললেন ,
‘ কেন তোমরা আমার খাঁড়া পেছন থেকে টেনে রেখেছো ‘??
বর্গীদল উত্তর দিলো , ” কেউ আপনার খাঁড়া পেছন থেকে টানে নাই “।
সর্দার বললেন ,” মন্দিরে প্রদীপটি এখনও জ্বলছে কিনা ,আর যে বৃদ্ধ প্রনাম করছিলো সে আছে কিনা “??
অন্যান্য বর্গীরা উত্তর দিলো ,
” প্রদীপ ঠিকই জ্বলছে এবং বৃদ্ধ এখানেই আছে “।


সর্দার বললেন , “প্রদীপের আলো আমি দেখতে পাচ্ছি না ; তবে কি আমি অন্ধ হলাম ? কোন দৈবশক্তিতে আমার খাঁড়া আটকানো আছে যে আমি খাঁড়া নামাতে পারছি না ? আচ্ছা ঐ বৃদ্ধ কে হত্যা না করে আটকাও এবং আমার পূর্ব্বাবস্থা প্রাপ্তির জন্য অনুরোধ করো ” ।
ইতিমধ্যে ঐ বৃদ্ধ প্রনাম শেষ করে উঠে সব ব্যাপার বুঝতে পারলেন । তখন সকলে ঐ বৃদ্ধ কে অনুরোধ করায় তিনি মন্দিরে মাঁয়ের ঘট হতে জল নিয়ে ঐ ঘাতক সর্দার এর চোখে এবং সর্বাঙ্গে শান্তি জল দিলেন ।

See also  পথসাথী মোটেলের দায়িত্ব রাজ্য এবার নিজের হাতেই নিচ্ছে

তখন সর্দার দৃষ্টি শক্তি ফিরে পেলেন এবং তিনি খাঁড়া নামাতে পারলেন । সর্দার বৃদ্ধকে বললেন , “এখানে কোন দেবতা আছেন “? বৃদ্ধ উওর দিলেন , ” মা কালী আছেন “। বর্গী সর্দার বললেন , ” মায়ী-ত কালী হ্যায় “। আচ্ছা আমি তোমকে যে খাঁড়াতে কাটতে যাচ্ছিলাম সেটি এবং আরো একটি খাঁড়া নাও , তোমারা এই খাঁড়া দিয়ে বলিদান করবে । আমরা আর এখানে লুটপাট করবো না , কাটোয়া চললাম । বাজনা বাজাও ” মায়ী-ত কালী হ্যায় , মায়ী-ত কালী হ্যায় “।
তারপর বর্গীদল বাজনা বাজাতে ঐ রূপে মায়ের নাম করতে করতে সোনামুখী ছেড়ে চলে যায় ।

তখ থেকে এই মাঁয়ের নাম
হলো ” মায়ী- ত কালী ” বা ” মাঁ-ই-ত কালী “।

তবে এ বছর করোনা আবহে পুজোর অনুষ্ঠানে কাটছাঁট করতে হয়েছে স্বাভাবিকভাবেই মন খারাপ সোনামুখী শহরবাসীর । মা – ই – ত – কালী পুজো কমিটির কোষাধ্যক্ষ শ্রীকান্ত দে বলেন , মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশকে মান্যতা দিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবছর আমরা পুজোর আয়োজন করেছি । পুজোতে আগত সমস্ত দর্শনার্থীদের জন্য মাক্স ও স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও তিনি জানান ।



সঞ্জীব ব্যানার্জি বাসুদেব দেবতি নামের শহরবাসীরা বলেন , অন্যান্য বছর যে আনন্দ নিয়ে কালীপুজো কাটাতাম এবছর তা আর হবেনা স্বাভাবিকভাবেই খুবই খারাপ লাগছে ।



এ বিষয়ে সোনামুখী পৌরসভার বর্তমান প্রশাসক সুরজিৎ মুখার্জির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন , সরকারি প্রটোকল মেনেই সোনামুখী পৌরশহরে এবছর কালী পুজোর আয়োজন করা হয়েছে । আমরা সমস্ত পুজো কমিটিকে অনুরোধ করেছি সকলেই যেন সরকারি নিয়ম মেনেই পুজোর আয়োজন করেন ।

krishna Saha

আমার নাম কৃষ্ণ কুমার সাহা, আমি ফুল টাইম সাংবাদিকতা করি।গত ৮ বছর ধরে এই পেশায় আছি