রথীন রায় :- নীলপুজো বা নীলষষ্ঠীর দিন প্রায় প্রতিটি হিন্দু বাড়ির মহিলারাই সন্তানের মঙ্গল কামনায় ব্রত পালন করেন ! পয়লা বৈশাখের আগের দিনই গ্রাম বাংলায় পালন করা হয় নীল ষষ্ঠীর ব্রত ! এই দিনেই অনুষ্ঠিত হয় গাজন ! একটা সময় নীল ষষ্ঠীর ব্রত আর গাজনের মেলা ঘিরে রীতিমত উৎসবের চেহারা নিয়ে গ্রাম বাংলাষ কিন্তু কালের নিয়ম আজ অনেকটাই বিলীন হয়ে গেছে ! কিন্তু এখনও ঘরে ঘরে মায়েরা সন্তানের মঙ্গল কামনা করে নীলের উপোষ করেন ! পাঠ করেন নীলের ব্রত ! নীল – অর্থাৎ শিব- এই দিনের বাংলায় ঘরে ঘরেই মহাদেবের বিশেষ পুজো করা হয় ! সন্তান ও পরিবারের মঙ্গল কামনায় অনেতেই বাতি জ্বালেন !

পুরাণ অনুযায়ী নীল বা মহাদেবের সঙ্গে নীলচণ্ডিকা বা নীলাবতীর বয়ে হয়েছিল ! সেই বিয়ে উপলক্ষ্যেই এখন পালন করা নীলের ব্রত ! দক্ষযজ্ঞে দেহত্যাগের পর শিবজায়া সতী নতুন করে জন্মগ্রহণ করেন নীলধ্বজ রাজার ঘরে ! রাজা তাঁকে লালন পানল করেন ! তারপর সুন্দরী কন্যার বিয়ে দেন শিবের সঙ্গে ! নীলাবতী শিবকে মোহিত করে ! পরে মক্ষিপারূক রূপে ফুলের সঙ্গে জলে নিক্ষিপ্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন ! মেয়ের দুঃখে রাজা ও রাণীও প্রাণ বিসর্জন দেন ! সকল প্রথা মেনেই শিব আর নীলাবতীর বিয়ে হয় ! তবে প্রথা অনুযায়ী নিম বা বেল কাঠ দিয়েই তৈরি হয় শিবের মূর্তি ! চৈত্র সংক্রান্তির দিনেই বিয়ের অনুষ্ঠান হয় ! দেবতাদের পাশাপাশি ভূত প্রেতদেরও এই বিয়েতে আমন্ত্রণ জানান হয় ! শিবের সঙ্গে মা ষষ্ঠীর পুজো
এটাতো গেল প্রাচীন রীতি, কিন্তু নীলের এই ব্রত চালু হয়েছিল অনেক পরে ! প্রাচীন গাথা অনুযায়ী, এক ব্রাহ্মণ ও ব্রাহ্মণীর কোনও সন্তান ছিল না ! যে সন্তানই জন্মাত সে কিছুদিন পরেই মারা যেত !
তাই ব্রাহ্মণ দম্পতি সংসারের মায়া ত্যাগ করে তীর্থ ভ্রমণে বেড়িয়ে পড়েছিল ! তাঁরা ঘুরতে ঘুরতে সরযূর তীরে এসে উপস্থিত হয় ! সেখানেই তাঁরা জীবন দেওয়ার সংকল্প করেন ! তারপর তাঁরা নদীতে নামতে শুরু করে ! সেই সময় মা ষষ্ঠী বৃদ্ধের বেশ ধারণ করে তাঁদের সামনে এসে উপস্থিত হন ! আত্মহত্যার কারণ জাননে চান, তখন ব্রাহ্মণ সন্তানের মৃত্যুর কথা খুলে বলেন ! সেই সময়ই বৃদ্ধা তাঁদের সন্তান বাচানোর জন্য চৈত্র সংক্রান্তিতে নীল পুজো করার পরামর্শ দেন ! তিনি তাঁদের বলেছিলেন উপোস করে শিবের কাছে বাতি জ্বালিয়ে তাঁকে স্মরণ করে জল খেতে ! সেই প্রথা অনুযায়ী এখনও নীলের পুজোয় সকলে বাতি জ্বালেন ! সন্তানের মঙ্গল কামনা করেই এই বিশেষ দিনে পুজো করা হয় !!