প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় বর্ধমান ১২ আগষ্ট

রাজ্যে পথশ্রী প্রকল্প থাকলেও কিছুতেই শ্রী ফিরছে না পথের।তাই পথের শ্রী ফেরানোর দাবি আদায় করতে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের টেঙ্গাবেরিয়া
গ্রামের বাসিন্দারা কেটে ফালা ফালা করে দিলেন তাঁদের গ্রামের হতশ্রী পথ।দু’প্রান্ত কেটে দেওয়া সেই পথে মঙ্গলবার আটকা
পড়েন পাড়ায় সমাধান কর্মসূচি সারতে যাওয়া প্রশাসনের আধিকারিক,
পুলিশ ও জনপ্রতিনিধিরা। শেষে ব্লকের বিডিও-র কাছ থেকে হতশ্রী পথের শ্রী ফেরানোর প্রতিশ্রুতি আদায় করে গ্রামবাসীরা কাটা রাস্তা বুজিয়ে দেন।
শ্রী যুক্ত পথের দাবি আদায়ের জন্য গ্রামবাসীদের এভাবে পথে নামা কার্যতই নজিরবিহীন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
জামালপুর ব্লকের জৌগ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার প্রত্যন্ত গ্রাম টেঙ্গাবেড়িয়া। গ্রামে শতাব্দী প্রাচীন
একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। গ্রামবাসী পবিত্র পাইক,রিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়, তপন মালিক-প্রমুখরা বলেন,আমাদের গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গা ঘেঁষে গ্রামের প্রধান রাস্তাটি গিয়েছে।সাড়ে ৫০০ থেকে ৬০০ মিটার দীর্ঘ ওই রাস্তাটি এক দশকেরও বেশী সময়কাল ধরে বেহাল হয়ে রয়েছে।
রাস্তাটির হাল ফেরানোর জন্য গ্রামের বাসিন্দারা বহুবার ব্লক প্রশাসন ও জৌগ্রাম পঞ্চায়েতে গিয়ে আবেদন নিবেদন করেছেন।তার পরিপ্রেক্ষিতে রাস্তা সংস্কার
হবে বলে শুধু আশ্বাস মিলে গিয়েছে।রাস্তার হাল আজ অবধি ফেরে নি।পথের বেহাল অবস্থার জন্য
টেঙ্গাবেড়িয়া গ্রামের মানুষের দুর্দশা দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। তা জেনেও রাস্তাটি সংস্কারের কোন উদ্যোগ পঞ্চায়েত বা প্রশাসন না নেওয়ায় গ্রাম বাসীরা ক্ষোভে ফুঁষছিলেন। এদিন তারই বহিপ্রকাশ ঘটেছে।“
রাজ্যে পথশ্রী প্রকল্প থাকতেও রাস্তাটি সংস্কার হতে
অসুবিধা কি ছিল ? এর উত্তরে গ্রামবাসী পবিত্র পাইক বলেন, আমাদের টেঙ্গাবেড়িয়া গ্রামে বুথ দুটি ।গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে একটি বুথে তৃণমূল এবং অপর বুথে বিজেপি প্রার্থী জিতেছে।একটি বুথে বিজেপি প্রার্থী জিতেছে বলেই যে তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত জৌগ্রাম পঞ্চায়েত কর্তৃকপক্ষ
টেঙ্গাবেড়িয়া গ্রামের হতশ্রী পথের শ্রী ফেরানোর সদিচ্ছা সেটা গ্রামবাসীদের কারুরই আর বুঝতে বাকি থাকে নি।
রাস্তা সংস্কারের দাবি আদায়ের জন্য রাস্তার দুই প্রান্ত গভীর ভাবে কেটে দিয়ে আন্দোলনে নামাটা কি যুক্তি সম্মত কাজ হয়েছে? এর উত্তরে গ্রামের বাসিন্দারা এক সুরে বলেন, আমরা রাস্তা কেটে আন্দোলনে নামতে চাই নি। এদিন আমাদের এই পথ বেছেনিতে বাধ্য করেছেন জৌগ্রাম পঞ্চায়েতের
প্রধান মল্লিকা মণ্ডল এবং উপ- প্রধান সাজাহান মণ্ডল। কি করেছেন এঁরা ?
এর উত্তরে গ্রামবাসীরা বলেন ,’পাড়ায় সমাধান কর্মসূচিকে সামনে রেখে এদিন গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এসেছিলেন ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকরা।জৌগ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ও উপ-প্রধানও সেখানে ছিলেন। পাড়ায় সমাধান কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকা সরকারী আধিকারিকদের কাছে গিয়ে গ্রামের রাস্তাটি সংস্কারের দাবি জানান গ্রামবাসীরা।তখন পঞ্চায়েতের প্রধান ও উপ-প্রধান, রাস্তা সংস্কার হবে না বলে জানিয়ে দিতেই গ্রামের বাসিন্দাদের ক্ষোভ চরমে ওঠে ।
এরপর গ্রামের বেহাল রাস্তাটির সংস্কারের প্রতিশ্রুতি আদায় করতে গ্রামবাসীরা রাস্তার দুই প্রান্ত আড়া আড়ি ভাবে কেটে দেন ।
কাটা রাস্তায় বিডিও ,পুলিশ ,ব্লক প্রশাসনের আধিকারিক ও পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ আটকা পড়েন
। বিডিও রাহুল বিশ্বাস রাস্তাটি সংস্কার হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিলে ক্ষোভ বিক্ষোভ মেটে। তার পর গ্রামবাসীরা কাটা রাস্তা বুজিয়ে দেয় ।
পঞ্চায়েত প্রধান মল্লিকা মণ্ডল বলেন,টেঙ্গাবেড়িয়া গ্রামের একটি বুথে বিজেপি জিতেছে বলে আমরা ওই গ্রামের রাস্তা সংস্কার হতে দিচ্ছি না , এই অভিযোগ সত্য নয়। প্রধান জানান, টেঙ্গাবেড়িয়া গ্রামের ওই রাস্তাটি ইতিমধ্যেই ’পথশ্রী ১’ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এদিন রাস্তা কাটার পিছনে রাজনীতি
কাজ করেছে বলে প্রধান দাবি করেছেন।