প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় বর্ধমান
প্রেয়সীদের বাসনা পূরণের জন্যে অহরহ প্রয়োজন হত অর্থের। সেই অর্থ জোগাড় করতে ’চুরিতে’ হাত পাকায় যুবক বাসুদেব মণ্ডল।সময় গড়ানোর সাথে সাথে বাসুদেব হয়ে ওঠে দক্ষিণবঙ্গের এক কুখ্যাত চোর। যে কলকাতার নিউটাউন ও বাগুইহাটি থানা থেকে শুরু করে পূর্ব বর্ধমান ও হুগলী জেলার বিভিন্ন থানার পুলিশ কর্তাদের রাতের ঘুম কেড়ে নেয়।তবে অবশ্য বেশিদিন পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে থাকতে পারেনি কুখ্যাত এই চোর। বিভিন্ন চুরির ঘটনায় জড়িত বাসুদেব এখন পুলিশের জালে বন্দি।একাধীক থানা তাঁকে হেপাজতে নিয়ে এখন তাঁর চুরিকরা মূল্যবান সরঞ্জাম উদ্ধার করছে
।
একই পেথে হেঁটে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানার পুলিশও বাসুদেব মণ্ডলকে হেপাজতে নেয়। তাঁকে জেরা করে পুলিশ জামালপুর থানার বিভিন্ন এলাকায় একাধীক চুরির ঘটনায় তাঁর জড়িত থাকার বিষয়ে নিশ্চিত হয়।এরপর বাসুদেবকে সঙ্গে নিয়ে পুলিশ একাধীক জায়গায় হানা দিয়ে উদ্ধার করে বহু চোরাই সামগ্রী।যার তালিকায় মোটর বাইক থেকে শুরুকরে ল্যাপটপ,আইফোন
এবং দামি গুটকা থেকে শুরুকরে প্রচুর সিগারেটও রয়েছে।নায়কচিত চালচলনের বাসুদেব আসলে যে চৌর্যবৃত্তিতে দিকপাল তা জেনে জামালপুরের বাসিন্দারাও স্তম্ভিত ।
এসডিপিও (বর্ধমান দক্ষিণ) অভিষেক মণ্ডল জানিয়েছেন,’ধৃত বাসুদেব মণ্ডলের বাড়ি হুগলী জেলার বলাগড় থানার আকতারপুর এলাকায় ।
জামালপুর থানা এলাকায় হওয়া বেশ কয়েকটি চুরির ঘটনায় তদন্ত নেমে পুলিশ নিশ্চিৎ হয় ওইসব জড়িত বাগুইহাটি থানার পুলিশের কাস্টডি থেকে পালানো কুখ্যাত চোর বাসুদেব মণ্ডল।সে ধরা পড়ার পর নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে জামালপুর থানা বাসুদেব মণ্ডলকে পাঁচ দিনের পুলিশ রিমান্ডে নেয়।তাকে জেরা করে পুলিশ একাধীক চুরির কিনারা করে।বাসুদের চুরি করা ৭টি মোটর বাইক ,১টি আইফোন,১টি ল্যাপটপ ,১ কার্টুন সিগারেট,১ কার্টুন রজনী তুলসী নামের গুটকা , ছাতা ২৫ টি এবং নগদ ২৪১০ টাকা উদ্ধার হয়েছে।এইসব চুরিতে জড়িত থাকার কথা ধৃত বাসুদেব মণ্ডল স্বীকারও করেছে । হেপাজতের মেয়াদ শেষ হওয়ায় বাসুদেবকে সোমবার বর্ধমান আদালতে পেশ করা হয়েছে বলে এসডিপিও জানিয়েছেন ।
জামালপুর থানার পুলিশ কর্তাদের কথা অনুযায়ী
বছর ৩৫ বয়সী বাসুদেব মণ্ডল অত্যন্ত ধুরন্ধর।
চুরির কাজ দ্রুত সেরে পালানোর ব্যাপারেরও অত্যন্ত পটু এই যুবক।হুগলীর বলাগড় থানা এলাকার বাসিন্দা হলেও বাসুদের তাঁর চৌর্যবৃত্তি
হুগলী জেলাতেই সীমাবদ্ধ রাখে নি।বরং সে তাঁর
চৌর্যবৃত্তির প্রভাব কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলাতেও বাড়িয়ে ছিল।আর তার কারণেই
ঘুম ছোটে পুলিশের।এমন চোরকে জালে পোরাটা পুলিশের কাজে চ্যালেঞ্জের হয়ে দাঁড়ায় ।
তদন্তে চালিয়ে পুলিশ কর্তারা এও জানতে পেরেছেন নায়কচিত চালচলনের বাসুদেব মণ্ডলের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে একাধীক মহিলার।বিভিন্ন ড্যান্স বারেও তাঁর যাতায়াত ছিল।এহেন বাসুদেব তাঁর প্রেয়সীদের বাসনা পূরণের জন্যে অর্থ জোগাড় করতে চুরিতে হাত পাকায়।তবে হঠকরেই
কোন এলাকায় গিয়ে চুরি করতো না বাসুদেব।
চুরির ঘটনা ঘাটানোর আগে ধুরন্ধর বাসুদেব ওই সব এলাকার অলি গলি সব বুঝে নিতে চাইতে।এরজন্যে সে বিশেষ পন্থা কাজে লাগাতো।কখনো সবজি বিক্রেতা আবার কখনো কল সারানোর মিস্ত্রি বা রাজমিস্ত্রি সেজে বাসুদেব ওইসব এলাকায় রেইকি করতো।
এইভাবেই সে কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় চুরিতে আধিপত্য বাড়ায়।কলকাতার নিউটাউন,বাগুইহাটি ছাড়াও হুগলী জেলার বলাগড় ,সিঙ্গুর ,গুড়াপ,হরিপাল ,ধনিয়াখালি,
তারকেশ্বর থানার পুলিশের রাতের ঘুম কেড়ে নেয় কুখ্যাত চোর বাসুদেব। এমনকি পূর্ব বর্ধমান জেলার জামালপুর থানার পুলিশও এই চোরকে পাকড়াও করার জন্যে উঠেপড়ে লাগে ।নিউটাউন থানা বাসুদেবকে পাকড়াও করার পর তাঁকে বাগুইহাটি থানা হেপাজতে নেয়।ওই সময় ফন্দি এঁটে বাগইহাটি থানার পুলিশ কাস্টডি থেকে
পালায় বাসুদেব।রিমান্ড আসামী পালানোর জন্যে
বাগুইহাটি থানার তদন্তকারী পুলিশ অফিসারকে শাস্তির কোপে পড়েতে।
এদিকে পুলিশ কাস্টডি থেকে পালিয়ে বাসুদেব ফের চৌর্যবৃত্তিতে নেমে পড়ে।এমত অবস্থায় রাজ্যের বিভিন্ন থানা এলাকার পুলিশ বাসুদেবকে জালে পোরার জন্যে তৎপর হয়।বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশ হুগলীর রিষড়া থেকে পাকড়াও করে বাসুদেব মণ্ডলকে। তারপর তার ঠাই হয় দমদম সেন্ট্রাল জেলে । এর পর নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে জামালপুর থানার পুলিশও তাকে হেপাজতে নিয়ে একের পর এক চুরির কিনারা করে ।দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে চুরির নেট ওয়ার্ক বাসুদেব একাই চালাতো নাকি সে বিশেষ গ্যাং তৈরি করেছে সেব্যারে এখন খোঁজখবর চালাচ্ছে পুলিশ ।