সরকারি অনুদান বা বড় বাজেটের উপর নির্ভর না করেও ইচ্ছাশক্তি, আন্তরিকতা ও বিদ্যালয়ের প্রতি দায়বদ্ধতা থাকলে অনেক বড় কাজ সম্ভব — এর অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো পূর্ব বর্ধমান জেলার রায়না ২ ব্লকের রায়না ৩ চক্রের লোহাই সিদ্ধেশ্বরী প্রাথমিক বিদ্যালয়।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অভিজিৎ ভট্টাচার্যের আন্তরিক আহ্বানে সাড়া দিয়ে লোহাই গ্রামের বাসিন্দা কাশীনাথ কুন্ডু তাঁর স্বর্গীয় পিতা পশুপতি কুন্ডু ও মা উমাবালা কুন্ডুর স্মৃতির উদ্দেশ্যে বিদ্যালয়ের প্রবেশদ্বারটি নির্মাণ করে দেন। সেই স্মৃতিস্তম্ভের নামকরণ করা হয় ‘পশুপতি-উমাবালা স্মৃতি তোরণ’।

আজ এই তোরণের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয় বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে। উপস্থিত ছিলেন রায়না ৩ চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়, রায়না ২ পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত ও পরিবহন কর্মাধ্যক্ষ সৈয়দ কলিমুদ্দিন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অভিজিৎ ভট্টাচার্য, সমাজসেবী কাশীনাথ কুন্ডু, স্থানীয় জন প্রতিনিধি, অভিভাবক ও বহু শিক্ষা অনুরাগী।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পাশাপাশি সমগ্র শিক্ষা মিশনের স্বচ্ছতা সপ্তাহ উপলক্ষে বিদ্যালয়ে আয়োজন করা হয় বিশেষ কর্মসূচি। শিক্ষার্থীরা অংশ নেয় পরিচ্ছন্নতা বিষয়ক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায়। ছোটদের হাতের আঁকা ছবিতে ফুটে ওঠে পরিবেশ রক্ষার বার্তা ও বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ পরিচ্ছন্ন রাখার অঙ্গীকার।
অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় এই উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, “সরকারি অনুদান ছাড়াও যদি সমাজের মানুষ বিদ্যালয়ের পাশে দাঁড়ায়, তবে বিদ্যালয়ের উন্নয়ন স্বপ্ন নয়, বাস্তব হয়ে উঠতে পারে।”
কাশীনাথ কুন্ডু জানান, তিনি তাঁর পিতা-মাতার স্মৃতিকে চিরজীবী রাখতে বিদ্যালয়ের প্রবেশদ্বার নির্মাণে উদ্যোগী হয়েছেন। একইসঙ্গে তিনি গ্রামের অন্য অভিভাবকদেরও বিদ্যালয়ের উন্নয়নে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান।
এদিন বিদ্যালয়ের ছোট ছোট শিক্ষার্থীদের মুখে ছিল আনন্দ ও গর্বের ঝলক। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, এই ধরণের পদক্ষেপ ভবিষ্যতে বিদ্যালয় উন্নয়নের পথকে আরও মসৃণ করে তুলবে।
রায়না ২ ব্লকের লোহাই সিদ্ধেশ্বরী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এই উদ্যোগ আবারও প্রমাণ করলো — সরকারি অনুদান থাকুক বা না থাকুক, সমাজের আন্তরিক সহযোগিতা থাকলেই শিক্ষা ক্ষেত্রের উন্নয়নে গড়া যায় এক অনন্য নজির।