প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়, বর্ধমান, ২৬ সেপ্টেম্বর: এক বছর আগের ঘটনা হলেও জনমানসে এখনো টাটকা হয়ে আছে সন্দেশখালির সন্ত্রাস কাহিনী। এবার একই রকম সন্ত্রাস ও অত্যাচারের ঘটনায় এখন তপ্ত পূর্ব বর্ধমানের থানার বেরুগ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার চক্ষণজাদি গ্রাম ।সন্দেশখালির তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানের মতো সন্ত্রাস ও অত্যাচার চালানোর অভিযোগে বেরুগ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানের স্বামী শেখ ফিরোজে বিরুদ্ধে সম্প্রতি গর্জে উঠেছিলে চক্ষণজাদির বাসিন্দারার। সেই ফিরোজ এখন গ্রামছাড়া।তারই মধ্যে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ফিরোজের ভাই শেখ চাঁদের বিরুদ্ধে আছড়ে পড়ে জনরোষ।তাকে জনরোষ থেকে মুক্ত করতে গিয়ে আক্রান্ত হর পুলিশ। ভাঙচূর হয় পুলিশের গাড়ি। কোন রকমকে পরিস্থিতি সামল দিয়ে পুলিশ শেখ চাঁদ কে জনরোষের হাত থেকে উদ্ধার করে জামালপুর হাসপাতালে পৌছায়।রাতে বিশাল পুলিশ বাহিনী চক্ষনজাদি গ্রামে পৌছে শুরু করে ধরপাকড় অভিযান। উত্তেজনা থাকায় রাতে গ্রামে পুলিশ মোতায়েন রাখা হয় ।
তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত বেরুগ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান হাসনারা বেগমের বাড়ি চক্ষণডাদি গ্রামে। প্রধানের স্বামী শেখ ফিরোজ বাহুবলী তৃণমূল নেতা হিসাবেই এলাকায় খ্যাত। হাসনারা বেগম ২০১৮ সাল থেকে একটানা বেরুগ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান পদে অধিষ্ঠিত রয়ে আছেন’। একই গ্রামের বাসিন্দা শেখ শাহাবুদ্দিন ওরফে দানি বেরেগ্রাম অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি। এঁরা উভয়েই জামালপুর ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি মেহেমুদ খাঁনের অনুগত বলেই এলাকায় পরিচিত ।

গ্রামবাসীদের অভিযোগ,’স্ত্রী পঞ্চায়েত প্রধান হওয়ার পর থেকেই ফিরোজ নিজেকে বেরুগ্রাম অঞ্চলের ’বেতাজ বাদশা’ প্রতিপন্ন করা শুরু করে দেন। তারই সাথে তিনি তাঁর বাহিনী নিয়ে এলাকায় সন্ত্রাস কায়েম করা,অত্যাচার চালানো লোকের জমি-জমা কেড়ে নওয়া,এসবও শুরু করেন। কক্ষণজাদি স্কুল ও মসজিদের সম্পত্তি হাতিয়ে নিতেও ফিরোজ কুন্ঠা বোধ করেন না।দামোদর থেকে বালি লুটেও ফিরোজ হাত পাকিয়ে ফেলে“।
এ সবের মধ্যেই দামোদর থেকে বালি লুটের ঘটনায় বুরুগ্রাম অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি শেখ শাহাবুদ্দিনের নামও জড়ায়। বেরুগ্রাম অঞ্চল এই দুই ডাকাবুকো তৃণমূল নেতার এইসব কীর্তি ব্লক তৃণমূলের নেতারা কিছুই জানতেন না,এমনটা অবশ্য নয়। তাঁরা সব জেনেও নীরব রয়ে থাকেন । সেই অবস্থায় সময় গড়ানোর সাথে সাথে এলাকায় ফিরোজের দাপট বৃদ্ধি ঈর্ষার কারণ হয়ে হঠে শাহাবুদ্দিনের কাছে। দু’জনের মধ্যে তৈরি হয় দ্বন্দ্ব। বালির কারবারের অর্থের ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে বিরোধের জেরে সেই দ্বন্দ্বে কার্যত ঘৃতাহুতি পড়ে। দুই নেতা একে অপরের শত্রু বনে যান। যদিও শেষ পর্যন্ত শেখ শাহাবুদ্দিন তাঁর ধুরন্ধর রাজনৈতিক চলে ফিরোজকে ব্যাকফুটে পাঠিয়ে দিতে সক্ষম হন। জনরোষে ফিরোজ এলাকা ছাড়া হতে পর্যন্ত বাধ্য হয়েছেন । ফিরোজের বিরুদ্ধে পাহাড় প্রমাণ অভিযোগও জমা পড়েছে জামালপুর থানায় ।
এদিকে ফিরোজ চক্ষণজাদি গ্রাম ছেড়ে পালালেওফিরোজের ভাই শেখ চাাঁদ চক্ষণজাদি গ্রামেই রয়ে ছিলেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার মুখে আচমকাই তাঁর উপর জনরোষ আছড়ে পড়ে।তাঁকে রাস্তায় আটকে বেধড়ক মারধোর শুরু হয়। সেই খবর পেয়ে
জামালপুর থানার পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌছায়। জনরোষের হাত থেকে শেখ চাঁদকে উদ্ধার করতে গিয়ে আক্রন্থ হর পুলিশ । ভাঙচুর হয় পুলিশ গাড়ি। এই অবস্থায় কোন রকমে শেখ চাঁদকে উদ্ধার করে নিয়ে তার হাতে হাতকড়া লাগিয়ে আক্রান্ত পুলিশ অফিসার ও পুলিশ গাড়ির চালক জামালপুর হাসপাতালে পৌছান।সেখানে তাঁদের সকলের চিকিৎসা হয়।চিকিৎসা শেষে শেখ চাঁদকে জামালপুর থানায় রেখে বিশাল পুলিশ বাহিনী পৌছে যায় চক্ষণজাদি গ্রামে। শুরু হয় ধরপাকড় অভিযান।সেই খবর সংগ্রহ করতে যাওয়ায় সাংবাদিককে পুলিশের হুমকির মুখে পড়তে হয় ছবি তুলতেও সাংবাদিককে বাধা দেয় পুলিশ । তবে এতকিছু করেও পুলিশ খবর ও ছবি সংগ্রহের কাজে সংবাদ মাধ্যমকে আটকে রাখতে পারে নি।
জামালপুর হাসপাতালের চেয়ারে বসে আক্রান্ত শেখ চাঁদ সংবাদ মাধ্যমকে জানান , জামালপুর থানার মেজবাবু আমায় বলে ছিলেন নুন ভাত খা গার । বাইরে চলে যাবি । আমি কোচবিহারে চলে গিয়ে ছিলাম । দু’দিন আগে আমি গ্রামে এসেছি।
তার টিকিট আমার কাছে এখনো আছে। আগামী মঙ্গলবার আমার ফের কোচবিহার পালিয়ে যাওয়ার কথা ছিল ।আমি কিছু করিনি । তবুও ওরা এদিন আমায় ব্যাপক মারধোর করলো।আমার মুখ ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় মেরে রক্ত বার করে দিয়েছে“। এ নিয়ে পুলিশের কোনও কর্তার কোন প্রতিক্রিয়া রাত অবধি পাওয়া যা নি। অঞ্চল ও ব্লক তৃণমূলের নেতারাও গোটা ঘটনা নিয়ে কার্যত মুখে কুলুপ এঁটেছেন। বেরুগ্রাম অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি শেখ শাহাবুদ্দিনের লোকজন পুলিশকে এবং তাঁকে মারধোর করেছে বলে শেখ চাঁদ সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন।
যদিও ২৬ শের বিধানসভা ভোটের প্রাক্কালে জামালপুরের চক্ষণজাদি গ্রামে তৃণমূলে গোষ্ঠ বিবাদ হিংসাত্মক রুপ নেওয়ায় আখেরে খুশি বিজেপি নেতারা । জেলা বিজেপি নেতা মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বলেন,সনন্দেশখালির দ্বিতীয় রুপ এখন জামালপুরের চক্ষণজাদি। যা খবর পাওয়া যাচ্ছে তা হল ,দামোদরের বালি লুটের বখরা নিয়েই মূলত তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধানের স্বামীর সঙ্গে অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতির মধ্যে সঃঘাত তৈরি হয়েছে।
সেই সংঘাত এখন চরমে পৌছেচে। অবৈধ বালির কারবার নিয়ে ইডি (ED) ইতিমধ্যেই বাংলার তদন্তে নেমেছে । সেই তদন্তে আগামী দিনে চক্ষণজাদির তৃণমূল নেতাদের নাম যদি উঠে আসে তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। এস ডি পি ও (বর্ধমান দক্ষিণ) অভিষেক মন্ডল শুক্রবার জনান,পুলিশে উপর হমলা চালানোর ঘটনায় চক্ষণজিদি গ্রাম থেকে ১৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে








