গ্রামীণ কর্মসংস্থানের ইতিহাসে একশো দিনের কাজের প্রকল্প কেবল একটি সরকারি স্কিম নয়, বরং তা সামাজিক সুরক্ষা ও গ্রামীণ জীবনের ভরসার প্রতীক। সেই প্রকল্পের নাম পরিবর্তনকে ঘিরে নতুন করে রাজনৈতিক ও আদর্শিক বিতর্কের সূচনা হল দেশজুড়ে। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় সরকার মহাত্মা গান্ধী ন্যাশনাল রুরাল এমপ্লয়মেন্ট গ্যারান্টি অ্যাক্ট (এমজি-নারেগা)-র নাম পরিবর্তন করে ‘ভিবি-রামজি’ করার সিদ্ধান্ত নেয়। সংসদের দুই কক্ষে বিল পাশ হলেও, তা এখনও আইনে পরিণত হওয়ার অপেক্ষায়। এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এরই প্রতিক্রিয়ায় মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, রাজ্যের নিজস্ব একশো দিনের কাজের প্রকল্প ‘কর্মশ্রী’-র নাম বদলে মহাত্মা গান্ধীর নামে করা হবে। সেই ঘোষণার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই বাস্তব রূপ মিলল। রাজ্যপালের সম্মতির পর শনিবার সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানানো হয়, আগামী অর্থবর্ষ থেকে কর্মশ্রী প্রকল্পের নতুন নাম হবে ‘মহাত্মাশ্রী’।
পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, এতদিন কর্মশ্রী প্রকল্পে একজন জবকার্ডধারী বছরে সর্বাধিক ৭০ দিন কাজ পেতেন। নতুন অর্থবর্ষ থেকে সেই কাজের মেয়াদ বাড়িয়ে ১০০ দিন করা হচ্ছে। ফলে এটি কেবল নাম পরিবর্তনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে না, বরং প্রকল্পের পরিসরও উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সিদ্ধান্ত গ্রামীণ অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করছে। রাজ্য সরকারের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ ও বাস্তবায়ন নিয়ে অনিশ্চয়তার আবহে রাজ্যের নিজস্ব প্রকল্পকে আরও শক্তিশালী করাই এই সিদ্ধান্তের মূল লক্ষ্য।
মনরেগা থেকে মহাত্মা গান্ধীর নাম বাদ দেওয়া প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার ধনধান্য অডিটোরিয়ামে এক বাণিজ্য সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন তোলেন, “মনরেগা থেকে মহাত্মা গান্ধীর নাম বাদ দেওয়া হলো! লজ্জা হচ্ছে, আমরা কি জাতির জনককে ভুলে যাচ্ছি”? এই মন্তব্যেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে, বিষয়টি শুধুমাত্র প্রশাসনিক নয়, বরং এক আদর্শিক অবস্থান।
এই প্রসঙ্গে পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ বিশ্বনাথ রায় বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সবসময়ই মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কাজ করেন। একশো দিনের কাজের প্রকল্পে মহাত্মা গান্ধীর নাম যুক্ত করা শুধু সম্মানের বিষয় নয়, এটি গ্রামীণ মানুষের অধিকার ও মর্যাদাকে আরও সুদৃঢ় করবে। কাজের দিন বাড়িয়ে ১০০ করায় গ্রামীণ পরিবারগুলির আর্থিক সুরক্ষায় বড় ভূমিকা নেবে”।
রাজ্যের এই সিদ্ধান্তে একদিকে যেমন গ্রামীণ কর্মসংস্থানের ভিত আরও মজবুত হচ্ছে, তেমনই মহাত্মা গান্ধীর আদর্শকে সামনে রেখে সামাজিক সুরক্ষার বার্তাও স্পষ্টভাবে তুলে ধরছে নবান্ন।







