✍️:শ্যামলী সেন
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি উপনিবেশ গড়ে তুলেছিল ভারতবর্ষে। প্রথমে ব্যবসা করবে বলে তারা এদেশে এসেছিল কিন্তু ধূর্ত ব্রিটিশরা বণিকের রূপ ধরে এসে শাসকের আসনে অধিস্তিত হয়েছিল ভারতবর্ষের সিংহাসনে।
সিরাজ উদ দৌলার সঙ্গে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পলাশী প্রান্তরে একটি সাজানো যুদ্ধ হয়েছিল ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে। তার আগেই ব্রিটিশ গভর্নর লর্ড ক্লাইভ সিরাজের মন্ত্রী মিরজাফর, সেনাপতি শহর সকলকে প্রলোভনে বশীভূত করে ভাবে ফেলেছিল। এভাবেই প্রথম থেকেই ব্রিটিশরা ভারতীয়দের বোকা বানিয়ে তাদের গ্রাস করেছিল। পলাশীর যুদ্ধ ছিল একটি সাজানো যুদ্ধ মাত্র প্রকৃত যুদ্ধ হলে ইংরাজরা কখনোই জিততে পারত না।
এর ১০০ বছর পর ভারতীয়রা প্রথম ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে সিপাহী বিদ্রোহের মাধ্যমে। এই সিপাহী বিদ্রোহ প্রথমে সিপাহীরা শুরু করলেও এটি পরে জাতীয় বিদ্রোহের চরিত্র নিয়েছিল। সেই প্রথমবার ইংরাজরা বেকায়দায় পড়েছিল। এরপরই ইংল্যান্ডের মহারানী ভিক্টোরিয়া তার বিখ্যাত ঘোষণাপত্র জারি করেন এবং ভারতের শাসনভার নিজের হাতে গ্রহণ করেন।
এরপর নানা বিদ্রোহ নানা সময়ে হয়েছে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে। যেমন_মারাঠা, শিখ, রাজপুত ও আফগানরা তো বেশ শক্তিশালী ভিত্তির ওপর বিদ্রোহ করেছিলেন। কিন্তু প্রতিক্ষেত্রেই কূটনীতি প্রয়োগ করে ইংরাজরা জয়ী হয়েছে।
এরপর এলো আন্দোলনের চরম পর্যায়ে, গঠিত হলো জাতীয় কংগ্রেস। ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার অ্যালবার্ট হলে উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভাপতিত্বে কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশন বসলো। প্রথম কুড়ি বছর কংগ্রেস আবেদন নিবেদনের মাধ্যমে ইন্ডাস্ট এর কাছ থেকে দাবি আদায়ের চেষ্টা করে। এই সময় কংগ্রেসের আন্দোলন ছিল নরমপন্থী আন্দোলন।
কিন্তু দেখা গেল আবেদন নিবেদনের মধ্য দিয়ে কোন সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। তখন তারা চরমপন্থী আন্দোলনের পথে এগিয়ে গেল। ইতিমধ্যে লর্ড কার্জন তার কূটনীতি দিয়ে বঙ্গভঙ্গ করার জন্য অর্থাৎ হিন্দু-মুসলমানকে আলাদা করার পরিকল্পনা করলো। এরই প্রতিবাদে বাংলাদেশ উত্তাল হয়ে উঠলো। বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে সামিল হল ভারতবাসী। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই উদ্যোগকে বানচাল করে দিতেই হিন্দু মুসলিম ভাই ভাই এই উদ্দেশ্যে রাখি বন্ধন উৎসব পালন করলেন।। বাংলার ঘরে ঘরে মহিলারা অরন্ধন পালন করলেন।
এরপর আবির্ভাব ঘটল মহাত্মা গান্ধী, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, রাসবিহারী বসু, জহরলাল নেহেরু, মাস্টারদা সূর্য সেন এর মত মহান দেশনায়কদের। মহাত্মা গান্ধীর ইংরেজদের বিরুদ্ধে অহিংস অসহযোগ আন্দোলন, আইন অমান্য আন্দোলন ও ভারত ছাড়ো আন্দোলন ছিল কালজয়ী আন্দোলন।
নেতাজি সুভাষ বোসের সঙ্গে মহাত্মা গান্ধী ও জহরলাল নেহেরুর মতবিরোধ ঘটায় তিনি অন্য দল গঠন করেন যার নাম ফরওয়ার্ড ব্লক। অবশেষে সিংগাপুরে পাড়ি দিয়ে রাসবিহারী বসু প্রতিষ্ঠিত আজাদ হিন্দ বাহিনীর মূল দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর “দিল্লি চলো “তুলে ইংরাজ সরকারের শক্ত ভিতকে একেবারে নড়িয়ে দেন।
মহান দেশপ্রেমিক সকলেই প্রিয় সূর্যসেনের নাম এ প্রসঙ্গে না করলেই নয়। তিনি চট্টগ্রামের মানুষের কাছে মাস্টারদা নামে পরিচিত ছিলেন। চট্টগ্রামের মানুষ তাকে দেবতার মত শ্রদ্ধা করতেন। তার বিখ্যাত অভিযান চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন। তিনি চট্টগ্রামের মানুষের সঙ্গে জোট বেঁধে ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে সব যোগাযোগ ছিন্ন করেছিলেন চট্টগ্রাম থেকে। পুলিশ থানা দখল করে চট্টগ্রামের মাটিতে স্বাধীনতা পাওয়ার আগেই ভারতের স্বাধীন পতাকা উত্তোলন করে সেখানে মানুষকে স্বাধীনতার আস্বাদ দিয়েছিলেন। যদিও সেটা ছিল ক্ষণস্থায়ী কিন্তু স্বাধীনতার সংগ্রামে তার অবদান অমর অক্ষয় হয়ে রইল।
১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে ভারতছাড়ো আন্দোলন যখন শুরু হয় ইন্না সরকার মনস্থির করে ফেলে এ দেশে তাদের দিন শেষ হয়ে এসেছে। করেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে এই ধ্বনি তুলে ভারতবাসী স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ল।।
অবশেষে বহু বিপ্লবীদের আত্ম বলিদানে এবং ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় 1947 সালের 15 ই আগস্ট ব্রিটিশরা এদের ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। স্বাধীন ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলিত হয়। সব মেয়েরা লাল পাড় সাদা শাড়ি পড়ে শঙ্খ ধ্বনিতে ভারতের স্বাধীনতা কে বরণ করে নেয়। সারা ভারতবর্ষে নেমে আসে আনন্দের ধারা ও অকাল দীপাবলি।
সারা ভারতের ঘরে ঘরে প্রদীপ দিয়ে সাজানো হয়। বন্দেমাতরম ও জয় হিন্দ ধ্বনিতে মুখরিত হয় ভারতের স্বাধীনতার ক্ষণ। ব্রিটিশ সরকারের অধীনে থাকা ২০০ বছরের পরাধীন ভারত বর্ষ এভাবেই স্বাধীনতার স্বাদ পায়। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা “জনগণমন “গানটি জাতীয় সংগীতের মর্যাদা পায়। এই গানটিকে স্বাধীন ভারতের পতাকা উত্তোলিত হয়।