আবহাওয়া দক্ষিণবঙ্গ শিক্ষা লাইফ স্টাইল স্বাস্থ্য ভ্রমন ধর্ম কৃষি কাজ ক্রাইম

উৎসবের আমোদ আর ফের অতিমারীর আশঙ্কা

krishna Saha

Published :

WhatsApp Channel Join Now

উৎসবের আমোদ আর ফের অতিমারীর আশঙ্কা

অমৃতা লোধ
——————-

উৎসব মানেই আনন্দ। পুজো এবং মাঝে তার আবেগ মানুষের মনকে এক অফুরন্ত অবসর দেয়। ব্যস্ততার মধ্যে পুজো বা উৎসবে মানুষ জাতপাত বিচার কে সরিয়ে রেখে মাতিয়ে নেয় শিশুসুলভ মনকে।গণেশপূজা,বিশ্বকর্মাপূজা,পোঙ্গাল,জন্মাষ্টমী,দুর্গাপূজা,কালীপূজা,সরস্বতীপূজা, দীপাবলি, হোলি,ভাইফোঁটা ,গুরু নানক জয়ন্তী ,ঈদ ,মহাবীর জয়ন্তী, সকল উৎসবে হিন্দু, মুসলিম, শিখ,জৈন, বৌদ্ধ, সবাই স্বহৃদয়ে অংশগ্রহণ করে একে অপরের প্রতি সৌহাদ্য প্রদর্শন করে। বিগত এক বছরের এক ভয়াবহ মহামারী জনজীবনকে এইসকল উৎসবে যোগদানে বিরত থাকাই শ্রেয় বলে গণ্য করেছে।২০২০ তে আসা এক মারণান্তক ভাইরাস করোনার প্রকোপ জনজীবনকে সমূলে বিনষ্ট করেছে ।মানুষ তার জীবন বাঁচাতে সামাজিক দূরত্ব ও সর্তকতা অবলম্বন কে পাথেয় করে বাঁচতে শিখেছে। নানা ব্যস্ততা ও দ্রুত জীবনের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে চলতে এমনিতেই সামাজিক দূরত্ব পাশাপাশি পারিবারিক দূরত্ব বেড়ে চলেছে।

তবে এর মাঝে উৎসব এমন এক মাধ্যম যার সম্পর্কের মধ্যে সাময়িকভাবে হলেও দীর্ঘস্থায়ী ছাপ রেখে যায় ।করোনার প্রকোপ ২০২০ র সকল উৎসবে বিরাম লাগায়। চারিদিকে প্রিয়জনকে হারানোর ব্যথা ও সর্তকতা অক্ষুন্ন রাখতে গিয়ে উৎসবের সুর কোথায় যেন স্তব্ধ হয়ে পড়ে। সরকারের দীর্ঘপ্রয়াসী চেষ্টায় সমাজকে করোনা মুক্ত না করতে পারলেও তবে টিকাকরণের মাধ্যমে কিছুটা হলেও স্বস্তি দিয়েছে ।২০২০ র লকডাউন বেঁধে রাখা সময়সূচিতে সামাজিক কাজকর্ম করে নেওয়ার প্রচেষ্টায় উৎসব ও পুজো গুলি ধীরগতি পেয়েছে ।তবে ২০২১
র করোনার সংক্রমনের সংখ্যা হ্রাস পেতে থাকলে মানুষ আবারও নিজস্ব সর্তকতা ভুলে উৎসবের আনন্দে মেতে বেপরোয়া হয়ে উঠেন।গণেশপুজোর পর দুর্গাপুজো বাঙালির আবেগ ও আনন্দের জায়গা। রাজ্যে কোভিড এর দ্বিতীয় ঢেউএর সময় নির্বাচনী প্রচারে ভিড় একই রকমের আশঙ্কার প্রকাশ করে।

ভোটের পরে আশঙ্কার ফল সত্য হলেও প্রশাসন পুজোর পরিকাঠামো সংশোধনীতে অনেকটাই বিলম্ব করে ফেলেন। ওয়ারিয়ার্স এর তরফে স্বর্ণপালি মাইতি,অভিক ঘোষ,শুদ্ধসত্ত্ব চট্টোপাধ্যায় ,সহ ৪০ জন চিকিৎসক কোভিড বিধি পালন দেখতে শহরের ১০০টি মন্ডপ পরিদর্শন করেছেন ।তাদের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী মানুষের মনোভাবে গা ছাড়া ব্যাপার রই বিশেষভাবে লক্ষণীয়। হাতের গুণে কয়েকজনকেই মাক্স পড়তে দেখা যাচ্ছে ।মন্ডপের ভিতরে প্রবেশ নিষেধ থাকলেও মন্ডপের বাইরে অযথা ভিড় নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা সম্পর্কে পুজোর উদ্যোক্তা ও প্রশাসন তেমনভাবে নজর দেন নি। পঞ্চমীর দিন থেকেই শহরের রাস্তায় মানুষ দলে দলে মাক্স বিহীন আমোদ ও হুল্লোড়ে মেতে উঠেছে। অতিমারির তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কাকে উপেক্ষা করে সাধারণ মানুষ ও প্রশাসন উভয়ই শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, অথবা মাক্স পরার সচেতনতা কে কেউ তাদের প্রচার এর মধ্যে গুরুত্বের খামতি রখেছে। মা দুর্গা সপরিবারে মর্তে আগমন বাঙালি মনকে আবেগপূর্ণ করে তোলে ।

See also  মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছবি নিয়েই ‘অধিকারী পাড়ায়’ প্রচারে নামল তৃণমূল কংগ্রেস

পৃথিবীর যে প্রান্তে বাঙালির বাস, হোক না কেন ?দুর্গাপুজো হবে না এমন কোন স্থান নেই। সেই আমেরিকার বস্টন শহর ও সেই তালিকায় বাদ নেই। দুর্গা পুজো মানেই জমিয়ে খাওয়া দাওয়া। মণ্ডপে পূজা পরিক্রমা করা। আর সেইসঙ্গে বছরের সেই দিনই কাছের মানুষদের সঙ্গে প্যান্ডেলে বসে আড্ডা দেওয়া। পুজোর সেরা তকমা পেতে ক্লাবেদের মণ্ডপ শয্যা থেকে শুরু করে ঠাকুরের পরিকাঠামো আলোকসজ্জা কার থেকে বেশি আকর্ষণীয় করেছে পুজোর অন্যতম আকর্ষণ। কলকাতা অথবা মুম্বাই থেকে অতিথি শিল্পীর অনুষ্ঠান ক্লাবেদের মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক দ্বন্দ্বতোই চলেই নিজেদের পুজোকে সকলের সামনে মেলে ধরতে। বঙ্গ ললনাদের পুজোর বিভিন্ন ট্রেন্ডিং পোশাক ও এই পুজোর বিশেষ আকর্ষণ থাকে। খিচুড়ি ও কচি পাঁঠার মাংস ও বিভিন্ন ভোগ ও খাওয়া-দাওয়া পঞ্চমী থেকে দশমী পর্যন্ত চলে। তবে করোনার থাবা বসালে ২০২০ তে সামাজিক সকল রীতিনীতি বন্ধ থাকে। 2021 এ মানুষ আশাবাদী ও টিকাকরণের দুটি ডোজ পেয়ে আগের নিয়মে আবার ও পুজোয় মেতে উঠলেও করোনার মারাত্মক ছায়া কিন্তু এখনও আমাদের মধ্যে থেকে যায়নি। ১২ বছরের কম বয়সী শিশুরা কিন্তু এখন ও টিকা পায়নি। করোনার সংক্রমণ মাত্রা যদিও কমেছে তাই সতর্কতার প্রয়োজন আরো বেশি ।রাস্তায় রাস্তায় মানুষের ঢল দেখে চিকিৎসকরা খুব বেশি চিন্তিত পুজোতে ১০০ কোটি ডোজ সম্পন্ন করার লক্ষ্য কেন্দ্রের কাজ চলছে ।তবে পঞ্চমী থেকে যে ভিড় দেখা গিয়েছিল তার প্রভাব খুব একটা ভালো ঠেকছে না স্বাস্থ্যমন্ত্রক এর কাছে। “বুজ খালিফা”র মণ্ডপ দেখতে মানুষ মরিয়া হয়ে মাস্ককে থুতনিতে ঝুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। উৎসবের আনন্দে অতিরিক্ত লাফালাফি করতে গিয়ে সংক্রমিত হলে আপনাদের থেকে বিপদ আসতে পারে বাড়ির বড় ও ছোটদের। বিশেষ তথ্য হল এইযে করোনা টিকা কিন্তু সংক্রমণ আটকায় না ।

আটকাই সংক্রমনের কারণে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ও বিপদের আশঙ্কা বড় বিপদের দিকে পরিস্থিতি যাতে এগিয়ে না যায়। তার জন্য এখন ও পর্যন্ত স্কুল-কলেজ ও বিভিন্ন দপ্তর ও সেইভাবে খোলার অনুভূতি পায়নি। শিশুদের নিয়ে যতটা সম্ভব এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে ।বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন করোনার তৃতীয় ঢেউয়ে সবচেয়ে বেশি শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, এবং তাদের ভ্যাকসিন হয়নি। জেলার মোট ৩১৫৪ টি পুজো কে সরকারি অনুদান দেওয়া হয়েছে। ১৫কোটি ৭৭ লাখ টাকার সরকারি অনুদান পেয়েছে জেলার পুজো গুলি। মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অনুদান দিয়েছেন। সর্তকতার বিষয় গুলি কে লক্ষ্য করতে গেলে মানুষ যেমন বেপরোয়াভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে, তার পাশাপাশি কিছু জায়গায় কঠোর নিরাপত্তা দেখা গেলেও বেশিরভাগ জায়গায় ভিড়কে আয়ত্তে আনতে কোন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়নি ।পূজো মন্ডপ গুলিতে মাস্ক ছাড়া প্রবেশ নিষেধ হলেও তার উপর কোনো কার্যকারিতা,বা অমান্য করলে দণ্ড দেওয়ার বা জরিমানা দেওয়ার বিষয় চোখে পড়েনি ।দুর্গাপুজো যেতে না যেতেই কালি পুজোতে বাঙালি মেতেছে। রাত্রে বেলায় দেবী কালীর আরাধনা। সেখানেও বিশেষ করে রাতে বেলায় বাচ্চাদের বিভিন্ন পুজোমণ্ডপে যেতে নিষেধ থাকলেও মায়েরা শিশুদের কোলে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। বহু শিশুরোগ বিশেষজ্ঞরা তাদের দেওয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, করোনার পাশাপাশি এমন বহু ভাইরাস রাত্রিবেলায় বার সন্ধের পর সক্রিয় এবং সেই সময়ে ভিড় বেশি হওয়ায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা অসুবিধা হয় ।শিল্পাঞ্চলের বহু শিশু জ্বর, সর্দি, শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হচ্ছে। ছট পুজোতে নদীতে বা পুকুর গুলিতে সবাই নেমে আরধনা করাতেই জল যেমন নোংরা হয়েছে তার পাশাপাশি সংক্রমনের স্বল্প বিস্তর বৃদ্ধি হয়েছে। জগধাত্রী পূজোতে সেই একই রকম দৃশ্য চোখে পড়েছে। লাইভ দর্শন যদিও কোন কোন পুজো মণ্ডপে ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবুও বাঙালি পুজোর মণ্ডপ থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতে পারেনি। গুরু দুয়ারে বেশ শিখদের সমাগম ও অনুষ্ঠানে বেশ আলোকসজ্জার সাথে বিনা সতর্কতায় উৎসব পালন করতে দেখা গেছে ও ভিড় ঠেলে প্রসাদ খেতেও। পুজোর বাজারে অতিরিক্ত ভিড় অর্থাৎ সোশ্যাল ডিসটেন্সসিং বা সামাজিক দূরত্ব বজায় থাকে নি ও মাস্ক না পরার কারণ আগেও মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে ।

See also  বিজয়া সম্মিলনীর অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশনায় হাততালির তকমা লাগালেন অভিনেত্রী পায়েল সরকার

এভাবে চলতে থাকলে আবারও করোনার তৃতীয় ঢেউ কে ডেকে আনা হবে। সীমিত পরিসরে হলেও আমরা সবাই খুশি থাকব বড় মাপের উৎসব পালনে না করেও।ঈদে দেখা গেছে বিভিন্ন মানুষ অযথা ভিড় কে বাড়িয়েছে। লাইভ স্ট্রিমিং এর ব্যবস্থা থাকলেও হয়তো এই সমস্যা সমাধান করা যেত। তাই এখন সবাই নিরাপদ থাকাটাই সব থেকে বড় কথা। শহরতলীর বহু লোকজনকে যেভাবে ভিড় বাড়াতে দেখা গেছে সেখানে শিক্ষিত লোকের সংখ্যা বেশী থাকছে তাদের অবুঝ ব্যবহার তাদেরকে অশিক্ষিতের দাঁড়িপাল্লায় ফেলেছে।

উৎসবে শহরে এমন বেপরোয়া মনোভাবই যেন স্বাভাবিক তাদের কাছে। চিকিৎসকদের হাজারো সতর্কতার পরোয়া করছেন না তারা ।কোভিড কম হচ্ছে
এ ধারণা ভুল। ভিড়ের ফলাফল বোঝা যাবে ১৪ দিন পর। প্রশাসনের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও নিজস্ব সর্তকতা,ও অপরের প্রতি দূরত্ব বজায় রেখে সামাজিক বিধিনিষেধ মেনে চলা ফেরা করতে হবে।
করোনা এখনো দেশ থেকে নির্মূল হয়নি তাই এই মহামারী নিয়ে বাঁচতে হবে আমাদেরকে। তাই সতর্কতায় পারি জীবন রক্ষা করতে জীবন থাকলে উৎসব হবে। উৎসব আমাদের জন্য ,আমরা উৎসবের জন্য নই। তাই জীবন থাকলে পরের বছর পালন হবে উৎসব।

krishna Saha

আমার নাম কৃষ্ণ কুমার সাহা, আমি ফুল টাইম সাংবাদিকতা করি।গত ৮ বছর ধরে এই পেশায় আছি