আবহাওয়া দক্ষিণবঙ্গ শিক্ষা লাইফ স্টাইল স্বাস্থ্য ভ্রমন ধর্ম কৃষি কাজ ক্রাইম

এনডিএ’ জোটের বিরুদ্ধে ধীরে ধীরে দানা বাঁধছে ‘ইন্ডিয়া’ জোট। প্রথমে পটনা, তারপর বেঙ্গালুরু এবং সদ্য মুম্বইয়ে,এর পর কী কলকাতা?

krishna Saha

Published :

WhatsApp Channel Join Now

‘এনডিএ’ জোটের বিরুদ্ধে ধীরে ধীরে দানা বাঁধছে ‘ইন্ডিয়া’ জোট। প্রথমে পটনা, তারপর বেঙ্গালুরু এবং সদ্য মুম্বইয়ে তিন-তিনটি বৈঠক করেছেন জোটের নেতারা। প্রথম দুই বৈঠকের শেষে, পরবর্তী বৈঠকের সম্ভাব্য স্থান ও কাল জানিয়ে দিয়েছিলেন জোটের নেতারা। তবে, মুম্বইয়ের বৈঠকের পর, পরবর্তী বৈঠক নিয়ে মুখ খোলেননি কেউ।সূত্রের খবর, পরবর্তী বৈঠকের স্থান হিসেবে উঠে এসেছিল কলকাতার নাম। কিন্তু, কলকাতায় বৈঠক করা নিয়ে জোটের নেতাদের মধ্যে মতভেদ দেখা গিয়েছে। কলকাতায় বৈঠক হলে জোটের অস্বস্তি বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন একাংশের নেতারা। কিন্তু কেন? কলকাতায় বৈঠকে সমস্যা কোথায়? বাংলায় কী ধাক্কা খাবে ইন্ডিয়া জোটের মসৃণতা?

 

 

জোটের প্রথম বৈঠকটি হয়েছিল পটনায়। তখনও অবধি জোট বাঁধার বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন না বেশ কয়েকটি বিরোধী দলের নেতারা। সেই বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছিলেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। নীতীশ-তেজস্বী জুটির ডাকে পটনার বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন ২০টির বেশি রাজনৈতিক দলের নেতারা। সেই বৈঠকের অবশ্য একটা ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটও ছিল। ইন্দিরা গান্ধী সরকারের বিরুদ্ধে যেভাবে বিরোধী দলগুলিকে একজোট করেছিলেন জয়প্রকাশ নায়ায়ণ, অনেকটা সেই ধাঁচেই মোদী সরকারের বিরুদ্ধে দলগুলিকে একত্রিত করার প্রয়াস শুরু করেছিলেন নীতীশ। সেই প্রয়াস সফল হয়েছিল। জোট বাঁধার বিষয়ে সম্মত হয়েছিলেন বিরোধী নেতারা।

 

 

পরের বৈঠক আয়োজনের দায়িত্বে ছিল, ইন্ডিয়া জোটের সবথেকে বড় দল কংগ্রেস। তারা প্রথমে জানিয়েছিল, বৈঠক হবে কংগ্রেস-শাসিত হিমাচল প্রদেশের সিমলায়। পরে স্থান বদলে কর্নাটকের বেঙ্গালুরুতে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বলতে গেলে, এই সভা একপ্রকার কর্নাটকে কংগ্রেসের বড় জয়ের উদযাপন ছিল। শক্রি প্রদর্শনের ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল। সেই সভাতেই জোটের নাম স্থির হয় ‘ইন্ডিয়া’। পরের বৈঠকের স্থান হিসেবে বেছে নেওয়া হয় মুম্বইকে। মূল আয়োজক ছিল উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনা এবং শরদ পওয়ারের এনসিপি। দুই দলেই ভাঙন ধরিয়েছে বিজেপি। তার উপর শিবসেনা দীর্ঘদিন ধরে বিজেপির জোট সঙ্গী ছিল। তাই ইনক্লুসিভনেস বা অন্তর্ভুক্তির বার্তা দেওয়ার জন্য মুম্বই ছিল আদর্শ জায়গা। কিন্তু, এরপর কোথায়? কোথায় হবে ইন্ডিয়া জোটের বৈঠক?

See also  কাটোয়ায় জেপি নাড্ডার সভাস্থলের সামনে তৃণমূলের পতাকা লাগানো নিয়ে তুঙ্গে রাজনৈতিক চাপানউতোর

 

 

সূত্রের খবর, আরজেডি প্রধান লালুপ্রসাদ যাদব প্রস্তাব করেছিলেন কলকাতার নাম। লোকসভায় সাংসদ সংখ্যার নিরিখে ইন্ডিয়া জোটের দ্বিতীয় বড় দল তৃণমূল কংগ্রেস। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জোটের অন্যতম ভরকেন্দ্র। তাছাড়া, বাংলাই হল সেই রাজ্য, যেখানে মোদী-শাহের নির্বাচনী অশ্বমেধের ঘোড়া বাধা পেয়েছে। রাজনৈতিক দিক থেকেও সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই কলকাতার আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। তৃণমূল সরকারের শাসনে, কলকাতায় ইন্ডিয়া জোটের সভা করতে কোনও বাধা ছিল না। কিন্তু, সূত্রের খবর লালুপ্রসাদের এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন সিপিআইএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। ইন্ডিয়া জোটের তিন শরিক – তৃণমূল কংগ্রেস, সিপিআইএম এবং কংগ্রেস – ইন্ডিয়া জোটের তিন শরিক দলই বাংলায় পরস্পরের বিরুদ্ধে যুযুধান। বাম-কংগ্রেস কিংবা তৃণমূল-কংগ্রেস এর আগে জোট গঠন করলেও, সিপিআইএম এবং তৃণমূল কংগ্রেসের জোট – বাংলায় প্রায় অভাবনীয় বিষয়।

 

 

আসলে তিন সভায় জোটের নাম, যৌথ কর্মসূচি, সোশ্যাল মিডিয়ায় যৌথ প্রচারের মতো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিলেও, ইন্ডিয়া জোট এখনও আসন ভাগাভাগির মতো গুরুত্বপূর্ণ অথচ অস্বস্তিকর বিষয়ের সমাধান করতে পরেনি। বিশেষ করে জটিল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বাংলায়। এই অবস্থায় কলকাতায় ইন্ডিয়া জোটের সভা হলে, তৃণমূল এবং বাম নেতাদের একই মঞ্চে থাকতে হবে। বাংলার রাজনীতির প্রেক্ষিতে, যা তাদের পক্ষে অত্য়ন্ত অস্বস্তিকর হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বাম নেতারা। সিপিআইএম দলীয় সূত্রে খবর, তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে জোট একেবারেই মানতে নারাজ বাংলার নেতা-কর্মীরা। এই অবস্থায় তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে মঞ্চ ভাগাভাগি করলে দলই উঠে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বাম নেতারা।

 

 

বস্তুত ইতিমধ্যে তার ইঙ্গিতও পাওয়া গিয়েছে। মুম্বইয়ের মঞ্চে তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে, সিপিআই নেতা ডি রাজার আলিঙ্গনের ছবি মোটেই ভালভাবে নেননি বাংলার সিপিআই নেতারা। দুই তরুণ নেতা সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, এই ছবি তাদের লজ্জিত করেছে। কলকাতায় একই মঞ্চে বাম-তৃণমূল নেতাদের দেখা গেলে, প্রতিবাদটা আর সোশ্যাল মিডিয়ায় নয়, একেবারে রাস্তায় নেমে আসতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বাম নেতারা। আসলে, বিজেপিকে পরাজিত করতে ইন্ডিয়া জোট গঠন হলেও, বাংলায় তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বাঁধার বিষয়ে একেবারেই নারাজ বাম নেতা-কর্মীরা। তাদের এই মনোভাবের আঁচ পেয়েই কলকাতায় ইন্ডিয়া জোটের সভা করার বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছেন ইয়েচুরি, এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

See also  রামনবমী উপলক্ষে বিরাট বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা

 

 

তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে অবশ্য, বামেদের সঙ্গে মঞ্চ ভাগ করার বিষয়ে এতটা ছুত্‍মার্গ নেই। সূত্রের খবর, ঘরোয়া আলোচনায় তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব জানিয়েছে, “কলকাতায় বৈঠকে অসুবিধা কোথায়? কেরলে বৈঠক হলে কি আমরা যাব না?” তবে, বাংলার বুকে ইন্ডিয়া জোটের সভা তৃণমূলের সমস্যাও বাড়াতে পারে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। শোনা যাচ্ছে, বাংলায় আসন ভাগাভাগি নিয়ে জোর সমস্যায় পড়েছে ইন্ডিয়া জোট। তৃণমূল কংগ্রেস চায় বাংলার সব আসনেই প্রার্থী দিতে। বামেদের একটিও আসন ছাড়তে তারা রাজি নয়। কংগ্রেসকে বড়জোর মালদা ও বহরমপুর – এই দুটি আসন ছাড়তে পারে ঘাসফুল শিবির। কংগ্রেসের যদিও দাবি মালদা-মুর্শিদাবাদের সব আসন এবং রায়গঞ্জ। এই অবস্থায় বাংলায় ইন্ডিয়া জোটের সভা করলে, আসন ভাগাভাগির প্রশ্নটা বড় হয়ে উঠবে। আসন ছাড়তে বাধ্য হতে পারে তৃণমূল কংগ্রেস। যা তৃণমূল নেতৃত্বের নাপসন্দ।

 

 

এই অবস্থায় শোনা যাচ্ছে, ইন্ডিয়া জোটের পরের বৈঠক হতে পারে নয়া দিল্লিতে। কিন্তু, বাংলার অস্বস্তি থেকেই যাচ্ছে। তবে কলকাতায় যে কখনই বৈঠক হবে না, তারও কোনও নিশ্চয়তা নেই। লোকসভা নির্বাচনের আগে এখনও অন্তত ৫ মাস সময় রয়েছে। এর মধ্যে কোনও একটি বৈঠক কলকাতার বুকে দেখা যেতেই পারে। তবে, কলকাতায় জোটের বৈঠকের সম্ভাবনা নিয়ে সিপিআইএম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, “এখানে এমন কোনও বৈঠক হবে কি না জানি না। যাঁরা বিষয়টি দেখছেন, তাঁরাই ভেবে দেখবেন। তবে যে যে রাজ্যে জোট নিয়ে সমস্যা আছে, সেই রাজ্যগুলিত এই ধরনের বৈঠক না হওয়ারই কথা।” কাজেই কলকাতায় বৈঠক হলেও, সেই বৈঠকে বামেরা যোগ দেবে কিনা, সেই নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। কাজেই, এখনও অবধি ইন্ডিয়া জোটে কাঁটার মতো বিঁধছে কলকাতা।

krishna Saha

আমার নাম কৃষ্ণ কুমার সাহা, আমি ফুল টাইম সাংবাদিকতা করি।গত ৮ বছর ধরে এই পেশায় আছি