প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় ( বর্ধমান ) :- কলেজ কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে মেধাবী ছাত্রের লেখাপড়া শেখার ভবিষ্যৎ। ছাত্রটি এই ঘটনার প্রতিবাদে সরব হতেই তাকে পুলিশ দিয়ে শায়েস্তা করার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠলো পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ার চন্দ্রপুর কলেজের প্রিন্সিপালের বিরুদ্ধে।ঘটনার বিহিত চেয়ে চন্দ্রপুর কলেজের বিএ দ্বিতীয় বর্ষের ইংরাজি অনার্সের ছাত্র অরুণাভ সামন্ত প্রশাসন , বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এমনকি ‘দিদিকে বলো’তে ফোন করে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছে। কিন্তু ,কোন সুরাহার ব্যবস্থা না হওয়ায় হতাশ ছাত্র সোশ্যাল মিডিয়ায় বার্তা দিয়েছে ’সুরাহার ব্যবস্থা না হলে সে ’আত্মহত্যার’ পথ বেছে নিতে বাধ্য হবে’ । যা প্রকাশ্যে আসতেই তুমুল শোরগোল পড়ে গিয়ছে কাটোয়ার চন্দ্রপুর কলেজের শিক্ষক , ছাত্র-ছাত্রী ও অবিভাবক মহলে ।
ছাত্র অরুণাভ সামন্তর বাড়ি পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বরের পিপলন পঞ্চায়েতের করন্দা গ্রামে । তাঁর বাবা অমলেন্দু সামন্ত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ।
ছোট একটি দোকান চালিয়ে সামান্য যেটুকু রোজগার হয় তা দিয়েই তিনি কোনরকমে সংসার চালান । অরুণাভর মা রুপাদেবী সাধারণ গৃহবধূ ।সম্প্রতি অরুণাভর বাবা হৃদ রোগে আক্রান্ত হন। সেই কারণে এখন অরুণাভকেই বাবার দোকান সামলানোর পাশাপাশি পড়াশুনাও সামলাতে হচ্ছে।
ছাত্র অরুণাভ জানিয়েছে,করোনা অতিমারির মধ্যেই তাঁদের কলেজে বিএ ইংরাজি অনার্সের দ্বিতীয় সিমেস্টারের পরীক্ষা হয় ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে। পরীক্ষার অ্যাডমিট কার্ড পাওয়ার জন্য বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশে ওই বছরের ১০ নভেম্বর কাটোয়ার চন্দ্রপুর কলেজে অনলাইনে ফর্ম ফিলাপ হয়।অরুণাভ জানিয়েছে,সহপাঠীদের সঙ্গে ওইদিন সেও কলেজে গিয়ে সমস্ত প্রসিডিওর মেনে অনলাইনে ফর্ম ফিলাপ করে । এরপর ওই বছরের ২৩ ডিসেম্বর সহপাঠীদের সবার অ্যাডমিট কার্ড আসলেও শুধুমাত্র তাঁর অ্যাডমিট কার্ড আসে না ।
এর কারণ জানতে অরুণাভ কলেজ কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হয় । তখন কলেজ কর্তৃপক্ষ তাঁকে জানায় তাঁর ফর্ম ফিলাপটাই নাকি হয়নি। সেই কারণে অ্যাডমিট কার্ডও আসেনি । এমনটা শুনে মাথায় হাত পড়ে যায় ছাত্র অরুণাভর ।সে কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছিলনা কলেজে গিয়ে সহপাঠীদের সঙ্গে একসাথে বসে সমস্ত প্রসিডিওর মেনে অনলাইনে ফর্ম ফিলাপ করার পরেও কিভাবে বলা হচ্ছে সে ফর্ম ফিলাপ করেনি ।অরুণাভ জানিয়েছে , সে যে প্রকৃতই পরীক্ষা দিয়ে , ফর্ম ফিলাপও করেছে সেই সংক্ষান্ত সমস্ত নথিপত্র তাঁর কাছে আছে ।যাতে কলেজ কর্তৃপক্ষের স্বাক্ষর ও সিল মোহর পর্যন্ত দেওয়া রয়েছে ।
অরুণাভ আরো জানিয়েছে, এই বিষয়টি সে লিখিত ভাবে কলেজের প্রিন্সিপাল কার্তিক চন্দ্র সামন্তকে জানায়।সেই আবেদন পত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ’কন্ট্রোলার অফ এক্সাম’ কে ফরওয়োর্ড করেন কলেজের প্রিন্সিপাল। তাতে তিনি মিথ্যা করে লেখেন ,“ আবেদনকারী ছাত্র ফর্ম ফিলাপের দিন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কলেজে উপস্থিত না হতে পারার কারণে ফর্ম ফিলাপ করতে পারেনি ।সেই কারণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হোক।”অরুণাভকে এমন ফরওয়ার্ডিং লেখা চিঠি হাতে ধরিয়ে দিয়ে কলেজের প্রিন্সিপাল তাঁকে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের কন্ট্রোলারের কাছে গিয়ে দেখা করতে বলেন । অরুণাভ জানিয়েছেন, কন্ট্রোলারের সেক্রেটারি তাকে স্পষ্ট জানিয়েদেন, এইসব বিষয়ে কথা বলতে প্রিন্সিপালকে আসতে হবে ।তাঁকে ফেরৎ পাঠিয়ে দেন কন্ট্রোলারের সেক্রেটারি । ছাত্রের অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কলেজে ফিরে গিয়ে সে এইসব সবিস্তার কলেজের প্রিন্সাপাল কে জানায় । কিন্তু প্রিন্সাপাল তার জন্য কিছুই করেন না । এই বিষয়ে সুরাহা পাওয়ার জন্য সে ’ দিদিকে বলো ’ নম্বারে একাধীকবার ফোন করেও সব তথ্য পাঠিয়েছে । কিন্তু সুরাহার কোন ব্যবস্থা এখনও অবধি হয়নি । তাঁর অ্যাডমিট কার্ডও আর আসেনি।অরুনাভ বলেন , এরই মধ্যে গত মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষার যে রেজাল্ট বের করেছে তাতে তাঁর নামও নেই ।শুধুমাত্র কলেজ কর্তৃপক্ষের গাফিলতির জন্য তাঁর একটা ‘সিমেস্টার’ নষ্ট হল।তাঁকে ব্যাক ক্যানডিডেট হিসাবে গন্য করা হবে ।
অরুণাভর অভিযোগ সোশ্যাল মিডিয়ায় সে কলেজ কর্তৃপক্ষের গাফিলতির সবিস্তার তুলে ধরতেই প্রিন্সিপাল চটে গিয়েছেন । সোশ্যাল মিডিয়ায় করা পোস্ট প্রত্যাহার করে না নিলে পুলিশ দিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে প্রিন্সিপাল এখন তাঁকে হুমকি দিচ্ছেন ।ন্যায় বিচার না মিললে আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না বলে ছাত্র অরুণাভ সামন্ত এদিন জানিয়ে দিয়েছে ।
যদিও ছাত্র অরুণাভ সামন্তর আনা অভিযোগ মানতে চাননি চন্দ্রপুর কলেজের প্রিন্সিপাল কার্তিক চন্দ্র সামন্ত । তিনি জানিয়েছেন ,
“অনলাইনে ফর্মফিলাপের জন্য ১০,১৬,১৯ ও ২৩ নভেম্বর দিন নির্দিষ্ট হয়েছিল । অরুণাভ সামন্ত ওই নির্দিষ্ট দিন গুলিতে অনলাইনে ফর্ম ফিলাপ করেনি বলে কলেজের স্টাফের কাছ থেকে তিনি জেনেছেন। তবে ফর্ম ফিলাপের জন্য ধার্য টাকা যে ছাত্রটি জমা দিয়েছিল তা প্রিন্সিপাল এদিন স্বীকার করে নিয়েছেন । প্রিন্সিপাল আরো বলেন ,২৫ নভেম্বর অরুণাভ কলেজে এসে তাঁকে জানায় তাঁর অনলাইনে ফর্ম ফিলাপ হয়নি। একইসঙ্গে প্রিন্সিপাল এও বলেন , টেকনিক্যাল ফল্টের কারণেও উদ্ভুত সমস্যা তৈরি হয়ে থাকতে পারে । তবে ছাত্রের ভবিষ্যৎতের কথা ভেবে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন । আশা করছেন সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।তবে একটু সময় লাগবে । পুলিশকে
দিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকির অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রিন্সিপাল বলেন,’আত্মহত্যা’ করতে হবে বলে ছাত্র অরুণাভ যে বক্তব্য লিখেছে তার প্রতিবাদ তিনি করেছেন । কারণ প্রকাশ্যে কেউ ’আত্মহত্যার’ হুমকি দিতে পারেনা । এটা বেআইনি । ”
ছাত্র অরুণাভর বাবা অমলেন্দু সামন্ত ও সহপাঠীরা অবশ্য দাবি করেছেন প্রিন্সিপাল গাফিলতির দায় এড়াতে দ্বিচারী কথাবার্তা বলছেন। বিশ্ববিদ্যলয় কর্তৃপক্ষের বক্তব্য সঠিক কারণ না জেনে তারা এই বিষয়ে এখনই কোন মন্তব্যে যাবেন না ।
krishna Saha
আমার নাম কৃষ্ণ কুমার সাহা, আমি ফুল টাইম সাংবাদিকতা করি।গত ৮ বছর ধরে এই পেশায় আছি