দুর্গা পূজার উৎসবের সময়ে যেখানে আনন্দে মেতে ওঠার কথা, সেখানে পূর্ব বর্ধমানের কিছু গ্রামের মানুষের জীবনে নেমে এসেছে চরম দুঃখ। জামালপুর ব্লকের শিয়ালী ও কোরা গ্রামের বাসিন্দাদের জন্য এই বছরের দুর্গা পুজো কোনও আনন্দের বার্তা নিয়ে আসেনি। বন্যার জল তাঁদের ঘরবাড়ি ধ্বংস করে দিয়েছে, ফসল নষ্ট করেছে এবং জীবনযাপনের কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।
দামোদরের প্রলয়: গ্রামবাসীর দুর্দশার কারণ
দুর্গা মায়ের আগমনের আগে শুরু হয় একটানা ভারী বৃষ্টিপাত। এই বৃষ্টির কারণে দামোদরের জল বিপদসীমা পেরিয়ে যায়, ডিভিসি জল ছাড়ার ফলে আরও বাড়ে ক্ষতির পরিমাণ। শিয়ালী ও কোরা গ্রামের নিম্নাঞ্চল হওয়ায় নদীর জল ভেঙে ফেলে তাদের ঘরবাড়ি, সম্পদ এবং চাষের জমি। বন্যার তাণ্ডব থেকে রক্ষা পেতে তাঁদের বাধ্য হয়ে আশ্রয় নিতে হয় বাঁধে।
গ্রামবাসীর বর্ণনা: বেঁচে থাকার সংগ্রাম
শিয়ালী ও কোরা গ্রামের বহু বাসিন্দা নিজেদের জীবনের করুণ কাহিনী জানাতে গিয়ে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি। গ্রামবাসী মেনকা বাউরি বলেন, “প্রতি বছর বন্যা ও ভাঙনের কারণে আমাদের দুর্দশা বাড়ে। এ বছর বন্যার ফলে আমাদের ঘরবাড়ি একেবারে ধ্বংস হয়ে গেছে।”
ক্ষতি মোকাবেলায় সরকারের ভূমিকা
সরকারি সহায়তার দাবি: পাকা বাড়ির আশায় প্রার্থনা
দুই গ্রামের মানুষ এখন দেবী দুর্গার কাছে প্রার্থনা করছেন, যাতে তাঁরা সরকারি আবাস যোজনার একটি পাকা বাড়ি লাভ করেন। তাঁদের আশা, সরকার ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য দ্রুত পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করবে। শিয়ালী ও কোরা গ্রামের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, “পুজোয় নতুন জামা কাপড় কেনা তো দূরে থাক, আমাদের এখন ঘর বাসযোগ্য করাই প্রধান চ্যালেঞ্জ।”
জেলাশাসকের প্রতিশ্রুতি: পুনর্বাসনের সম্ভাবনা
শিয়ালী ও কোরা গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের নাম বাংলা আবাস যোজনার তালিকায় তোলার জন্য জেলাশাসক আয়েষা রাণী এ নির্দেশ দিয়েছেন। এর ফলে কিছুটা হলেও গ্রামবাসীরা আশার আলো দেখছেন। দ্রুত ক্ষতিপূরণ না পেলে তাঁদের ঘুরে দাঁড়ানো খুবই কঠিন হবে বলে মনে করছেন বিকাশ রায় ও বাবলু বাউরির মতো স্থানীয়রা।
উপসংহার: পুজোর আনন্দের অভাব
বন্যার কারণে পুজোর আনন্দ এবছর শিয়ালী ও কোরা গ্রামের বাসিন্দাদের কাছে ফিকে হয়ে গেছে। বাবলু বাউরির মতো অনেকেই বলেছেন, “আমাদের পুজোতে আনন্দ করার কোনো সৌভাগ্য নেই।” তাই এ বছর পুজো তাঁদের কাছে শুধুমাত্র টিকে থাকার লড়াইয়ের আরেকটি অধ্যায়।