প্রদীপ চট্টোযাধ্যায় বর্ধমান ২৯ মার্চ
সিনেমার সুটিং হবে।তাই রেলযাত্রীদের অজ্ঞাতেই
রাতারাতি বদলে দেওয়া হল আস্ত একটা স্টেশনের নাম। পূর্ব রেলের বর্ধমান-রামপুরহাট রেল শাখার “বনপাস” স্টেশনের নাম পাল্টে করে দেওয়া হয়েছে “পাহাড়গঞ্জ হল্ট“।আর এই নিয়ে বেজায় চটেছেন রেলযাত্রী থেকে শুরু করে এলাকার মানুষজন।আগাম কোন ঘোষনা বা নির্দেশিকা ছাড়া রেল দফতর কি ভাবে স্টেশনের নাম বদলের
অনুমোদন দিয়েদিল তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন যাত্রীরা। এই বিষয়টি নিয়ে পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন,“ওখানে তিন
দিন শুটিং হবে।তবে তা নিয়ে সমস্যা হয়ে থাকলে দেখছি’।
কোন দেশাত্ববোধক সিনেমার সুটিং নয়।সুটিং হচ্ছে
পরিচালক পৃথা চক্রবর্তীর পরিচালনায় একটি প্রেমের ছবির। বাংলা এই ছবির নামকরণ করা হয়েছে ‘পাহাড়গঞ্জ হল্ট’। পৃথার এই নতুন ছবিতে জুটি বেঁধেছেন ঋত্বিক চক্রবর্তী এবং পাওলি দাম। এছাড়াও এই ছবিতে অভিনয় করছেন খরাজ মুখোপাধ্যায়, শান্তিলাল মুখোপাধ্যায়, বাসবদত্তা চট্টোপাধ্যায়, সোহাগ সেনের মতো অভিনেতারা।
রেলের অনুমতি নিয়ে ২৮ মার্চ থেকে ৩০ মার্চ,এই তিনদিনের সুটিংয়ের জন্য পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের ’বনপাস’ স্টেশনে সেট সাজিয়েছেন পরিচালক। প্রেমের এই ছবির সুটিংয়ের জন্যই
এখন নিজস্ব পরিচিতি হারিয়ে ’বনপাস’ স্টেশন
হয়েগেছে “পাহাড়গঞ্জ হল্ট“। আর তা নিয়েই এলাকাবাসী ও যাত্রী সাধারণের মধ্যে তৈরি হয়েছে
অসন্তোষ।
স্টেশনের নাম বদল নিয়ে যাত্রী অসন্তোষের বিষয়টি জানতে পেরে বনপাস স্টেশনের ম্যানেজার আনন্দ কুমার জানান,“এখানে সুটিংয়ের জন্য চিত্র নির্মাতা রেলের উচ্চ আধিকারিকের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছেন।২৮ মার্চ থেকে ৩০ মার্চ এই তিনদিনের জন্য এখানে সিনেমার শুটিং হবে। তাই স্টিকার দিয়ে এই স্টেশনের নাম লেখা হয়েছে ’পাহাড়গঞ্জ হল্ট’।সকাল ৭ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত এখানে শুটিং হচ্ছে। স্টেশন বুঝতে যাতে যাত্রীদের কোন অসুবিধা না হয় তার জন্য ট্রেন গুলি এখানে বেশি সময়ের জন্য স্টপেজও দেওয়া হচ্ছে“।
স্টেশন ম্যানেজার এমনটা জানালেও গোল বেঁধেছে অন্য জায়গায়।বনপাস স্টেশন সংলগ্ন বিল্বগ্রামের বাসিন্দা অসিত ভট্টাচার্য্য বলেন,“কোন এক সিনেমার শুটিং হবে বলে কয়েকদিনের জন্য ’বনপাস’ স্টেশনের নাম রাতারাতি পাল্টে “পাহাড়গঞ্জ হল্ট’ স্টেশন করে দেওয়া সল।” খুব ভালো কথা।কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়,এই নিয়ে রেলের দায়িত্বশীল জনসংযোগ বিভাগ আগাম প্রচার করলো না,কোন নির্দেশিকাও দিল না। কেন আগাম প্রচারের দরকার ছিল অবশ্য বোঝা উচিৎ ছিল পূর্ব রেলের জনসংযোগ আধিকারিক বা সেফটি অফিসার বা রেল কর্তৃপক্ষের ।আগাম প্রচার তাকলে যাত্রীদের হয়রানির শিকার হতে হত না ,অসন্তোষও তৈরি হত না। রেল তো কেবল লাভার্জনের জায়গা নয়,ভারতীয় রেল সেবামূলক প্রতিষ্ঠানও বটে ।যাত্রীদের নির্বিঘ্নে পরিষেবা দেওয়াটা যে ভারতীয় রেল দফতরের একমাত্র লক্ষ্য সেটা রেলওয়ে আইনেও বলা আছে।বনপাস স্টেশঢের নাম বদলের জন্য স্থানীয়রা বিস্মিত হলেও অপরিচিত রেল যাত্রীরা বেজায় অসুবিধার সম্মুখীনই হচ্ছেন বলে অসিত ভট্টাচার্য্য দাবি করেছেন“।
বনপাস এলাকার বাসিন্দা অশোক সর বলেন,“স্টেশনের টিকিট কাউন্টারে টিকিট কাটতে গেলে আমাদের সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। শুটিংয়ে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা রক্ষীরা বাধা দিচ্ছে। এমনকি ট্রেন ধরার জন্য প্লাটফর্মে গেলে সেখানেও নিরাপত্তা কর্মীরা সমস্যা সৃষ্টি করছে“।
এ নিয়ে শুটিংয়ের প্রোডাকশন ম্যানেজার বাপ্পাদিত্য বাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে রীতিমত তিরিক্ষি মেজাজে তিনি উত্তর দেন, “এলাকায় আপনারাই ভুল বার্তা ছড়াচ্ছেন“।
প্রোডাকশন ম্যানেজার যাই উত্তরই দিন না কেন রেল স্টেশনে সিনেমার সুটিং নিয়ে অসন্তোষের কথা সামাজিক মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়েছে। এলাকার বাসিন্দা অসিত ভট্টাচার্য সামাজিক মাধ্যমে গোটা বিষয়টি তুলে ধরেছেন।তিনি উল্লেখ করেছেন, ,বনপাস স্টেশনের মাধ্যমে প্রতিদিন এলাকার ১০ থেকে ১২ টি গ্রামের কয়েক হাজার বাসিন্দা ট্রেনে যাতায়াত করেন।তবুও স্টেশন থেকে মূল রাস্তায় যাওয়ার পথ খানাখন্দে ভরা।ভাঙাচোরা রাস্তা দিয়েই যাত্রীদের নিত্যদিন স্টেশনে যাতায়াত করতে হয়।কোভিডের পর তিনটি লোকাল ট্রেনকে এক্সপ্রেস ট্রেনে উন্নীত করা হয়।
তার জন্য দশ টাকার জায়গায় ভাড়া বেড়ে হয়েছে ৩০ টাকা।তবুও তিনটি ট্রেন বিশ্বভারতী, জয়নগর ও তিনপাহাড় লোকাল ট্রেন হিসেবেই চলে।।মালদা প্যাসেঞ্জার ট্রেন কোভিডের সময় বন্ধ হয়। তার পর থেকে এখনো চালু হয়নি। এই বিষয়ে অসিত বাবু রেলের উদাসীনতাকেই দায়ী করেন।