আবহাওয়া দক্ষিণবঙ্গ শিক্ষা লাইফ স্টাইল স্বাস্থ্য ভ্রমন ধর্ম কৃষি কাজ ক্রাইম

রেল সহ কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারি দপ্তরে চাকরি দেওয়ার নামে বড়সড় প্রতারণা চক্রের পর্দা ফাঁস করলো রেলওয়ে প্রটেকশন ফোর্স- বর্ধমানে গ্রেপ্তার ৭ প্রতারক

krishna Saha

Published :

WhatsApp Channel Join Now

প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় বর্ধমান ১৩ সেপ্টেম্বর

শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে জেরবার বাংলার প্রশাসন। দুর্নীতি কাণ্ডে নাম জড়ানোয় রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষা মন্ত্রী সহ শিক্ষা দফতরের একাধীক কর্তার এখন ঠাঁই হয়েছে গারদে।এমন এক আবহে রেল সহ বিভিন্ন কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারি দপ্তরে চাকরি দেওয়ার নামে এই রাজ্যে সক্রিয় থাকা এক প্রতারণা চক্রের পর্দা ফাঁস করলো বর্ধমান রেলওয়ে প্রটেকশন ফোর্স । শুধু পর্দা ফাঁস করাই নয়,প্রতারণা চক্রের সাত রাঘববোয়ালকে আপিএফ গ্রেপ্তার করে তদন্তের জন্য মঙ্গলবার রাতে বর্ধমান থানার পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে। পৃথক মামলা রুজু করে বর্ধমান থানার পুলিশ বুধবার সাত ধৃতকে পেশ করে বর্ধমান আদালতে ।

 

 

পুলিশ ও আরপিএফ সূত্রে জানা গিয়েছে,ধৃতরা হল বর্ধমান শহরের দুবরাজদিঘির বাসিন্দা জিন্নাত আলী ওরফে বাবর।বর্ধমান শহরের ৩ নম্বর ইছলাবাদের বাসিন্দা অরূপ রতন মণ্ডল।বর্ধমান শহরের বড়নীলপুরের বাসিন্দা ৬৪ বছর বয়সী রঞ্জিত কুমার সর্বজন।কাটোয়ার সরগ্রাম এলাকার
বিবেকানন্দ মুখার্জি । গলসির কোলকোল গ্রাম নিবাসী তারাশঙ্কর কুণ্ডু।এরা ছাড়াও ধৃতদের মধ্যে রয়েছে বর্ধমান শহরের ১২৩ মিঠাপুকুরের বাসিন্দা প্রতুল কুমার রায় ও দেওয়ানদীঘি থানার নুতনগ্রামের বাসিন্দা ফজলু শেখ। ধৃত জিন্নাত আলী প্রতারণা চক্রের মূল পাণ্ডা বলে আরপিএফ কর্তাদের কথায় জানা গিয়েছে।বর্ধমান আদালতের বিচারক জিন্নাত আলীর ৮ দিনের পুলিশ হেপাজতে এবং বাকি ধৃতদের জেল হেপাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।

 

 

আরপিএফের দাবি ধৃতদের কাছ থেকে প্রচুর নথি ও মোবাইল ফোন উদ্ধার হয়েছে। যে সমস্ত জিনিস উদ্ধার হয়েছে সেগুলো হল, টিসি/টিই (গ্রুপ-সি) পদের জন্য দেবজিত মালি নামে এক প্রার্থীর জন্য তৈরি করা তিন পাতার একটি জাল নিয়োগপত্র। ৩টি জাল খালি পরিষেবা বই। ভারতীয় রেলের গ্রুপ-ডি পদের জন্য ৬টি জাল নিয়োগ ফর্ম। ৭টি জাল আরআরবি ওএমআর (RRB OMR) উত্তরপত্র। ১টি জাল জয়েনিং রেজিস্টার। ১জন প্রার্থীর জাল ফিঙ্গার প্রিন্ট রেজিস্টার। ১টি জাল হাজিরা রেজিস্টার। ৩টি ৪ পাতার প্রশ্নপত্র। ৩টি আইডি কার্ড পাওয়ার আবেদনপত্র। ১টি রাবার স্ট্যাম্প, যেটি সেক্রেটারি আরআরসি কলকাতা ইস্টার্ন রেলওয়ে চিৎপুর কল-৩৭ এর নামে তৈরি করা হয়েছে। ১টি সিনিয়র পার্সোনাল অফিসার রেলওয়ে রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের রাবার স্ট্যাম্প। ১টি ভারতীয় রেলওয়ের স্ট্যাম্প এবং ১টি ফেবার ক্যাসেলের স্ট্যাম্প প্যাড। বাজেয়াপ্ত হওয়া এইসমস্ত কিছু ধৃত জিন্নাত আলীর দায়িত্বেই ছিল বলে আরপিএফের তরফে দাবি করা হয়েছে।তদন্তের প্রয়োজনে ধৃতদের প্রত্যেকের কাছে থাকা মোবাইল ফোন পুলিশ বাজেয়াপ্ত করেছে।

See also  স্কুলের তহবিলে ৫০০ টাকা জমা না দিলে উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণরা স্কুল লিভিং সার্টিফিকেট পাবে না স্কুলের প্রধান শিক্ষকের এমন নির্দেশে ছড়িয়েছে ক্ষোভ

 

 

আরপিফ কর্তাদের প্রতারণা চক্রের পর্দা ফাঁস করার বিষয়টিও যথেষ্ট চমকে দেওয়ার মতই । আরপিএফ অফিসার আশিষ কুমার জানিয়েছেন, ক্রাইম ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ মারফত বর্ধমানে একটি ভুয়ো চাকরি চক্রের কর্মসূচির বিষয়ে খবর আসে । তার ভিত্তিতে মঙ্গলবার দুপুর প্রায় সাড়ে ১২টা থেকে বর্ধমান রেলওয়ে ইনস্টিটিউটের ওপর নজরদারি শুরু করে আরপিএফের স্পেশাল টিম।সেখানে হলের দরজা বন্ধ করে অভিযুক্তরা যখন ভিতরে প্রার্থীদের ট্রেনিং দেওয়ার নামে নিজেদের কাজকর্ম করছিল সেইসময় আরপিএফের আচমকা অভিযান চালায়।তাতে গাবড়ে গিয়ে প্রতারকরা হল ঘরের টেবিলে রাখা বেশ কিছু নথি সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। তা করতে না দিয়ে কিন্তু আরপিএফের অফিসাররা হল ঘরের ভিতরে থাক সাত প্রতারককে হাতেনাতে ধরে ফেলে।পাশাপাশি প্রতারকদের কাছে থাকা সমস্ত নথি আরপিএফ অফিসারা বাজেয়াপ্ত করে ।জেরার
প্রতারণা চক্রের মূল পাণ্ডা জিন্নাত আলী তাদের প্রতারণা কাণ্ডের বিষয়ে সবকিছু স্বীকার করে নেয়।

 

 

ধৃতদের জিজ্ঞসাবাদ চালিয়ে আরপিএফ কর্তা এও জানতে পারেন,টাকার বিনিনয়ে রেলের গ্রুপ-সি এবং গ্রুপ-ডি পদে চাকরির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল বেশ কিছু প্রার্থীদের।রেলে নিয়োগের জন্য তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য মঙ্গলবার বর্ধমানের রেলওয়ে ইনস্টিটিউটে একত্রিত করা হয়েছিল। বআউশগ্রাম, বুদবুদ, কেতুগ্রাম প্রভৃতি এলাকা থেকে আসা প্রার্থীরা সকলেই জানিয়েছেন, এই চক্রের পাণ্ডারা তাদের জানিয়েছিল, রেলের গ্রুপ ডি ও সি পদের চাকরির জন্য ৫ লাখ টাকা করে দিলেই চাকরি হয়ে যাবে। সেই মতো অনেকেই গত এক বছরে ধাপে ধাপে প্রায় এক লক্ষ টাকা করে প্রতারকদের মিটিয়ে দিয়েছে। কিন্তু চাকরি তো দূরের কথা, মাসের পর মাস তাদের সঙ্গে শুধু ছলচাতুরি করে আসছিল প্রতারকরা। প্রার্থীরা এও জানিয়েছে,চাকরির আশায় তারা যে প্রতারণা চক্রের ফাঁদে পা দিয়ে ফেলেছে তা তারা বুঝতে পারে নি।টাকাটা ফেরৎ না পেলে তাদের ঘোর বিপাকে পড়তে হবে বলে চাকরি প্রার্থীরা জানিয়েছে।

See also  এলাকায় নিরাপত্তা নিয়ে বিশেষ উদ্যোগী বড়বাবু

 

পুলিশ জানিয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদে জিন্নত আলী স্বীকার করেছেন, এক বছর ধরে সে তার টিম নিয়ে এই বেআইনি কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছে।
তার চক্রের সঙ্গে যুক্ত ধৃত ব্যক্তিরা বিভিন্ন দায়িত্ব ভাগ করে কাজ করতো। এই প্রতারণা চক্রের জাল কতদূর বিস্তৃত রয়েছে,চক্রে আর কারা কারা যুক্ত রয়েছে এবং কত জন এই প্রতারকদের খপ্পরে পড়ে প্রতারিত হয়েছে তা পুলিশ খতিয়ে দেখছে।

krishna Saha

আমার নাম কৃষ্ণ কুমার সাহা, আমি ফুল টাইম সাংবাদিকতা করি।গত ৮ বছর ধরে এই পেশায় আছি