আবহাওয়া দক্ষিণবঙ্গ শিক্ষা লাইফ স্টাইল স্বাস্থ্য ভ্রমন ধর্ম কৃষি কাজ ক্রাইম

রঘু ডাকাতের হাত ধরে

krishna Saha

Published :

WhatsApp Channel Join Now

রথীন রায়:- শোনা যায়, চন্দননগরের অনতি দূরে হুগলির বাঁশবেড়িয়ায় এক সময়ের ত্রাস ছিল রঘু ডাকাত ! নীলকর সাহেবদের হত্যা করে তাদের গাছে ঝুলিয়েও অনেক সময় পালিয়ে যেত এই ডাকাতদল ! সেই সময় বাসুদেবপুরের এক কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে রঘু ডাকাত ! কথিত রয়েছে, সপ্তমগ্রাম বন্দরে কোনও জাহাজ এসে দাঁড়ালেই তা লুঠ করতে রঘু ডাকাতের দল ! ল্যাটা মাছা পোড়া নরবলি দিয়ে রাতের অন্ধকারে ঘোড়া ছুটিয়ে সেই সময় শুরু হত ডাকাতি !

 

 

রঘু ডাকাত থেকে বিশু ডাকাতদের এমনই বহু ইতিহাস জমা হয়ে রয়েছে বাংলার আনাচ কানাচে জুড়ে ! কালীপুজোর সঙ্গে এই বাংলার ডাকাতদের ইতিহাসের যোগ অবিচ্ছেদ্য ! রক্ত চক্ষু মাতৃশক্তির আরাধনায় প্রাণ নিবেদন করলেই লুঠতরাজে সাফল্য আসবে, এমন প্রবাদ সুবিখ্যাত ছিল প্রাচীন বাংলার ইতিহাসের নানা পর্বে ! ডাকাত নামটা শুনলেই কেমন যেন চমকে যায়, কেঁপে ওঠে বুক ! চোখের সামনে ভেসে ওঠে ভয়ঙ্কর চেহারার সব লোক ! খুন,জখম,লুটপাট এর দৃশ্য, কিন্তু এই ডাকাতির চল সাম্প্রতিক কালেই যে শুরু হয়েছে তা নয় ! বহু প্রাচীন কাল থেকেই এই ডাকাতি পেশার উদ্ভব ! কোনো কোন ডাকাতের কাহিনী তো কিংবদন্তীতে পরিণত হয়েছে !

 

 

সেরকমই একজন ডাকাত হলেন রঘু ডাকাত ! আসল নাম রঘু ঘোষ ! সাধারণ মানুষের কাছে গরীবের রবিনহুড ! সময়টা ছিল আজ থেকে দেড়শ-দু’শো বছর আগে ! এদেশে তখন ইংরেজ শাসন, কৃষক দের উপর নীলকরদের জুলুম,অত্যাচার ! রঘু ঘোষ এর ডাকাত হয়ে ওঠার পিছনেও রয়েছে এই নীলকরদের অত্যাচার ! কথিত আছে, নীল কুঠীর পাইক-পেয়াদাদের হাতে মার খেয়েই মারা যান রঘুর বাবা ! কিশোর বয়সে বাবার এই মৃত্যু দেখে প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে ওঠে রঘু ! ভালো লাঠি খেলা জানতেন !

 

সেটাই হয়ে যায় অস্ত্র ! থানায় থানায় গিয়ে আগুন লাগিয়ে দেন, নীলকুঠিতে লুটপাট চালান ! স্থানীয় তরুণদের দলে টানতে উৎসাহিত করতে থাকেন ! স্থানীয়রাও দেখলো, এতদিনে একজন এসেছে যে তাদের নিজেদেরই লোক ! তাদের হয়ে কথা বলছেন,লুটপাটের অর্থ বিলিয়ে দিচ্ছেন ! তাই জনগনের পূর্ন আশীর্বাদ ছিল রঘুর সাথে ! সাধারণ মানুষই ছিল তার প্রেরণা, ছিল তার ঢাল !
রঘু ডাকাতের বাড়ি কোথায় ছিল, কেও তা ঠিকভাবে বলতে পারেনা ! কেও বলে নদীয়া জেলায় কেও বলেন হুগলী ! সে কোন নির্দিষ্ট একটা স্থানে থাকতনা বলে নানা জনে নানা স্থানে তার বাড়ি নির্দেশ করত ! রঘুর এভাবে থাকার প্রধান কারণ ছিল পুলিশের হাতে ধরা পড়বার ভয় !

See also  অনেকটা মধ্যবিত্তের নাগালে সব্জি ও মাছ মাংসের দাম

 

 

ব্রিটিশ সরকার সে সময় রঘু ডাকাতকে ধরবার জন্য অনেক টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছিল ! তখন সরকার ডাকাতদের ধরবার জন্য একটি দপ্তর ও খুলেছিল ! হুগলী,বর্ধমান,নদীয়া, বারাসাত, চব্বিশ পরগনা, হাওড়া, কলকাতা সর্বত্রই ডাকাতির জন্য কী ধনী, কি মধ্যবিত্ত, কি দরিদ্র -কেউই শান্তিতে বাস করতে পারতনা ! সেই সময়ে নৈহাটি থানায় দুর্গাচরণ চক্রবর্তী এবং কদমগাছি থানায় শিবচন্দ্র বন্দোপাধ্যায় নামে দুজন নামকরা দারোগা ছিলেন ! তাঁদের উপর কতৃপক্ষের আদেশ ছিল- যেমন করে হোক রঘু ডাকাতকে ধরতে হবে, কিন্তু একাজ কিছুতেই সম্ভব হচ্ছিলনা ! একটি মজার কাহিনী সোনা যায়- দুর্গা চরণ বাবু একদিন থানায় বসে গড়গড়া টানছেন এবং ডাকাতি নিবারনের পথ খুঁজছেন !

 

 

এমন সময় দেখলেন, একজন জেলে খুব বড় দুটি রুই মাছ মাথায় করে তাঁর কাছে এসে মাছ দুটি থানার বারান্দায় রেখে কাপড়ের খুট থেকে একটি চিঠি বের করল এবং নমস্কার করে চিঠিটা দুর্গা বাবুর হাতে দিল ! চিঠিতে লেখা ছিল- ‘দারোগা বাবু, পৌত্রের অন্নপ্রাসন উপলক্ষ্যে আমার পুস্করিণীতে মাছ ধরেছিলাম ! আপনি আসতে পারবেন না জানিয়েছেন, তাই দুটি মাছ আপনার জন্য লোক মারফৎ পাঠালাম ! লোকটি আমার বিশ্বস্ত প্রজা’ !

 

সুখসাগরের জমিদারের সঙ্গে দারোগা বাবুর খুব বন্ধুত্ব ছিল ! কাজেই তিনি সন্তুষ্ট হয়ে মাছ ওয়ালা কে 2 টাকা দিয়ে বিদায় করলেন ! বললেন তোমার বাবুকে বলো, আমি মাছ পেয়ে খুবই খুশি হয়েছি ! আমি দু’চার দিনের মধ্যেই তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যাব ! এই ঘটনার কয়েকদিন পর দুর্গাচরণ বাবুর কাছে একটা চিঠি এল ! তাতে লেখা ছিল- দারোগা বাবু, আমি বলেছিলাম একদিন আপনার সাথে দেখা করে আসব ! সেদিন দেখা করে এসেছি ! মাছ কেমন খেলেন ? সেবক- রঘু ডাকাত !

 

দুর্গাচরণ বাবু হায় হায় করে বলতে লাগলেন-এমনি করে আমাকে ফাঁকি ! বেটা হাতের কাছে এসে ফসকে গেল ! এরপর ইংরেজ সরকার রঘুকে ধরার জন্য ইনাম ঘোষণা করল ! রঘুকে ধরার জন্য পাগলের মত পরিকল্পনা ছকতে শুরু করল ! রঘু তখন অনন্যোপায় দেখে প্রথমে পাণ্ডুয়া তে আশ্রয় নিল ! পরে একদিন রাত্রে দেবীপুরের পাশে একটি ঘন জঙ্গলে এল ! সেই রাত্রেই সেখানে গ্রাম প্ৰতিষ্ঠা করল ! একটি পূর্ন গ্রামের চেহেরা দেওয়ার জন্য ঘোষাল,চ্যাটার্জি,ভট্টাচার্য্য,মুখার্জী এবং ব্যানার্জী পদবী ধারী পাঁচঘর ব্রাহ্মণ দের রঘু ডাকাত এই গ্রামে নিয়ে আসে ! রাত্রে বা নিশকালে রঘু ডাকাত এই গ্রামের পত্তন করেছিল বলে গ্রামটির নাম হয় নিশিনগর ! পরবর্তীকালে নিশিনগর থেকে হয় নিশরাগড় !!

krishna Saha

আমার নাম কৃষ্ণ কুমার সাহা, আমি ফুল টাইম সাংবাদিকতা করি।গত ৮ বছর ধরে এই পেশায় আছি