পূর্ব বর্ধমান জেলার শিক্ষাক্ষেত্রে অনুপ্রেরণার প্রতীক হয়ে আছেন তিন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক—দ্বিজেন্দ্রনাথ ঘোষ, তাপস কার্ফা ও অরুণ দে। নিজেদের অবসর জীবনেও তাঁরা ছাত্রদের নিঃস্বার্থে শিক্ষাদানে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ, যার জন্য তাঁরা আজ এলাকাবাসীর সম্মাননা ও শ্রদ্ধার জায়গায় অবস্থান করছেন। বাংলায় শিক্ষক নিয়োগের অনিয়মের ছায়া থাকলেও এই শিক্ষকদের নিষ্ঠা তাঁদের আদর্শ শিক্ষকের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে।
বসন্তপুরে শিক্ষার আলো জ্বালিয়েছেন দ্বিজেন্দ্রনাথ ঘোষ
দ্বিজেন্দ্রনাথ ঘোষ, বসন্তপুর গ্রামের বাসিন্দা, ২০০৮ সালে শিক্ষকতা থেকে অবসর নেওয়ার পরেও তাঁর নিজের গ্রামে শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে কাজ শুরু করেন। বসন্তপুরে বিদ্যালয়ের অভাব দূর করার জন্য তিনি ২০১০ সালে একটি জুনিয়র হাইস্কুল স্থাপনে উদ্যোগী হন, যা আজও গ্রামের ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষার প্রাথমিক ভিত্তি হিসেবে কাজ করছে। সরকারি স্থায়ী শিক্ষক না থাকলেও এই স্কুলটি চালু রাখতে এগিয়ে এসেছেন পাঁচজন উচ্চশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবী, যাঁরা দ্বিজেন্দ্রনাথের অনুপ্রেরণায় ছাত্রদের পাঠদান করছেন।
কালনায় শিক্ষারত্ন তাপস কার্ফার অবদান
কালনা মহারাজা উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত জীববিজ্ঞানের শিক্ষক তাপস কার্ফা তাঁর অবসর জীবনের পরও স্কুলে ছাত্রদের শিক্ষাদানে ব্রতী আছেন। “শিক্ষারত্ন” পুরস্কারপ্রাপ্ত এই শিক্ষক নিজের ব্যক্তিগত অর্থে বিদ্যালয়ে দুই লক্ষ টাকা দান করেছেন। পাশাপাশি, তিনি গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় কুসংস্কার বিরোধী সচেতনতার জন্যও প্রচার চালান।
দলুইদিঘিতে শিক্ষাদানে নিবেদিত প্রাণ অরুণ দে
দলুইদিঘি অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অরুণ দে, যিনি বিদ্যালয় ও ছাত্রদের ছেড়ে থাকতে পারেননি। অবসরগ্রহণের পরও তিনি নিয়মিত স্কুলে যান এবং নিজের প্রচেষ্টায় ছাত্রদের পড়ানোর কাজে নিযুক্ত থাকেন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিদ্যুৎ হাজরা বলেন, “অরুণ দে মহাশয়ের এই অবদান বিদ্যালয়ের ছাত্র ও এলাকাবাসীর কাছে গর্বের বিষয়।”
জেলার গর্ব এই তিন শিক্ষক
জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ শান্তনু কোঙার বলেন, “দ্বিজেন্দ্রনাথ ঘোষ, তাপস কার্ফা ও অরুণ দে মহাশয় আমাদের জেলার গর্ব।” এই তিন জন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষককে দেখেই বোঝা যায়, নিষ্ঠা ও আদর্শে পরিপূর্ণ শিক্ষকেরা সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে কতটা কার্যকর।