পশ্চিম এশিয়ার প্রভাবশালী দেশ সৌদি আরবের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করল পাকিস্তান। চুক্তি অনুযায়ী, কোনও একটি দেশ আক্রমণের মুখে পড়লে সেটিকে দুই দেশের বিরুদ্ধেই আক্রমণ হিসেবে গণ্য করা হবে। স্বাভাবিকভাবেই নয়াদিল্লির ওপর চাপ বাড়ল এই নতুন সমঝোতার ফলে। বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে বিদেশমন্ত্রক স্পষ্ট জানাল, পাকিস্তান-সৌদি আরবের এই ঘনিষ্ঠতার দিকে ‘নিবিড় নজর রাখছে ভারত’। পাশাপাশি, জাতীয় স্বার্থ সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে। কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘অপারেশন সিঁদুরে’র পর থেকেই ভারতকে ভয় পাচ্ছে ইসলামাবাদ। তাই কার্যত সৌদিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে তারা।
বুধবার সৌদি আরব সফরে গিয়ে সে দেশের যুবরাজ মহম্মদ বিন সলমনের সঙ্গে বৈঠক করেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। ওই বৈঠকের পরপরই দুই দেশ ‘কৌশলগত এবং পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি’তে স্বাক্ষর করে। এই প্রসঙ্গে বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জওসওয়াল বলেন, “বিষয়টিকে (সৌদি-পাক প্রতিরক্ষা চুক্তি) আমরা জাতীয় নিরাপত্তার পাশাপাশি আঞ্চলিক (এশীয়) ও গ্লোবাল স্বার্থের কথা ভেবেও নজর রাখছি। ভারত সরকার জাতীয় স্বার্থ রক্ষা এবং সকল ক্ষেত্রে জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

জানা যাচ্ছে, দোহায় অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে পাকিস্তান, সৌদি আরব-সহ ৪০টি ইসলামিক দেশ প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে ঐক্যমতে পৌঁছেছিল। বিশেষজ্ঞদের মতে, গত সপ্তাহে কাতারে হামাস নেতাদের উপর ইজরায়েলের আক্রমণের পর থেকেই ইসলামিক দেশগুলির নেতৃত্ব ‘ন্যাটো’র ধাঁচে একটি জোট গঠনের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, পাকিস্তানই একমাত্র ইসলামিক রাষ্ট্র যার হাতে রয়েছে পারমাণবিক অস্ত্র। অন্যদিকে, সৌদি আরব-সহ মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশগুলির আর্থিক ক্ষমতাও ভারতের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে। ফলে সৌদি-পাকিস্তানের এই নতুন প্রতিরক্ষা জোট দিল্লির জন্য উদ্বেগজনক।
সংবাদ সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, পাকিস্তানের সঙ্গে সমঝোতার পর সৌদি আরবের তরফে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া আরও বৃদ্ধি করা হচ্ছে। যে কোনও ধরনের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যৌথ ভাবে লড়বে সৌদি আরব এবং পাকিস্তান।” উল্লেখ্য, ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে টানা চার দিন সামরিক সংঘাত হয়েছিল। তার পর থেকেই আন্তর্জাতিক পরিসরে নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে ইসলামাবাদ। এই প্রেক্ষাপটে সৌদি আরবের সঙ্গে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা চুক্তিকে কূটনৈতিকভাবে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।