কৃষক সেতু, কার্তিক ভাণ্ডারী ,বীরভূম:সারা দেশে রথযাত্রা মানেই জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার শুভ যাত্রা। তবে এই ঐতিহ্য থেকে একেবারেই আলাদা চিত্র ধরা পড়ল বীরভূমের তারাপীঠে। এখানে রথে বিরাজ করেন স্বয়ং মা তারা—রাজবেশে সজ্জিতা, নিজ রথে অধিষ্ঠান করেন তিনি। হাজার হাজার ভক্তের উল্লাস, ঢাক-ঢোল, শঙ্খধ্বনি আর ‘জয় তারা’ জয়ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে গোটা তারাপীঠ।

তারাপীঠ মন্দির কমিটির সভাপতি তারাময় মুখোপাধ্যায় জানান, “রথের দিন বিকেল ৩টে নাগাদ মা তারাকে রাজবেশে সাজিয়ে রথে বসানো হয়। সন্ধ্যা ৬টার সময় তিনি মন্দিরে ফিরে আসেন। তারপর স্নান, সন্ধ্যারতি ও শীতল ভোগ নিবেদন হয়।”
এই ব্যতিক্রমী রথযাত্রার শিকড় বহু প্রাচীন ইতিহাসে প্রোথিত। জানা যায়, ১৭৮০ সালের দিকে নাটোরের রানি ভবানীর দত্তকপুত্র রাজা রামকৃষ্ণ এই রীতির প্রচলন করেন। পরে ভক্ত আশালতা সাধুখাঁ তৈরি করেন ‘রথঘর’, যার উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী অজয় মুখোপাধ্যায়। সেই সময় কাঠের রথে মা তারাকে বসিয়ে গোটা চণ্ডীপুর (বর্তমানে তারাপীঠ) গ্রাম প্রদক্ষিণ করানো হত হরিনাম সংকীর্তন ও ভক্তির ঢেউয়ের মধ্য দিয়ে।
আজও সেই ঐতিহ্য অক্ষুণ্ণ। ভক্তদের বিশ্বাস, মা তারা কালী ও কৃষ্ণ—উভয় রূপেই এখানে বিরাজমান। সেই ভাবধারাতেই রথযাত্রার দুই পর্ব—সোজা রথ ও উল্টো রথ—দুই দিনেই রাজরূপে রথে অধিষ্ঠান করেন তিনি।
এই রথযাত্রা শুধু একটি ধর্মীয় আচার নয়, এটি এক অনন্য সাংস্কৃতিক-আধ্যাত্মিক মিলনের উৎসব। তারাপীঠে মায়ের এই রথযাত্রা এক অপূর্ব অনুভূতির দান করে—যেখানে মিশে যায় পরম বিশ্বাস, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের মহিমা।