চিরায়ত সত্য এটাই যে, যাত্রা বা যাত্রাগান যুগে যুগে মানুষকে আনন্দ দিয়েছে। যাত্রার আসরে শোনা যেত বীর পুরুষদের কাহিনি, রাজা-বাদশাহর যুদ্ধের গল্প। লেখাপড়া না-জানা মানুষ যাত্রাগান শুনে অনেক কিছু শিখত। বুঝতে পারত। দেশপ্রেম ও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উজ্জীবিত হতো হাজার হাজার মানুষ।যাত্রাপালার জন্মকথা বড়ই চমকপ্রদ।বৈদিক যুগে বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের দেব-দেবীর উৎসব হতো।এই যে, দেবদেবীদের উৎসবে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়া- এ ‘যাওয়া’ থেকেই ‘যাত্রা’ কথাটির উৎপত্তি বলে একদল গবেষক মনে করেন।
তবে বর্তমানে যাত্রার যাত্রাপথ খানিকটা বদলেছে।যাত্রার মাধ্যমে ইতিহাসকে তুলে ধরার চাইতে বর্তমান সময়কেই,প্রতিদিনের জীবন,প্রতিদিনের যাপনকে,দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর গল্পকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন পালাকার থেকে যাত্রা শিল্পীরা।

তেমনই এক ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প “আমি বাংলা বাজারের বাদশা”।বস্তির এক সাধারণ ছেলের পথে প্রতিবাদে ঝাঁপিয়ে পড়ার গল্প প্রাপ্তি ও দৃপ্ত চক্রবর্ত্তী নিবেদিত ১৪৩১ সালের মঞ্চ সফল যাত্রা পালা – “আমি বাংলা বাজারের বাদশা”।নাম ভূমিকায় থাকছেন এই সময়ের যাত্রা শিল্পের অন্যতম অভিনেতা কুমার সঞ্জু।হেলায় ছেড়েছেন চাকরি এই মঞ্চের আলোকে ভালোবেসে।মুঠো ভরে কুড়িয়ে নিতে চেয়েছেন – এই বাংলার মানুষের ভালোবাসা। আর এই ভালোবাসার টানে নেশাই আজ পেশা।প্রিয়জনের মৃত্যু শোক ঢেকে রেখে এক অনাবিল আনন্দের জোয়ারে ভাসিয়ে নিয়ে গেছেন দর্শকদের।
অন্যদিকে ভিলেনের চরিত্রে অভিনয় করেও দর্শকের মন জিতে নিয়েছেন তরুণ তুর্কী,দুর্ধর্ষ খলনায়ক ঋত্বিক।
অন্যান্য চরিত্রে রয়েছেন – প্রিয়াংশী,মোহিনী, স্বস্তিকা সহ অন্যান্যরা।পরিবেশনায় – জি নন্দীর স্বর্ণাঞ্জলি অপেরা।
এমন সুন্দর আমার আপনার জীবনের গল্পই বলে “আমি বাংলা বাজারের বাদশা”।কৃষক সেতুর পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা রইল যাত্রার প্রতিটি কুশীলবের প্রতি।হাজার রজনী অতিক্রম করুক এই যাত্রাপালা।