পেয়ারা একটি অধিক সহিষ্ণু এবং দ্রুত বর্ধণশীল গ্রীষ্মকালীন ফল। আমাদের দেশের সর্বত্র কম বেশী এ ফলের চাষ হয়। এই ফল অধিক ভিটামিন সি ও খনিজ লবণে সমৃদ্ধ। এখন পশ্চিমবঙ্গের প্রায় সব জেলাতেই কম-বেশি পেয়ারার চাষ করা হয়। সাধারণত পেয়ারার ফুল নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এখন সারাবছর ধরেই বাজারে পেয়ারা পাওয়া যায়। পেয়ারা চাষ বেশ লাভজনক একটি চাষ। সঠিক পদ্ধতি মেনে পেয়ারা চাষ করলে প্রতি বিঘা জমি থেকে আয় হতে পারে কম করে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা।
জাত নির্বাচন:- আমাদের পশ্চিমবঙ্গে পেয়ারার যে সব জাত ব্যাবসায়িক ভিত্তিতে চাষ করা হয় সেগুলি হল, এল-৪৯, এলাহাবাদ সফেদা, বারুইপুর ও খাজা পেয়ারা। এইসব জাতগুলির মধ্যে খাজা পেয়ারা ব্যাপক হারে চাষ হচ্ছে। এই জাতের ফলের আকার যেমন বড়, দেখতে সুন্দর তেমনই ফলের মধ্যে বীজের সংখ্যাও কম থাকে।
জমি তৈরি:- বন্যামুক্ত উঁচু ও মাঝারী উঁচু জমি পেয়ারা চাষের জন্য নির্বাচন করতে হবে। জমি কয়েক বার চাষ ও মই দিয়ে তৈরী করতে হয়।
গাছ লাগানোর পদ্ধতি:- পেয়ারার ১ বছর বয়সের চারা বর্ষার শুরুতে লাগাতে হবে। গাছ বসানোর ১ মাস আগে গ্রীষ্মকালে ২ ফুট চওড়া, ২ ফুট গভীর ও ২ ফুট লম্বা গর্ত ১৫ ফুট অন্তর অন্তর কাটতে হবে। গর্ত কাটার সময় অর্ধেক উপরিভাগের মাটি একদিকে এবং বাকি অর্ধেক নিচের মাটি গর্তের অন্যধারে রাখতে হবে। গর্ত কাটার ৭-১০ দিন পর প্রত্যেক গর্তে ২০ কেজি পচা গোবর সার ৫০ গ্রাম পটাশ, ১০০ গ্রাম সুপার ফসফেট ও উপরিভাগের মাটি ভাল করে মিশিয়ে ভরে দিতে হবে এবং বাকি গর্তের নিচের মাটিগুলি গর্তের উপরে দিয়ে ঢিপির মতো করে দিতে হবে।
উপযুক্ত পরিবেশ:- সাধারণত উষ্ণ ও অবউষ্ণ মন্ডলের জলবায়ু পেয়ারা উত্পাদনের জন্য উপযোগী। পেয়ারা উত্পাদনের জন্য জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ দোঁআশ মাটি থেকে ভারী এটেল মাটি যেখানে জল নিষ্কাষনের বিশেষ সুবিধা আছে সেখানে ভাল জন্মে।
পরিচর্যা ও সার ব্যবস্থাপনা:- যদিও পেয়ারা গাছ বেশ খরা সহ্য করতে পারে কিন্তু ফলন আশানুরুপ পেতে হলে শুষ্ক মৌসুমে ১৫ দিন পর পর গাছে সেচ দিতে হবে। তাছাড়া প্রতিবার গাছে সার প্রয়োগ করে গাছের গোড়ায় প্রয়োজনীয় রস সরবরাহের জন্য সেচ দিতে হবে। এ ছাড়াও বর্ষা কালে জল নিকাশ ও খরা মৌসুমে নিয়ামিত সেচ প্রদান করতে হবে।
সার প্রদান:- প্রতি গর্তে ১০-১৫ কেজি পঁচা গোবর, ২৫০ গ্রাম টিএসপি ও ২৫০ গ্রাম এমপি সার মিশিয়ে ১৫-২০ দিন পর গর্তের মাঝখানে একটি সুস্থ ও সবল চারা/ কলম রোপণ করতে হবে ।
চারা রোপনের বছর বর্ষার আগে ও পরে গাছ প্রতি ৫০ গ্রাম করে পটাশ ও টিএসপি সার এবং ২০ গ্রাম ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হবে।
ফসল সংগ্রহ:- একটি ৩-৪ বছর গাছের গড় ফলন ২৫-৩০ কেজি হবে। প্রতি কেজি পেয়ারা ২০-২৫ টাকা দরে বিক্রি হলে গাছপিছু আয় হবে ৫০০-৬০০ টাকা। প্রতি বিঘাতে আয় হবে ২৫,০০০-৩০,০০০ টাকা।