বৃহস্পতিবার মাঠের কালী পুজো হল পূর্ব বর্ধমান জেলার দক্ষিণ দামোদরের খন্ডঘোষে। খন্ডঘোষ গ্রামের পূর্ব দিকে প্রতি বছর ফাল্গুন মাসের অমাবস্যা তিথিতে এই পুজো হয়। বহু ভক্তের সমাগম ঘটে। পুজো প্রাঙ্গণে বড় মেলা বসে। কয়েক দিন আগে পুজোকে কেন্দ্র করে বৈঠক করেন বিধায়ক নবীন চন্দ্র বাগ, এসডিপিও অভিষেক মন্ডল, খন্ডঘোষ থানার ওসি পঙ্কজ নস্কর সহ অন্যান্যরা।
খণ্ডঘোষ গ্রাম ঢোকার আগে একটি মাঠের মাঝে প্রাচীন বটগাছে ঘেরা স্থানে আটচালায় রক্ষাকালী পুজো হয়ে আসছে। যেহেতু এই পুজো মাঠের মধ্যে হয়, তাই এলাকার প্রত্যেকটি মানুষের কাছে এই পুজো ‘ মাঠের কালী’ পুজো নামে পরিচিত। দীর্ঘ দিনের পুরোনো এই পুজোকে ঘিরে কত লৌকিক ইতিবৃত্ত ছড়িয়ে রয়েছে। জানা যায়, প্রায় ৩০০- ৪০০ বছর আগে মহামারী দেখা দিয়েছিল গোটা খণ্ডঘোষ এলাকায়। এই মহামারী থেকে বাঁচতে খণ্ডঘোষবাসী যৌথ হয়ে রক্ষাকালীর পুজো আরম্ভ করে। এলাকাবাসীর বিশ্বাস এই পুজো শুরুর পর থেকে আর এলাকায় কোনো রকম মহামারী দেখা যায়নি। সেই থেকে পুজো শুরু করে এখনও পর্যন্ত একই রকমভাবে এই পুজো হয়ে আসছে।আরও জানা যায়, রক্ষাকালী স্বপ্নে তাঁর পুজোর দায়িত্ব গ্রামের বিভিন্ন মানুষের মধ্যে ভাগ করে দিয়েছেন ।

দেবীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে কেউ প্রতিমা গড়ার, প্রতিমা মাথায় করে নিয়ে আসার, পুজোর জোগাড় করার ইত্যাদি দায়িত্ব একইভাবে সামলে আসছে খণ্ডঘোষ গ্রাম সহ ব্লকের বিভিন্ন গ্রামের মানুষ।একটা সময় সদ্য দিনে ঠাকুর নির্মাণ হত। এখন নির্মাণ কাজ একটু আগে শুরু করলেও পুজোর দিন প্রতিমার রঙ করা হয়। খণ্ডঘোষের রায়পাড়া থেকে বোসপাড়া হয়ে সবুজ শস্যক্ষেত্রের পাশ দিয়ে প্রতিমাকে মাথায় করে বিভিন্ন বাদ্যের সমন্বয়ে শোভাযাত্রার মাধ্যমে নিয়ে যাওয়া হয়। নানা অলঙ্কারে সাজানো হয় দেবীকে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ‘ অনেক বছরের প্রাচীন এই পুজোয় লক্ষাধিক ভক্তের সমাগম হয়। এলাকার মানুষ ছাড়াও বহু দূরদূরান্ত থেকে মানুষেরা ভক্তি ও বিশ্বাস রেখে মনস্কামনা পূরণের জন্য ছুটে আসেন। অনেকের মনস্কামনা পূরণ হয়। দক্ষিণ দামোদরের প্রতিটি গ্রামে পুজোকে কেন্দ্র করে বহু অতিথি সমাগম ঘটে। একই সঙ্গে দক্ষিণ দামোদরের বিশিষ্টরা জানান, জেলার পর্যটটের মানচিত্রে এই পূণ্যভূমি স্থান পাক।

পুজো কমিটির উদ্যোক্তারা জানান, এই একটা দিন খণ্ডঘোষ মাঠের কালী পুজোয় আগত ভক্তদের জন্য মাঠের কালী তলায় দক্ষিণ দামোদর রুটের সমস্ত বাস বিশেষ স্টপেজ দেয়। এছাড়া প্রশাসনের সহায়তায় থাকে জলবিতরণ কেন্দ্র। আগত দর্শনার্থীদের জল বিতরণ করা হয়। এমনকি স্বাস্থ্য কেন্দ্রের একটা বিশেষ দল পুজো কেন্দ্রে উপস্থিত থাকে। সারা দিনের পুজো শেষে সন্ধ্যার আগে মাঠের কালিতলার পুকুরে বিসর্জন দেওয়া হয় প্রতিমাকে। খন্ডঘোষ গ্রামবাসীরা আবার এক বছরের অপেক্ষায় থাকেন।