প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়, বর্ধমান, ১২ অক্টোবর: বিজেপি,সিপিএম আর কংগ্রেস নাকি ডাকিনী, যোগিনী ও পিশাচ। না,এটা কোনও তান্ত্রিক বা জ্যোতিষীর করা মূল্যায়ন নয়। এই মূল্যায়নের জনক হলেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ।তিনি শনিবার বিকালে পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ায় অনুষ্ঠিত তৃণমূলের বিজয়া সম্মিলনীর অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে তাঁর এই মূল্যায়নের কথা ঘোষণা করেন।
পাশাপাশি তিনি বাংলার মহিলাদের লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের আর্থিক সুবিধা দেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেবী দুর্গা ও দেবী লক্ষ্মীর সঙ্গে তুলনা করেন।একই সঙ্গে কুণাল ঘোষ এদিন এও জানিয়ে দেন ,মমতা বন্দ্যোপায়ায় সম্প্রীতি,সমৃদ্ধি ও শান্তিরও প্রতীক । দুর্গাপুজো শেষ হতেই বাংলার জেলায় , জেলায় ও ব্লকে ব্লকে বিজয়া সম্মিলনীর অনুষ্ঠান পালন শুরু করেছে তৃণমূল কংগ্রেস।এদিন বিকেলে কাটোয়া ১ নম্বর ব্লকের পঞ্চানন তলা হাই স্কুলের মাঠে তৃণমূলের বিজয়া সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় ছাড়াও কাটোয়া ১ নম্বর ব্লকের বহু তৃণমূল নেতা ও কর্মী উপস্থিত থাকেন ।

দলের রাজ্যের প্রতিনিধি হিসাবে কুণাল ঘোষ কাটোয়ার এই বিজয়া সম্মিলনীর অনু্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।একই দিনে কেতুগ্রামের কাঁদরাতেও বিজয়া সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানেও কুণাল ঘোষ, বোলপুরের সাংসদ অসিত মাল,পূর্ব বর্ধমান জেলা তৃণমূলের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় এবং কেতুগ্রামের বিধায়ক শেখ সাহনাওয়াজ উপস্থিত থাকেন।
দুই জায়গাতে মূল বক্তা হিসেবে কুণাল ঘোষ আগাগোড়া বিজেপির বিরুদ্ধে আক্রমণ শানান।তিনি জানিয়ে দেন, “এই বিজয়া সম্মিলনী আসলে আগামী বিজয় উৎসবের ভিত্তি স্থাপন করছে।২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে আড়াইশোর বেশী আসন নিয়ে তৃণমূল ফের বাংলার ক্ষমতায় আসবে।মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফের মুখ্যমন্ত্রী হবেন।
পূর্ব বর্ধমানের ১৬টির মধ্যে ১৬ আসনেই তৃণমূল কংগ্রেস জিতবে। এবার বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসে নতুন রেকর্ড গড়বে তৃণমূল কংগ্রেস।”
কাটোয়ার ও কেতুগ্রামের বিজয়া সম্মিলনীর অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে উঠে প্রথম থেকেই কুণাল ঘোষ বিজেপির সহ রাজ্যের অন্য বিরোধী দল এবং নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে সুর চড়ান। কখনো কথায় আবার কখনো গান গেয়ে তিনি বিজেপি সহ অন্য বিরোধী রাজনৈতিক দল গুলিকে তুলোধনা করেন। এস.আই.আর প্রসঙ্গে কুণাল ঘোষ বলেন,’যদি কোনও যোগ্য ভোটারের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ যায় তাহলে পশ্চিমবঙ্গ থেকে কয়েক লক্ষ মানুষকে দিল্লি নিয়ে গিয়ে নির্বাচন অফিস ঘেরাও করা হবে। এটা তৃণমূলের দলীয় সিদ্ধান্ত।
বিজেপিকে কাঠগড়ায় তুলে কুণাল ঘোষ এদিন আরো বলেন,“কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করিয়েও হেরেছে। এখন ভোটার তালিকায় কারচুপি করতে চাইছে। নির্বাচন কমিশনকে লাগিয়ে অন্য রাজ্যের ভোটারদের নাম ঢুকিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেটা ধরে ফেলেছেন।”তিনি এও বলেন, “বিজেপি একশো দিনের প্রকল্পের পাওনা টাকা আটকে রেখেছে। সেই টাকা দিচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার দিল্লি থেকে যারা জ্ঞান দিতে আসবেন, তাঁদের কাছে সাধারণ মানুষ প্রশ্ন তুলবেন, কেন ১ লক্ষ ৯০ হাজার কোটি টাকা আটকে রাখা হয়েছে?“নাগরাকাটা ঘটনার প্রসঙ্গে কুণাল ঘোষ বলেন, “ওই ধরনের ঘটনা কাম্য নয়। তবে ওটা তৃণমূলের কাজ নয়, সাধারণ মানুষের ক্ষোভ। বিজেপি নেতারা মানুষের পাশে না দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে গিয়েছিলেন, তাই মানুষ বিক্ষোভ দেখিয়েছেন।”
কেন্দ্রের স্বরাষ্ট মন্ত্রী অমিত শাহ শুক্রবারয়দিল্লিতে বলেন, ব্যাপক পরিমাণে ভারতে অনুপ্রবেশ হচ্ছে এবং মুসলিমদের সংখ্যা ২৪ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্বরাষ্ট মন্ত্রীর এই বক্তব্যের উত্তরে কুনাল ঘোষ বলেন,’উনিতো সেম সাইড গোল করে দিলেন ।উনি স্বীকার করে নিয়েছেন,যে অনুপ্রবেশ হচ্ছে। বর্ডার নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব তো কেন্দ্রের।আর হিন্দু ও মুসলিম নিয়ে উনি ভেদাভেদ সৃষ্টি করছেন ,যা কখনোই মেনে নেয়া যায়না’।
জেলা বিজেপি নেতা মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বলেন,“বাংলার মানুষ এখন হাড়ে হাড়ে বুঝে গিয়েছেন যে তৃণমূল আসলে চোরেদের দল। চুরি ,দুর্নীতি তৃণমূল কংগ্রেস দলের মূল ভিত্তি। চাকরি চুরি থেকে শুরু করে কয়লা ,বালি ,পাথর চুরির দায়ে তৃণমূলের নেতা ও মন্ত্রীরা জেল খেটেছেন। এখনও ওদের অনেকে জেলে আছেন। আর যনি এদিন য়াজ্যের বিরোধী দলকে ডাকিনি ,যোগিনী ও পিশাচ বলছেন,তিনিও জেল খাটা তৃণমূল নেতা। কাজেই ওই নেতার কোনও বক্তব্যের কোন মূল্য পাগলেও দেয় না“। অন্যদিকে জেলা সিপিএম নেতা বিনোদ ঘোষ বলেন ,“দেব-দেবীরা চুরিতে মদত দেন না, চোরেদের সঙ্গেও থাকেন না।চোরেরা তাদের দলনেত্রীকে যেভাবে দেবী দুর্গা বা দেবী লক্ষ্মীর সঙ্গে তলনা করছেন তার যোগ্য জবাব বাংলায় মানুষ ২০২৬ শের বিধানসভা ভোটে দিয়ে দেবে। “