১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দে বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্ৰামের এক দরিদ্র মুসলিম পরিবারে কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম হয়।তাঁর বাবার নাম কাজী ফকির আহমেদ ও মায়ের নাম জাহেদা খাতুন। অভাবের সঙ্গে লড়াই ছিল তাঁর ছোটোবেলার নিত্যসঙ্গী। কিছুদিন গ্ৰামের মাদ্রাসায় পড়াশোনা করার পর তিনি প্রাথমিক স্কুলে ভর্তি হন। বাবা মারা যেতে সংসারের দায়িত্ব তাঁর কাঁধে চাপে। যোগ দিলেন তিনি কবিয়ালের দলে। এই সময় বেশ কিছু পালা গান তিনি লিখে নিজে সুর দিলেন। মানুষে মানুষে বিভেদের বিরুদ্ধে যিনি বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন, ব্রিটিশ শাসনের লৌহ কপাট যিনি ভেঙে ফেলার আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলাম। ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে বিশ্বযুদ্ধ শুরু হল। এই সময় তিনি দশম শ্রেণির ছাত্র। যোগ দিলেন সেনাবাহিনীতে। সেনাবাহিনীতে তিনি বাঙালি পল্টনের হাবিলদার পদে উন্নীত হলেন। ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে যুদ্ধ শেষে তিনি কলকাতায় চলে আসেন। এইবার তিনি লেখালেখিতে মন দিলেন। লিখলেন অসাধারণ সব কবিতা, গান। প্রকাশিত হল তাঁর বিখ্যাত কবিতা ‘বিদ্রোহী’। পরিচিতি লাভ করলেন বিদ্রোহী কবি হিসেবে। তাঁর রচিত গানগুলি ‘নজরুল গীতি’ হিসেবে আমাদের কাছে চিরদিন বেঁচে থাকবে। তিনি অনেক কাব্যগ্ৰন্থ রচনা করে গেছেন। এগুলির মধ্যে ‘অগ্নিবীণা’,‘বিষের বাঁশী’,‘সাম্যবাদী’,‘সর্বহারা’ ইত্যাদি অন্যতম। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে এক দুরারোগ্য ব্যাধিতে কবি মূক ও বধির হয়ে যান। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে ইংল্যান্ডে পাঠানো হল। কিন্তু কোনো উন্নতি হল না। ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার তাঁকে ঢাকায় নিয়ে গেল। তাঁকে বাংলাদেশের জাতীয় কবির মর্যাদা দেওয়া হল। ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে ২৯ অগাস্ট তিনি ইহলোক ত্যাগ করে পরলোকে পাড়ি দিলেন। হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে বিভেদের বীজবপনে সচেষ্ট ইংরেজদের বিরুদ্ধে তিনি গেয়েছিলেন ঐক্যের গান – “মোরা এক বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু-মুসলমান”। গানটি আজও আমাদের কাছে চির স্মরণীয়।