নাসা ও ইসরোর যৌথ প্রয়াসে নির্মিত কৃত্রিম উপগ্রহ ‘নিসার’ শেষমেশ মহাশূন্যের পথে রওনা দিল। শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান মহাকাশ কেন্দ্র থেকে এই উপগ্রহের উৎক্ষেপণ সম্পন্ন হয়। নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী, বিকেল ৫টা ১০ মিনিটে উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা থাকলেও, বাস্তবে সেটি সফলভাবে সম্পন্ন হয় সন্ধে ৫টা ৪০ মিনিটে। ইসরো তার এক্স হ্যান্ডেল-এ এই উৎক্ষেপণের ভিডিও প্রকাশ করে এবং ক্যাপশনে লেখে: “উৎক্ষেপণ। আমরা উৎক্ষেপণ করেছি! নিসারকে সঙ্গে নিয়ে GSLV-F16 সফলভাবে মহাকাশে পাড়ি দিয়েছে।”
এই বিষয়ে ইসরোর চেয়ারম্যান ড. ভি নারায়ণন মন্তব্য করেন, নিসারের উৎক্ষেপণ কৃত্রিম উপগ্রহ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে একটি বড় অগ্রগতি।

উপগ্রহটি সম্পর্কে জানা গিয়েছে, এটি মূলত পৃথিবীর ভূ-পৃষ্ঠ, সমুদ্র, বরফে ঢাকা অঞ্চল এবং অরণ্যের পরিবর্তন বিশ্লেষণ করবে। ১.৫ বিলিয়ন ডলার, অর্থাৎ প্রায় ১২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা খরচে এই স্যাটেলাইটটি তৈরি করা হয়েছে, যার মধ্যে ইসরো নিজে প্রায় ৭৮৮ কোটি টাকার অর্থসাহায্য দিয়েছে। যদিও বিনিয়োগ বিপুল অঙ্কের, তবে বিশেষজ্ঞ মহলের ধারণা, এই প্রকল্প ভবিষ্যতে উল্লেখযোগ্যভাবে ফলদায়ক হবে।
প্রতি ৯৭ মিনিট অন্তর পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করবে নিসার। মাত্র ১২ দিনের মধ্যেই এটি গ্রহটির ভূখণ্ড ও তুষারঢাকা অঞ্চলের বিস্তারিত মানচিত্র প্রস্তুত করতে সক্ষম হবে। সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল— অন্ধকার, মেঘ বা ধোঁয়ার মতো বাধাও এই স্যাটেলাইটকে থামাতে পারবে না। পৃথিবীর অত্যন্ত সূক্ষ্ম পরিবর্তনও এটি সহজেই শনাক্ত করতে পারবে। ফলে বিজ্ঞানী ও জলবায়ু গবেষকদের কাছে নিসার থেকে প্রাপ্ত তথ্য হবে অমূল্য। এসব তথ্য তাঁরা বিনামূল্যে ব্যবহার করতে পারবেন গবেষণার কাজে।
এই উপগ্রহ ভবিষ্যতে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারের দিশা দেখাতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। যেমন, অসমের বার্ষিক বন্যার পূর্বাভাস দেওয়া কিংবা হিমালয়ের হিমবাহ কত দ্রুত গলছে, তাও বিশ্লেষণ করা সম্ভব হবে নিসারের মাধ্যমে।
তবে উৎক্ষেপণের সঙ্গে সঙ্গেই এটি কাজ শুরু করবে না। পূর্ণ কর্মক্ষম হয়ে উঠতে এর সময় লাগবে প্রায় ৯০ দিন। তারপর থেকেই কার্যত এটি গবেষণার কাজে সহায়তা করবে।