প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় বর্ধমান ২৩ জুন
এ যেন নিরীহ প্রাণীদের উপর বেনজির নৃশংসতা ! বন জঙ্গল ও প্রকৃতিকে আঁকড়ে বেঁচে থাকা বিভিন্ন পাখি ও প্রাণীদের নির্বিচারে হত্যা করে যাচ্ছিল ৩০ জনের শিকারি দল। তাও আবার এক আধটা বন্য প্রাণী ও পাখি নয়।শনিবার এক দিনের অভিযানে কয়েক শো বন্য প্রাণী ও পাখি হত্যার ঘটনায় নড়ে চড়ে বসে পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রাম থানার পুলিশ ও জেলার বন দফতর।জেলার পুলিশ সুপার আমন দীপ জানিয়েছেন,’বন্য প্রাণী হত্যায় দায়ে ’বন্য প্রাণ সংরক্ষণ আইনে’ ৩০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।ধৃতরা সকলেই বীরভূম জেলার বাসিন্দা’।
রাজ্যের পর্যটন মানচিত্রে জায়গা করে নিয়েছে
এই পূর্ব বর্ধমান জেলারই পূর্বস্থলীর চুপির পাখিরালয়।সেট এখন দেশী বিদেশী বিভিন্ন প্রজাতির পাখির আস্তানা হয় উঠেছে।পাখি দেখার টানে সারা বছর বহু পর্যটক চুপির পাখিরালয়ে আসেন।তা দেখে জেলার পশু-পাখি প্রেমী সংগঠন ও বাসিন্দারাও চান,জেলার সব জঙ্গল আবৃত এলাকা হয়ে উঠুক বন্য প্রাণী ও পাখিদের নিরাপদ আশ্রয় স্থল।কিন্তু শিকারিদের নিষ্ঠুরতার কারণে তা আর হয়ে উঠছে না ।
কেতুগ্রামের বাসিন্দা ও পশু-পাখি প্রেমী সংগঠনের
সদস্যদের কথা অনুযায়ী,কেতুগ্রাম ও কাটোয়ায় অজয় এবং ভাগীরথী নদীর তীরবর্তী এলাকায় রয়েছে ঝোপ জঙ্গল।সেখানেও বহু বন্য প্রাণী ও নানা ধরনের পাখি আশ্রয় নিয়ে থাকে।কিন্তু কেতুগ্রামের ঝোপ জঙ্গলে আশ্রয় নেওয়া সেইসব বন্য প্রাণী ও পাখিদের উপর এখন কু-নজর পড়ে শিকারিদের।বীরভূম থেকে আসা শিকারি দলের লোকজন শনিবার কেতুগ্রামের ঝোপ জঙ্গলে আশ্রয় নিয়ে থাকা প্রাণী ও পাখিদের শিকারে মত্ত হয়।তারা ট্র্যাক্টর ও মোটরচালিত ভ্যানে চড়ে কেতুগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে শয়ে শয়ে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি,১২ রকমের গোসাপ,বেজি,
কাঠবেড়ালি,বনবিড়াল ও নেউলকে নির্বিচারে হত্যা করে।
এক দিনে এত বিপুল সংখ্যায় বন্য প্রাণী ও পাখি হত্যা দেখে শিউরে ওঠেন কেতুগ্রামের বাসিন্দারা।একই ভাবে স্তম্ভিত হয়ে যান ’হিউম্যান অ্যাণ্ড এনভায়োরেন্টমেন্ট অ্যালায়েন্স লিগ’ নামে একটি বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা৷তারা গোটা ঘটনার কথা বন দফতরে জানালে দফতরের আধিকারিকরা নড়ে চড়ে বসেন।বন দফতর থেকে কেতুগ্রাম থানায় থবর দেওয়া হয়।পরে পুলিশ ও বন দফতরের আধিকারিকরা যৌথভাবে অভিযানে নেমে ৩০ জন শিকারিকে পাকড়াও করে।হত্যা করা অজশ্র বন্য প্রাণী ও পাখির দেহ তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়।শিকারে ব্যবহৃত সরঞ্জাম ছাড়াও শিকারিরা যে ট্র্যাক্টর,মোটর চালিত ভ্যান ও বাইকে চড়ে এসেছিল সেগুলিও আটক করা হয়।এ নিয়ে বন আধিকারিক কেতুগ্রাম থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তার ভিত্তিতে পুলিশ ’বন্য প্রাণ সংরক্ষণ আইনের’ ধারায় মামলা রুজু করে ৩০ জন শিকারি কে গ্রেপ্তার করে রবিবার কাটোয়া মহকুমা আদালতে পেশ করে।বিচারক শর্ত সাপেক্ষে তাদের জামিন মঞ্জুর করেন।
এভাবে নির্বিচারে বন্য প্রাণী হত্যার কি কারণ তা
ধৃত শিকারি জগন্নাথ হেমব্রমের কাছে জানতে চাওয়া হয় । উত্তরে জগন্থান বলেন ,“মাংস খাওয় জন্যেই তাঁরা বন্যপ্রাণী শিকার করেছেন।জগন্নাথ এও বলেন,বছরে একদিন পরব উপলক্ষে আমরা
শিকারে বের হই। সেই মতই শনিবার শিকারে বেরিয়ে ছিলাম । তবে শিকারের জন্যে যে গ্রেপ্তার হতে হবে তা বুঝতে পারি নি“।
আর কাটোয়া মহকুমার সহকারী বন আধিকারিক
সোমনাথ চৌধুরী বলেন,“বন্য প্রাণী হত্যা আইনত অপরাধ।শনিবারর দু’শোর বেশী বন্যপ্রাণী হত্যার দায়ে ৩০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শিকার উৎসবের নামে বন্যপ্রাণী হত্যা না করার জন্য ধারাবাহিক ভাবে প্রচার চালানো হয়।তবুও বন্যপ্রান শিকার ঠেকানো যাচ্ছে না বলে বন আধিকারিক মন্তব্য করেন।