আবহাওয়া দক্ষিণবঙ্গ শিক্ষা লাইফ স্টাইল স্বাস্থ্য ভ্রমন ধর্ম কৃষি কাজ ক্রাইম

রবি মূর্তির মাথায় জুতোর বিজ্ঞাপন,নির্লজ্জতার চূড়ান্ত ছবি দুর্গাপুরে

krishna Saha

Published :

WhatsApp Channel Join Now

ক্ষমো হে ক্ষমো
**************

গৌতম ভট্টাচার্য :- আজ ২২ শ্রাবন। রবি ঠাকুরের প্রয়াণ দিবস। পাড়ায় পাড়ায়, মোড়ে মোড়ে, অলিতে গলিতে, ক্লাবে ক্লাবে রবি পুজোর ধূপের গন্ধ। সুরে বেসুরে ধ্বনিতে শব্দে ছন্দে গঙ্গা জলে গঙ্গা পুজো। বৃষ্টি ভেজা এই শহরে আজ প্রকৃতিও চোখ ভিজিয়ে রেখেছে। মানুষটিকে নিয়ে শ্রদ্ধা, ভক্তি, বিশ্বাস, আবেগের কোনও খামতি নেই। জন্মদিন, মৃত্যুদিনে তিনি সমান উজ্জ্বল। বাঙালির হৃদয় আসনে তাঁর জায়গা অমলিন, চিরস্থায়ী।

তবে সত্যি কথা বলতে কী তাঁর প্রতি এই শ্রদ্ধা সম্মান কি সর্বত্র বিরাজমান? সত্যিই কি তাঁর আসন এতটাই আবেগ মথিত চির অমলিন? দিনে দিনে তিনি যে ক্রমশঃ বাঙালি জীবনে ‘ঠাকুর’ হয়ে উঠেছেন একথা আজ আর অস্বীকার করার উপায় নেই। তিনি পূজিত হন বেশী , পঠিত হন কম। আমাদের প্রজন্ম সেভাবেই দেখতে, বুঝতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। এহ বাহ্য।

তাই এহেন ঠাকুরের মাথায় জুতো চাপিয়ে দিতে পারি কি? শহরের প্রাণকেন্দ্র সিটি সেন্টারের বুকে রবীন্দ্রনাথের মূর্তির মাথার উপর তাঁর মূর্তির দ্বিগুণ মাপের একটি জুতো চাপিয়ে বিজ্ঞাপন সজ্জিত হয়েছে।
ADDA, Corporation, SBSTC কর্তৃপক্ষ সবার চোখের সামনে এমন একটি দৃশ্য জ্বল জ্বল করছে।
মূর্তির পাশে একটি ফাস্ট ফুডের দোকান রবীন্দ্রনাথের মাথার উপর প্লাস্টিকের চাদর চাপিয়ে চেয়ার পেতে ব্যবসা করছেন। (যদিও সেই চাদর প্রতিবাদের পর সরে গেছে)। কিন্তু দোকানটি বহাল তবিয়তে ব্যবসা করছে এবং যথারীতি রবি পদতল এঁটো আবর্জনায় দীর্ন।

কর্তৃপক্ষ যাঁরা এই এলাকার দায়িত্বে রয়েছেন তাঁদের সকলের কাছে আর্জি জানানো হয়েছে। আমাদের দেশের নিয়ম অনুযায়ী বেনিয়ম ভাঙার কাজটা শ্লথের গতির থেকেও শ্লথ। এখানেও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। আবেদন করার দিন ওই চত্বরে গিয়ে দেখেছি তখনও জুতো ঝোলে নি। দুদিনের মধ্যে বিশ্বকবির মাথায় জুতো চেপেছে। কেউ দেখে নি। কেউ জানে না। হোর্ডিং কমিটির নজরে নেই। ওই ফাস্ট ফুডের মালিক রবীন্দ্রনাথকে বোধ করি চেনেন না। ওই জুতোর বিজ্ঞাপনের কোম্পানি রবীন্দ্রনাথকে হয়তো কাকতাড়ুয়া ভেবে থাকতে পারেন।
কিন্তু প্রশাসক যাঁরা তাঁদের আয়োজনে আজও শহরের কোথাও না কোথাও রবি ঠাকুরের গলায় মালা চড়ছে। পাজামা পাঞ্জাবী, শাড়ি চুড়ি মালা পড়ে গানে কবিতায় রবি পুজো হচ্ছে। বক্তৃতা হচ্ছে। ধূপের গন্ধে ম ম করছে দিক দিগন্ত।

অথচ তাদেরই নাকের ডগায় বিশ্বকবি মাথায় জুতো বইছেন। এ বড় লজ্জার। বাঙালির লজ্জা। ভারতবাসীর লজ্জা। এই লজ্জা নগর প্রশাসনের।

সোস্যাল মিডিয়াতে এর প্রতিবাদ করাতে সংবেদনশীল বাঙালির অংশ রে রে করে উঠে বলতে শুরু করেছেন এই অতিমারির সময়ে কেউ করে খাচ্ছে (ফাস্ট ফুডের দোকানটাকে ওই স্থান থেকে সরানোর দাবী আমাদের) তাদের রুজি রুটি বন্ধ করার চক্রান্ত চলছে।
হায় বাঙালির রুচি। ধিক বাঙালির স্পর্ধাকে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যিনি বাঙালির প্রাণপুরুষ তাঁকে নিয়ে এহেন ছেলেখেলা, অসম্মান, অবমাননা আমরা সইবো কি? যে প্রশাসনের দায়িত্ব নগর চত্বরে অনৈতিক কাজ রুখে দেবার তাঁরা চোখ বুঁজে দায়িত্বজ্ঞানহীন স্থবির হয়ে গেলে এই শহর লজ্জায় মুখ ঢাকবে কার আঁচলে।

See also  দুর্ঘটনায় মৃত্যু বাইক আরোহী কাকা ও ভাইপোর - জখম হয়েছে আরও একজন

আমরা নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ এই অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছি। দাবি জানিয়েছি অবিলম্বে এই দোকান এবং ওই কুরুচিকর বিজ্ঞাপন দ্রুত সরিয়ে দেবার জন্য।

সকলের কাছে আবেদন এই পোস্ট শেয়ার করে প্রতিবাদের কন্ঠ দিকে দিকে ছড়িয়ে দিতে।

কবিগুরুর কাছে আমরা নত মস্তকে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। প্রকৃতিও বোধ করি আজ বিশ্বকবির এই নির্লজ্জ অসম্মান দেখে সজল চোখে তাকিয়ে আছে।

krishna Saha

আমার নাম কৃষ্ণ কুমার সাহা, আমি ফুল টাইম সাংবাদিকতা করি।গত ৮ বছর ধরে এই পেশায় আছি