গলসি থানার গোহগ্রাম সহ একাধিক ঘাট থেকে রাতের অন্ধকারে বালি তুলে মজুদ ও পাচার, পুলিশের অভিযানের আগেই ‘লোকেশন পার্টি’র মাধ্যমে পাচারকারীদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে খবর

কৃষ্ণ সাহা ,গলসি:- বর্ষা আসতে এখনো কয়েকদিন বাকি। তবে তার আগেই পূর্ব বর্ধমান জেলার গলসি থানার গোহগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েত সংলগ্ন দামোদর নদী এলাকায় বেআইনি বালি তোলার অভিযোগ ঘিরে উত্তাল স্থানীয় মহল। অভিযোগ, রাতের অন্ধকারে কিছু স্থানীয় বালি মাফিয়া দাপটের সঙ্গে নদী থেকে বালি তুলে রাস্তার ধারে ও গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় মজুত করছে।

সোজা ঘাট, বোম ঘাট, টেনি যাদবের ঢাল, নন্দীর ঢাল, তাহেরপুর, দাতপুর, শিকারপুর, সোন্দা ভাঙা—এই সমস্ত এলাকায় প্রতিদিন রাতভর চলে বালি তোলার কাজ। নদী থেকে তোলা বালি দিনের আলো ফোটার আগেই রাস্তার ধারে জড়ো করে রাখা হচ্ছে বিভিন্ন ‘কাঁটা’ (ওয়ে ব্রিজ) ও ঘাটের আশপাশে। অভিযোগ, এরপর সেই বালি ট্রাক্টর ও লরি দিয়ে চড়া দামে পাচার করা হচ্ছে বাইরে।
যদিও কিছুদিন আগে গলসি থানার পুলিশ অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকটি ট্রাক্টর আটক করে। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, সেই অভিযান ক্ষণস্থায়ী ছিল। কয়েকদিন স্থিরতা থাকার পর ফের পুরোনো চিত্র ফিরে এসেছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, প্রতিদিনই নদী থেকে ট্রাক্টর বালি তোলে এবং রাস্তার ধারে জোর করে জেসিবি মেশিন দিয়ে লরিতে তা লোড করে পাচার করা হচ্ছে। পুলিশের মাঝে মাঝে অভিযান চালালেও, ব্লক ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতর থেকে কার্যত কোনো কঠোর পদক্ষেপ না নেওয়ায় মাফিয়ারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
সূত্র মারফত জানা গেছে, পুরো চক্রটি একটি ‘সিস্টেম’-এর মাধ্যমে চলছে। গলসি থানা ও বিএলআরও অফিসের সামনেই দিনের শুরু থেকে সারারাত পর্যন্ত কিছু লোক ‘লোকেশন পার্টি’ হিসেবে সক্রিয় থাকে। এই লোকেরা ঠিক নজর রাখে কোন অফিসার কখন কোথায় যাচ্ছেন। সেই খবর মুহূর্তে পৌঁছে যাচ্ছে বালি মাফিয়াদের কাছে। ফলে পুলিশ বা প্রশাসনের অভিযান শুরুর আগেই সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে মেশিন ও বালি বোঝাই গাড়িগুলি। স্বাভাবিকভাবেই, প্রশাসনিক অভিযান অনেক ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হচ্ছে।
এলাকাবাসীর একাংশের অভিযোগ, প্রশাসনের ইচ্ছা থাকলে এই অবৈধ কারবার রোধ করা কঠিন নয়। অথচ বালি ভর্তি ট্রাক্টর প্রতিদিন থানার সামনের রাস্তা দিয়েই যাতায়াত করছে, অথচ সেগুলিকে আটকানো হচ্ছে না। এমনকি এই গাড়িগুলোর বৈধ কাগজপত্র আদৌ আছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে না।
বিশেষ সূত্রে জানা গেছে, অধিকাংশ ট্রাক্টরেরই কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই। ফলে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে ভুক্তভোগী পরিবার সরকারি বা বীমার তরফ থেকে কোনও ক্ষতিপূরণ পাবে না।
এখন দেখার, প্রশাসন ও ভূমি দফতর কবে এই বেআইনি বালি চক্রের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে।