আবহাওয়া দক্ষিণবঙ্গ শিক্ষা লাইফ স্টাইল স্বাস্থ্য ভ্রমন ধর্ম কৃষি কাজ ক্রাইম

সূচিকর্মের মাধ্যমে জপমালার থলিতে হিন্দু দেবদেবীর রুপ ফুটিয়ে তুলে ইসকনের সন্ন্যাসীদেরমন জয় করে নিয়েছেন হযরত

krishna Saha

Published :

WhatsApp Channel Join Now

প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় বর্ধমান

ইষ্ট দেবতার নাম মন্ত্র জপের জন্য ধর্মপ্রাণ হিন্দুরা ব্যবহার করে থাকেন ১০৮টি পুঁতির মালা। সেই মালা ’জপ চক্র মালা’ বা ’জপমালা’ নামে খ্যাত। ওই জপমালা সুরক্ষিত রাখা ও সহজে বহন করার জন্যে ধার্মিক হিন্দুরা যে ছোট ’থলি’ ব্যবহার করেন সেটিকে ’জপমালার থলি’ বলেই সকলে জানেন।
কিন্তু এটা অনেকে জানেন না,’বছরের পর বছর ধরে সূচিকর্মের মাধ্যমে এহেন জপমালার থলিতে নানা হিন্দু দেবদেবীর রুপ ফুটিয়ে তুলে চলেছেন অহিন্দু বঙ্গবাসী হযরত মণ্ডল ও তাঁর পরিবার“।

সেই জপমালার থলি ’ইসকনের’ সন্ন্যাসীদের মন জয় করে নিতেই হযরত ও তাঁর পরিবারের আয়ের পথ খুলে গিয়েছে।একই কর্মে অন্যদের সামিল করিয়ে তাদেরও হযরত রোজগারের দিশা দেখাচ্ছেন।

বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রধান বাঙালি কবি কাজী
নজরুল ইসলাম লিখে গিয়েছেন,“ মোরা এক বৃন্তে দু’টি কুসুম হিন্দু-মুসলমান।মুসলিম তার নয়ন-মণি, হিন্দু তাহার প্রাণ।“ কবির এই মত ও পথেরই যেন পথিক এই বঙ্গের পূর্ব বর্ধমান জেলার পূর্বস্থলীর সিংহজুলি গ্রামের মসজিদ পাড়ার বাসিন্দা হযরত মণ্ডল।তিনি মুসলিম।তিনি ও তাঁরা পরিবারের সকলে আল্লাহর একনিষ্ঠ ভক্ত।তবে তাঁদের মধ্যে সম্প্রীতি বোধের কোন খামতি নেই।তার প্রকাশ তাঁরা তাঁদের নিপুণ হাতের সূচিকর্মের মধ্য দিয়েই ঘটিয়ে চলেছেন।সেই কর্মে নেই কোনও ধর্মিয়
ভেদাভেদ। বরং,আছে হিন্দু আর মুসলিমের মধ্যে নয়ন ও প্রাণের প্রীতির সম্পর্ক।

হযরত ও তাঁর পরিবার সদস্যরা দীর্ঘ ১৫ বছরের বেশী সময়কাল ধরে সূচিকর্মের মাধ্যমে জপমালার থলিতে নানা হিন্দু দেব-দেবীর রুপ ফুটিয়ে তোলার কাজ করে যাচ্ছেন।জগন্নাথ,বলরাম,শুভদ্রা,গৌর নিতাই,রাধাকৃষ্ণ,মাধব সহ আরো নানা হিন্দু দেবদেবীর রুপ তাঁরা জপমালায় রুপ ফুটিয়ে তোলেন।এই কাজের মধ্য দিয়েই তাঁরা খুঁজে পেয়েছেন রোজগারের পথ।পাশাপাশি তাঁরা অন্যদেরও কর্মসংস্থানের দিশা দেখিয়ে চলেছেন।


সূচিকর্মের কাজ শিখে নিয়েছেন হযরত মণ্ডলের স্ত্রী রুপিয়া বিবি।তিনিও এখন তাঁর স্বামীর সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে হিন্দুদের জপমালার থলিতে দেব-দেবীর রুপ ফুটিয়ে তোলার কাজ করছেন। রুপিয়ার কাছে সূচিকর্মের এইকাজ শেখেন গ্রামের আনোয়ারা,রুনা খাতুন,শাহানারা সহ আরো বেশ কয়েকজন হিন্দু ও মুসলিম পরিবারের মহিলা।তাঁরাও জপমালার থলিতে হিন্দু দেব-দেবীর রুপ ফুটিয়ে তোলার কাজ করে এখন উপার্জন করছেন ।

See also  অনলাইন অঙ্কন প্রতিযোগিতা

উপার্জনের তাগিদেই হঠাৎ করে হযরত মণ্ডল সূচিকর্মের (এমব্রয়ডারি)এই কাজে নেমে পড়েছেন
,এমনটা অবশ্য নয়। হযরত জানান,“ সূচিকর্মের কাজ শিখতে তিনি দিল্লিতে যান।সেখান থেকে তিনি বাড়িতে ফিরে আসার পর মায়াপুর ইসকনের এক সন্ন্যাসীর সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। ওই সন্ন্যাসীর
অনুরোধে তিনি সূচিকর্মের মাধ্যমে জপমালার থলিতে হিন্দু দেব-দেবীর রুপ ফুটিয়ে তোলার কাজ প্রথম করেন।

তাঁর কাজ মায়াপুরের ইসকনের
সন্ন্যাসীদের মুগ্ধ করে।সন্ন্যাসীরা আরো কাজের বরাত দেন।তারপর থেকে জপমালার থলিতে হিন্দু দেব দেবীর রুপ ফুটিয়ে তোলার কাজকেই তিনি
পেশা হিসাবে বেছে নেন বলে হযরত মণ্ডল জানিয়েছেন।তিনি এও বলেন, ইসকনের সন্ন্যাসী বা আমরা-কেউই হিন্দু ও মুসলমানের মধ্যে কোন ভেদাভেদ দেখিনা।সম্প্রীতি’ই আমাদের ভিত্তি।

krishna Saha

আমার নাম কৃষ্ণ কুমার সাহা, আমি ফুল টাইম সাংবাদিকতা করি।গত ৮ বছর ধরে এই পেশায় আছি