আবহাওয়া দক্ষিণবঙ্গ শিক্ষা লাইফ স্টাইল স্বাস্থ্য ভ্রমন ধর্ম কৃষি কাজ ক্রাইম

গ্রিন টি:স্বাদে খারাপ উপকারীতায় ভরপুর

krishna Saha

Published :

WhatsApp Channel Join Now

তমন্না পারভিন
——————

আমাদের বাঙালিদের কাছে দুধ চা খাওয়া যেন একটা আবেগ। যা ছাড়া আমরা আমাদের দিনের শুরুটা ভাবতেও পারিনা। কিন্তু আজকাল অনেক মানুষ শরীর সম্পর্কে সচেতন হওয়ায় গ্রিন টি কে বেছে নিয়েছেন রোজকার সঙ্গী হিসেবে। এই গ্রিনটি খেতে খারাপ হলেও এর উপকারীতা কিন্তু অনেক। কিন্তু আবার অত্যাধিক পানে অপকারিতাও রয়েছে। তাহলে চলুন আজকে আমরা গ্রিনটি সম্বন্ধে একটু বিস্তারিত জানি —-

 

 

গ্রিনটির উৎপত্তি:- গ্রিনটি মানেই তো শুধু সবুজ পাতা, কিন্তু আসলে তেমনটা নয়। গ্রিনটি ক্যামেলিয়া সিনেসিস এর পাতা এবং কুড়ি থেকে তৈরি হয়। গ্রিনটির উৎপত্তি স্থান চিন এছাড়াও উৎপাদন হয় পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন জায়গায়।

 

সাধারণ চা ও গ্রিনটির মধ্যে পার্থক্য কি?

সাধারণ চা ও গ্রিনটির মধ্যে পার্থক্য প্রক্রিয়াকরণ ছাড়া আর কিছুই না। অন্যান্য চা হয় ফারমেনটেইশন প্রক্রিয়ায় কিন্তু গ্রিন টির ক্ষেত্রে তা করা হয় না। তাই গ্রিনটিতে আন্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান ও পলি ফেনসন বেশি থাকায় গ্রিনটির উপকারীতা তুলনামূলক ভাবে বেশি। এছাড়াও গ্রিনটির মধ্যে
Vitamin A, E ও C এবং ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেসিয়ার ও মিনারেল আছে।

গ্রিনটির গুনাবলীঃ

ওজন কমায়ঃ-আজকাল ওজন বেড়ে জাওয়া একটা রোগ ও বলা যেতে পারে, যা কম বেশি প্রায় আমরা সবাই ভুক্তভোগী। আর এই ওজন কমাতে গ্রিন টির জুড়ি মেলাভার। কিভাবে তাহলে আসুন একটু বিস্তারে জানি- গ্রিনটির পলিফেনল শরীরের ফ্যাট অক্সিডেশন পক্রিয়াকে কার্যকরী করে তোলায় খাবার থেকে ক্যালরি তৈরি করার যে প্রক্রিয়া তাতে অনেকাংশে সাহায্য করে থাকে। গ্রিন টি পানে শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা বজায় থাকে। এই চা পানে শরীরের তাপমাত্রা একটু হলেও বারে এবং তাপমাত্রা বারা মানেই তো শরীর থেকে একটু হলেও ক্যালোরি ঝরে যাওয়া। এক গবেষণায় দেখা গেছে গ্রিন টি পানে একদিনে 70 ক্যালরি পর্যন্ত ফ্যাট গলতে পারে। তবে আমাদের এটাও মাথায় রাখতে হবে যে, শুধুমাত্র এই চা পান করলে যে আমরা রোগা হয়ে যাব তা নয়।চা পানের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের নিয়মিত শরীরচর্চার ও প্রয়োজন।

See also  চার মনের রাজযোটক-ছাদনাতলায় য়মজ ভাইয়ের গলায় মালা পরালো যমজ দুই বোন

 

হৃদরোগের আসংখ্যা কমায় ঃ-বিজ্ঞানীদের মতে গ্রিন টি আমাদের প্রতিটি শিরায় সমানভাবে কাজ করে। তার ফলে রক্ত চলাচল ও নিয়ন্ত্রণে থাকে। এছাড়াও রক্তকে জমাট বাধতে দেয় না। এর ফলে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভবনাও খুব কম থাকে।

 

 

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে ঃ-গ্রিন টি রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে সক্ষম। ফলে খাবার পর শরীরে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যাওয়াই তা নিয়ন্ত্রণে প্রত্যক্ষভাবে সাহায্য করে।

 

কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় ঃ-আমাদের শরীরে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় উপকারী কোলেস্টেরলও বর্তমান। এই সবুজ পানীয় শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল কে হ্রাস করার পাশাপাশি উপকারী কোলেস্টেরলের পরিমাণ বৃদ্ধি করে।

 

যে কোন রোগ প্রতিরোধে সহায়ক ঃ- গ্রিন টি সব ধরনের রোগ প্রতিরোধে সক্ষম। এই পানীয় দেহ কোষগুলিকে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া থেকে বাচায়, যার ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।

 

 

ত্বকের যত্নে সাহায্যকারীঃ- ত্বকের যত্নে গ্রিন টির জুড়ি মেলা ভার, যা আমাদের সান ট্যান কমাতে
অনেকাংশে সাহায্য করে। এছাড়াও ত্বকের রিংকেলস দূর করে, ডার্ক সার্কেল কমাতেও গ্রিনটি ব্যাগ অনেক উপকারী। প্রতিদিন গ্রিনটি পানে উচ্চরক্তচাপের ঝুঁকি কমে। এছাড়াও গ্রিনটিতে ‘ক্যাটেকাইন’ নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় মুখের ভেতর থাকা বিভিন্ন ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করতে সাহায্য করে। এছাড়াও গ্রিনটি পানে স্মৃতি শক্তিরও বিকাশ ঘটে বলে মনে করা হয়। এছাড়াও মানুষকে নিত্যদিন যে হতাশা ও দুশ্চিন্তা গ্রাস করে তা গ্রিনটি পানে কমানো সম্ভব। কারণ গ্রিনটির সবুজ পাতায় প্রাকৃতিক ‘থিয়ানিন’ নামক অ্যামাইনো এসিড থাকে।

 

 

ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক:- মানুষের দেহের অনিয়ন্ত্রিত কোষের বৃদ্ধির ফলে যে মারণ রোগ ঘটে তা হল ক্যান্সার । যার সাথে আমরা কম-বেশি সকলেই পরিচিত। গবেষণায় বলা হয়েছে, যেকোনো ধরনের অক্সিডেটিভ ড্যামেজ এর ফলেই এই দীর্ঘমেয়াদী প্রবাহের সৃষ্টি হয়। জাগ অ্যানসার সহ আরো অন্যান্য দীর্ঘ স্থায়ী মারণ রোগের কারণ। আর এই অক্সিডেটিভ ড্যামেজ এর বিরুদ্ধে মোকাবিলা করতে পারে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট জাতীয় উপাদান, যা গ্রিন টির মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায়।
ফলে গ্রিন টি পানে ক্যান্সার রোগের ঝুঁকি যে কম তাই বলে মনে করছেন গবেষকরা

See also  এক ঝলকে দেখে নিন বর্ধমান পৌর সভার তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী তালিকা

 

গ্রিন টি’ র পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াঃ- সব জিনিসেরই যেমন একটি ভালো দিক ও খারাপ দিক থাকে গ্রিন টি ও এর ব্যাতিক্রম নয়। গ্রিন টি ‘র অত্যাধিক পানে কি কি অসুবিধা হতে পারে তা নিয়ে একটু যানি-

১. যে সকল ব্যাক্তির ক্যাফেইন গ্রহণে সংবেদনশীলতা রয়েছে তাদের অতিরিক্ত গ্রিন টি এড়িয়ে চলাই ভালো বলে চিকিৎসকরা মনে করেন। কারণ দেহে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি ক্যাফেইন এর মাত্রা বেড়ে গেলে অনিদ্রা, পাকত্থলীর সমস্যা ও আরও বেশ কিছু সমস্যা দেখা দেয়।

 

 

২. গর্ভবতী মা বা স্তন্যপান করানো মায়েদের সারা দিনে ৬কাপের বেশি গ্রিন টি পান করা উচিত নয়। কারণ ওই সময় ক্যাফেইন খুব খারাপ প্রভাব ফেলে শিশুর মস্তিষ্ক ও মেরুদন্ডে সমস্যা দেখা দিতে পারে।

 

 

৩. চিকিৎসক দের মতে, ভরা পেটে গ্রিন টি’র পান করা গেলেও খালি পেটে একদমই পান করা উচিত নয়। খালি পেটে খেলে আলসারের সম্ভাবনা দেখা দেয়। এছাড়াও অতিরিক্ত গ্রিন টি পানে টক্সিন নির্গত হয় যা সরাসরি লিভারে গিয়ে জমা হয় ও পরবর্তীতে লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়ার সম্ভাবনা প্রবল থাকে। রক্তে আয়রন ও ক্যালসিয়ামের পরিমাণও কমিয়ে দেয়। এর কারণে অ্যানিমিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

 

 

কখন খাবেন? এবং দিনে কতবার খাবেন?

আপনি সারা দিনে ২ থেকে ৩ কাপ গ্রিন টি খেতেয় পারেন। তবে তার বেশি না খাওয়ায় ভালো। এই চা খাওয়ার উপযুক্ত সময় হল দুপুরের খাবার পর থেকে বিকেলের মধ্যে। কিন্তু দুপুরে খাবারের পরে পরেই পান করা একেবারেই উচিত নয়। এর ফলে খাবারের পুস্টিগত মান নষ্ট হয়ে যায়। এবং হজমেরও সমস্যা দেখা দেয়। তাই সব সময় খাবার খাওয়ার ৪৫ মিনিট পরে খাওয়ায় শ্রেয়। সন্ধ্যা ৭টার পরে চেষ্টা করবেন না খাওয়ায়।

See also  জীবন বাজিরেখে বৃদ্ধাকে বাঁচাতে গিয়েছিলেন রেল কর্মী-তিনি ব্যর্থ হওয়ায় ট্রেনের ধাক্কায় ছিন্ন ভিন্ন হয়েগেল বৃদ্ধার দেহ

 

 

তমন্না পারভিন

অবশেষে এইটুকু বলা যেতে পারে, দুধ চিনি মিশ্রিত চা এর থেকে গ্রিন টির
উপকারিতা অনেকাংশে যে বেশি তা আমরা ধারণা করতেই পারি। এই চা ক্যান্সার ডায়াবেটিস হৃদরোগের মতন বড় বড় মরণব্যাধির ঝুঁকি থেকে আমাদের বাঁচিয়ে সুস্থ সবল ও দীর্ঘমেয়াদী জীবনের পথে এগিয়ে চলার এক নিদারুন চাবিকাঠি হয়ে উঠেছে আমাদের আজকের ব্যস্ত সমাজে।

 

 

 

 

 

krishna Saha

আমার নাম কৃষ্ণ কুমার সাহা, আমি ফুল টাইম সাংবাদিকতা করি।গত ৮ বছর ধরে এই পেশায় আছি