আবহাওয়া দক্ষিণবঙ্গ শিক্ষা লাইফ স্টাইল স্বাস্থ্য ভ্রমন ধর্ম কৃষি কাজ ক্রাইম

যে মেয়েদের ‘বিয়ের বয়স পেরিয়ে গেছে’

By krishna Saha

Published :

WhatsApp Channel Join Now

যে মেয়েদের ‘বিয়ের বয়স পেরিয়ে গেছে’

ঋষিগোপাল মণ্ডল
——————



শীত তো বিয়ের মরশুমও , বলো! এক শীতে জাঁক করে বিয়ে হয়ে পরের শীতে ফুস করে বিচ্ছেদ হয়ে গেল যে দম্পতির , আঙুলে এখনও তাঁদের প্রীতিভোজের পনিরপসিন্দার গন্ধ লেগে আছে। তেলও।

গত শীতে বিয়ে হয়ে এই শীতে যাঁরা লেলেগাঁও , লাভায় গিয়ে সুইটসেল্ফি তুলছে , তাঁদের পছন্দের ‘লাভা’র আ-কার টুকু নিয়ে , লাভটুকু তাঁদের কাছেই রেখে , আমি অন্য এক শীতে-শাদি দম্পতিকে ফরোয়ার্ড করি। অথচ , কোনওদিন আমি সেভাবে ফরোয়ার্ড বা ডিফেন্সে খেলিনি।

গত শীতে বিয়ে হয়েছে যে যুগলের , তাঁরা সেই আ-কারে ভর করে , এই শীতেই বাবা মা হয়ে উঠবে। ওঁদের সন্তানের জন্ম যে নার্সিংহোমে তার মালিক-ডাক্তার-আয়া-নার্স যেন নিঃসন্তান দাইমার মতো দয়ালু আর যত্নবান হন। টাকার জন্য কসাইয়ের মতো কীচাঈন যেন না করে। নার্সিংহোমের নাম যাই হোক , তা যেন আরোগ্যনিকেতন হয়।

যে বিয়ে প্রেমে ঝগড়ায় বেঁচে আছে , যে বিয়ে এক শীতে পুরো মাখন ছিল , গুগলিউগলিউস্ক ছিল কিন্তু আর এক শীতে যে বিয়ের ঠোঁট ও গোড়ালি ফেঁটে গেছে , শীতের বিয়েতেই পাওয়া গোলাপি তুলতুলে ব্ল্যাঙ্কেটের পশম ছেতরে গেছে যে বিয়ের , সেই বিয়েতে আর সব বিয়েতে ভাড়া করা , ফুলেল , কনের মিথ্যে সিংহাসনের পাশের চেয়ারে হাসিমুখ একটি মেয়ের ছবি থাকে। মেয়েটি জোর করে হাসে। মেয়েটি কষ্ট করে হাসে। মেয়েটি কষ্ট চেপে হাসে। এই মেয়েটির অন্য মেয়ের বিয়েতে অত সাজতে ভালো লাগে না আর। বিয়েবাড়িতে কব্জি ডুবিয়ে গিলতে ইচ্ছে করে না এই মেয়েটির। এই মেয়েটির ‘বিয়ের বয়স পেরিয়ে গেছে।’

এই মেয়েটির জুলফে নিয়ে আর কেউ কবিতা করে না। আঁকিবুকি করে না কেউ। এই মেয়েটির চোখের , হাসির আর আঙুলের রঙের তারিফ করে না আর কেউ তেমন। অথচ বাঁধনি লাল ওড়না সামলাতে সামলাতে এই মেয়েটি টিউশনে গেলে জগৎ সংসার একদিন নেচে নেচে গাইতো:তেরি চুনরিয়া দিল লে গ্যয়ী। কার্জনগেটে ট্রাফিক থেমে যেত বেবাক। আর এই ফাঁকে ডাবল-স্ট্যান্ড এনফিল্ড বুলেটের উপর চেপে অকারণ হেসে সিগ্রেট জ্বালাতো যুবা ধর্মেন্দ্রর মতো দেখতে ট্রাফিক সার্জেন্ট।

সেই মেয়েটির বিয়ের বয়স পেরিয়ে গেছে। “এই মেয়েটির বিয়ের বয়স পেরিয়ে গেছে” শুনতে শুনতে কত শীত চুপচাপ পেরিয়ে যায়। ছাদের টবে চন্দ্রমল্লিকা ফোটে। শুকিয়েও যায়। এই মেয়েটির বিয়ের বয়স পেরিয়ে গেছে…বলতে বলতে শীতকালগুলো আরও রুক্ষ আরও কর্কশ হয়ে যায়। চামড়ায় খড়ি ফোটে। বাঙালি চামড়াকে ত্বচা বলতে শেখে।

তবুও , অই মেয়েটি , বা মেয়েটির কোনও আত্মীয় শীতের কোনও বিয়েবাড়িতে তোলা ছবি থেকে বাকিদের ক্রপ করে বাদ দিয়ে , ছবিকে আর একটু ফর্সা করে ম্যাট্রিমনিয়াল সাইট , পাত্রপাত্রীর বিজ্ঞাপন আর ফেসবুকের বিবাহ অভিযান গ্রুপেট্রুপে দেয়। এই অভিযান তেমন করে আর ভালো লাগে না মেয়েটির। তবুও দেয়। দিতে হয়। না দিলে বর্ধমানে বরফ পড়বে। তালান্ডুতে তুষারপাত হবে। হাতিবাগানে এস্কিমোদের আবাসন গড়ে দিতে হবে রাজ্য সরকারকে। অথচ , আমরা তো সকলেই জানি , রাজ্যের ভাঁড়ারে টাকা নেই। এই , গত সন্ধ্যায়ও মুখ্যমন্ত্রী পইপই করে বললেন সেকথা।

See also  ন্যাশনাল ইনভেশন ফাউন্ডেশন ইন্ডিয়ার সহযোগীতায় মেমারির স্কুলের জমিতে শুরু হল আপেল চাষ



মেয়েটির যে আঁখিজোড়ার আলোয় দিশেহারা হয়ে মেয়েটির বাড়ির সামনে বাইকে চক্কর কাটতো যে যুবকসঙ্ঘ , তাদের অনেকেই দীঘার সৈকতে বৌয়ের ব্যাগ-চপ্পল-ওড়না আর মেয়ের জুতো-প্যান্ট হাতে ভুঁড়ির নিচে বাঘছাল প্রিন্টের বারমুডা পরে অপেক্ষা করে। এদের কেউ একদা বাঘ। ফিলহাল মিউমিউ বিড়াল। সেই অপেক্ষার অধিক ইন্তেজার আলোময় মেয়েটির চোখের তলায় কালি হয়ে যায়। কোনও মাঈ কা লালনীলসাদা রিঙ্কলফ্রি ক্রিম মুছতে পারে না বিয়ে না হওয়া মেয়েটির বিষাদ আর অপেক্ষার বলিরেখা। চারপাশ , চারপাশের অন্য মেয়েরাই বারবার মনে করিয়ে দেয় , এই মেয়েটির বিয়ের বয়স পেরিয়ে গেছে। পাড়া পড়শির ঘুম ছুটে যায় । আক্ষা দুনিয়ায় ইয়ে এবং ইয়ের ইয়ে ফেটে যায় এই মেয়েটির এখনও বিয়ে হয়নি বলে।

অই মেয়েটির বিয়ের বয়স পেরিয়ে যাওয়া নিয়ে রাজ্যের , রাজ্যের লোকের যে রাজ্যের চিন্তা তা ধোঁয়াশার মতো ঘিরে থাকে শহর গ্রাম জনপদ। তোমরা ওই ধোঁয়াশাকে কুয়াশা বলে জানো। আমি আর সুপর্ণা জানি , ওটা দূষণের ফলাফল। শীতের দিল্লিতে যেমন হয়!

মেয়েটির বিয়ের বয়স পেরিয়ে গেছে বলে নাওয়াখাওয়া ছুটে গেছে যে পড়শির , তাদের কথার শব্দদূষণই ধোঁয়াশার চাদর হয়ে ঘিরে রাখে মানুষের পাড়া।

নতুন আলুর খোসা আর বিয়েবাড়ির নিমন্ত্রণে গায়ে পড়া দাঁত ক্যালানো ভালোবাসায় বিরক্ত সুপর্ণা প্রায়শই টেক্সট করে…শীতকাল কবে যাবে ঋষিদা!



আমার সাতজন প্রেমিকা শীতকালেই বিয়ে করে চলে গেছে।তবুও আমি ছাদের টবে ক্যাপসিকাম পালং শাক আর ধনেপাতা চাষ করে ক্রমে ক্রমে চাষী হয়ে উঠেছি। আমার এই উদ্যোগ আর নিষ্ঠা দেখে , এই মন শুধুই কৃষিকাজ জানে দেখে , কেন্দ্র শেষমেশ কৃষি আইন বাতিল করেছে। বাধ্য হয়েছে। খোদ প্রধানমন্ত্রী মোদিভাই হাত জোড় করে বলেছেন , ভেরি সরি মোটাভাই।

মহামহিম রাষ্ট্রের এই নতজানু ক্ষমা-প্রার্থনার ক্ষমাটুকু আমি এখনও বিয়ে না হওয়া , বিয়ের বয়স পেরিয়ে যাওয়া মেয়েদের বটুয়ায় ভরে দিই আলগোছে। গোপনে। তারা যেন চারপাশকে ফরোয়ার্ড করে দেয় সেই ক্ষমা।

আর প্রার্থনাটুকু এখনও অনূঢ়া সব মেয়েদের চিবুকে আলতো মাখিয়ে বলি , গায়ে হলুদ হোক বা না হোক ; ভালো হোক।

See also  এ যেন 'অকাল বোধনে'র অকাল বোধন

krishna Saha

আমার নাম কৃষ্ণ কুমার সাহা, আমি ফুল টাইম সাংবাদিকতা করি।গত ৮ বছর ধরে এই পেশায় আছি