কৃষকসেতু, পূর্ব বর্ধমান:- বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্ট থেকে কোটি কোটি টাকা উধাও হয়ে যাওয়া কাণ্ডের তদন্তে প্রাক্তন উপাচার্য ডঃ নিমাই চন্দ্র সাহাকে তলব করেছিল সিআইডি। সেই তলব মোতাবেক আইনজীবীকে সঙ্গে নিয়ে বুধবার সকাল সাড়ে দশটার মধ্যেই বর্ধমানের সিআইডি দফতরে পৌছে যান প্রাক্তন উপাচার্য।সিআইডি অফিসারদের জেরার মুখোমুখি হয়ে দুপুর ২ টো ২০ মিনিট নাগাদ তিনি বাইরে বেরিয়ে আসেন।

তবে এদিন সিআইডি দফতরে ঢোকার সময় এবং বাইরে বেরিয়ে সাংবাদিকদের করা কোন প্রশ্নের উত্তর নিমাই বাবু দেন নি। “নো কমেন্টস‘ প্লিজ আমাকে যেতেদিন“-এইটুকু কথা বলেই নিজের আইনজীবীর সঙ্গে টৌটো চেপে তিনি বেরিয়ে যান।
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় ১ কোটি ৯৪ লক্ষ টাকা ২০২৩ সালের মার্চ – এপ্রিল মাস নাগাদ উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের “তিনটি ফিক্সড ডিপোজিট“ প্রি ম্যাচুরিটি করিয়ে অচেনা ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে টাকা ট্রান্সফার করার অভিযোগ ওঠে। এমন ঘটনায় বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ প্রশাসনিক কর্তাদের যোগ সাজশ থাকার অভিযোগ নিয়ে তখন বিস্তর জলঘোলাও হয়।তা নিয়ে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে তদন্ত কমিটিও গঠন করা হলেও বর্ধমান থানায় এফ আই আর করা হয় প্রায় এক বছর বাদে।
এফ আই আর দায়েরে এত বিলম্ব নিয়ে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরেই ওঠে নানান প্রশ্ন। সেই পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন সহকারী রেজিস্ট্রার দেবমাল্য ঘোষ এই ঘটনার প্রেক্ষিতে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন।ঘটনার দু’বছর পরেও উধাও হয়ে যাওয়া প্রায় দু’কোটি টাকার সন্ধান এখনো মেলেনি।এমনকি ঘটনার সঙ্গে যুক্ত কেউ সাজাও পায়নি।
এমত পরিস্থিতিতে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্ট থেকে কোটি কোটি টাকা গায়েব হয়ে যাওয়ার ঘটনা নিয়ে ‘ক্যাগ’-কে রিপোর্ট পেশ করার জন্যে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।’ইডি’ও বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক দুর্নীতি নিয়েও তদন্ত শুরু করেছে।পাশাপাশি হাই কোর্ট রাজ্য সরকারকেও তদন্তের রিপোট আদালতে জমা দিতে বলেছে।
জানা গিয়েছে ৩০ জুন আদালত একসঙ্গে সব রিপোর্ট খতিয়ে দেখবে।তার প্রাক্কালে সিআইডি ও পুলিশ বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় ২কোটি টাকা গায়েব হয়ে যাওয়ার ঘটনার তদন্তে নামে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ’ক্লু’ পায় ।তদন্তকারী পুলিশ ও সিআইডি কর্তারা জানতে পারেন, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কলকাতার বিজয়গড়ের ঠিকাদার সুব্রত দাস-সহ একাধিকজনের অ্যাকাউন্টে গিয়েছিল। পুলিশ ও সিআইডি ওই ঠিকাদারকে গ্রেফতার করে। পরে বর্ধমান ও খণ্ডঘোষের দু’জন এবং রাস্ট্রায়াত্ব ব্যাঙ্কের ম্যানেজারকে গ্রেফতার করে।
এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মীকে পুলিশ ধরে। তবে সিআইডি এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত বলে যাঁকে মনে করছে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ দফতরের সেই কর্মী ভক্ত মণ্ডল এখনও অধরা রয়ে আছে।
এ দিকে এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের আভ্যন্তরীণ তদন্তেও বেশ কিছু তথ্য উঠে আসায়। তা খতিয়ে দেখার জন্যে হাই কোর্ট সিআইডিকে নির্দেশ দেয়।
তার ভিত্তিতেই সিআইডি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য নিমাই চন্দ্র সাহাকে ১৮ জনু বর্ধমানের
সি আই ডি দফতরে তলব করে। নিমাই চন্দ্র সাহার আইনজীবী প্রদীপ্ত সিদ্ধান্ত বলেন,এদিন বেশ কিছু তথ্য জানতে চায় সিআইডির তদন্তকারী আধিকারিকরা।
তবে জিজ্ঞাসাবাদের সময় কোন ভিডিও রেকর্ডিং করা হয় নি। নিমাইবাবু তদন্তে সবরকম সাহায্য ও সহযোগিতা এদিন করেছেন।
আগামী দিনেও করবেন। প্রদীপ্ত বাবার কথায় জানা গিয়েছে,সম্ভবত আবার আগামী ৩০ জুন সিআইডি বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য
নিমাই চন্দ্র সাহাকে ফের তলব করতে পারে।
সিআইডি রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৬ টি একাউন্ট ফ্রিজ করা হয়েছে।
৯ জন অভিযুক্তের মধ্যে ৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা এখন জামিনে মুক্ত । ২ জন আগাম জামিন নিয়েছেন। একাধিক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিক্সড ডিপোজিট ভেঙে নয়ছয় হয়েছে বলে সিআইডির দাবি।