ক্যানসার, হৃদরোগ, সর্দি-কাশি-হাঁপানি, হজমের গোলমাল বা ডায়াবেটিস সবেতেই খুব কার্যকারী ড্রাগন ফল। ড্রাগন ফলে ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম-সহ আরও অনেক পুষ্টিগুণ থাকায় ড্রাগন ফল খুব উপাদেয় ও স্বাস্থ্যকর।

অন্যান্য ক্যাকটাস জাতীয় ফসলের ন্যায় ড্রাগন ফলের উত্পত্তি মরু অঞ্চলে নয়, বরং এটি পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত সমৃদ্ধ মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার ফল।ড্রাগন ফল চাষ করতে উষ্ণ-আর্দ্র আবহাওয়াতে খুব অম্ল বা ক্ষার মাটি ছাড়া প্রায় সব ধরনের মাটির প্রয়োজন। গড় ২০ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা এবং বাত্সরিক ৫০০ থেকে ১০০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতে ড্রাগন ফল চাষ হয়ে থাকে।
ড্রাগন ফল নরম কাণ্ড বিশিষ্ট হওয়ায় ৬-৭ ফুট উঁচু এবং ৫ ইঞ্চি চওড়া সিমেন্টের চারকোণা পোস্ট অবলম্বন হিসেবে ব্যবহার করা হয় । জমির দৈর্ঘ্য বরাবর ৬ ফুট চওড়া এবং ন্যূনতম ৬ ইঞ্চি বেড় বানিয়ে তার ঠিক মাঝ বরাবর সিমেন্টের পোস্টগুলি ৮x৮ ফুট দূরত্বে লাইন করে বসাতে হবে। দুইটি বেড়ের মাঝে ১.৫ থেকে ২ ফুট চওড়া নালা থাকবে যা সেচের কাজে ও বর্ষাকালে জল নিকাশের জন্য ব্যবহৃত হবে ।
ড্রাগন ফল অঙ্গজ পদ্ধতিতে বংশবিস্তার করে। ২ থেকে ৩ বছরের পুরনো শক্ত সবুজ ডাল দু’ ফুট লম্বা করে কেটে নিয়ে অক্সিন হরমোন সহযোগে বর্ষার মরশুমে মাটিতে খাড়াভাবে লাগালে দ্রুত শিকড় নিয়ে নতুন চারা তৈরি হয়। প্রতিটি সিমেন্ট পোস্টের চারদিকে চারটি মাদা তৈরি করতে হবে। চারা বসানোর অন্তত ১৫ দিন আগে মাদা প্রতি ৫০০ গ্রাম জৈবসার, একমুঠো হাড়গুঁড়ো ও ৫০ গ্রাম সিঙ্গেল-সুপার-ফসফেট মিশিয়ে মাটি তৈরি করতে হবে। মাদায় চারা গাছ বসিয়ে পোস্টের সঙ্গে পাট বা নারকেল দড়ি দিয়ে বেঁধে দিতে হবে। এরপর গাছের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সারের পরিমাণ বাড়াতে হবে। প্রাপ্তবয়স্ক গাছের ক্ষেত্রে রিং করে ১০ কেজি গোবর সার, ২৫ গ্রাম ইউরিয়া, ৭৫ গ্রাম সুফলা (১৫:১৫:১৫) দেওয়া হয়।
গাছের উচ্চতা বাড়লে অবলম্বন হিসেবে প্রতি সিমেন্টের পোস্টের মাথায় ২ ফুট ব্যাসের শক্ত লোহার রেলিং বা মোটর বাইকের টায়ার আটকে দেওয়া যেতে পারে, যার ওপর অবলম্বন করে পার্শ্বডালগুলি বৃদ্ধি পাবে এবং ছাতার মতো আকৃতি নেবে। সাধারণত গ্রীষ্মকালে চার থেকে পাঁচ দিন অন্তর এবং শীতে ৭ থেকে ৯ দিন অন্তর সেচ দেওয়ার প্রয়োজন হয়।ড্রাগন ফলে গাছ বীজ বপনের ১২ থেকে ১৫ মাসের মধ্যে ফল দেওয়া শুরু করে। তৃতীয় বছরের পর থেকে পোস্ট প্রতি ফলন দাঁড়ায় ৩০ থেকে ৩৫ কেজি । পূর্ণবয়স্ক বাগানের একর প্রতি গড় ফলন ৮ থেকে ১০ টন হয়ে থাকে। বর্তমানে প্রতি কেজি ড্রাগন ফলের বাজার মূল্য প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা বলে জানা গিয়েছে।