আবহাওয়া দক্ষিণবঙ্গ শিক্ষা লাইফ স্টাইল স্বাস্থ্য ভ্রমন ধর্ম কৃষি কাজ ক্রাইম

ধান উৎপন্ন হলেও কাঁদছে কৃষক, অথচ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে চালের দাম

By krishna Saha

Published :

WhatsApp Channel Join Now

অন্নদামঙ্গল কাব্যে ঈশ্বরী পাটনি প্রার্থনা করেছিলেন, ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে’। এখন সন্তানকে দু’বেলা মোটা চালের ভাত তুলে দিতেও কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ছে মায়েদের। গরিবের চাল হিসেবে পরিচিত স্বর্ণ, আইআর-৩৬ চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী। মধ্যবিত্তের মিনিকিটের দামও চড়া। তা নিয়ে তেমন সমস্যা না হলেও স্বর্ণ বা আইআর-৩৬ এর দাম বেড়ে যাওয়ায় সংসার টানতেই অনেকের নাভিশ্বাস উঠেছে। ১৫-২০দিনের মধ্যে এই চালের দাম কেজি প্রতি তিন থেকে চার টাকা বেড়েছে। তবে রাইসমিলে চালের দাম হেরফের হয়নি। ফড়েদের দৌরাত্ম্যেই চালের দাম বাড়ছে বলে অভিযোগ। চালের বাজারদর ফড়েরাই ঠিক করে।

 

 

রাইসমিল মালিক সংগঠনের পক্ষে সুব্রত মণ্ডল বলেন, প্রতি কুইন্টাল স্বর্ণ চাল ৩৩৫০টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। আইআর-৩৬ রাইসমিল থেকে ৩৪০০টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। রাইসমিল থেকে চাল সরাসরি বাজারে যায় না। মিডিলম্যানের মাধ্যমে তা বাজারে বিক্রি হয়। চাল ব্যবসায়ী মাধব মণ্ডল বলেন, খোলা বাজারে চালের দাম কয়েকদিনের মধ্যে বেড়েছে। স্বর্ণ চাল ৩৬-৩৭টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আইআর-৩৬ এর দামও প্রায় সমান। কয়েকদিন আগেও স্বর্ণ চাল ৩২-৩৪টাকা কেজি দরে পাওয়া যেত। ব্যবসায়ীদের দাবি, এই চালের দাম সব জায়গায় সমান নয়। কোথাও কোথাও দামে এক থেকে দু’টাকা পার্থক্য হয়।

 

 

ছোটনীলপুরে থাকেন ডায়মন্ডহারবারের সুজন দাস। ঘুগনি বিক্রি করে তিনি সংসার চালান। তিনি বলেন, সরকার রেশনে ফ্রিতে চাল দিচ্ছে। আমার কার্ড বাড়িতে রয়েছে। এখানে চাল কিনেই খাই। স্বর্ণ চালের দাম সবচেয়ে কম ছিল। এখন সেটাও বেড়ে গিয়েছে। রোজগার করতে কালঘাম ছুটে যাচ্ছে। ৩৭টাকা কেজি দরে চাল কিনব কীভাবে! বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে ফুটপাতে থাকা এক হোটেল মালিক বলেন, আর্থিকভাবে দুর্বল পরিবারের লোকজনই খেতে আসেন। একসময় ৩০ টাকায় সব্জি, ভাত বিক্রি করতাম। এখন তা সম্ভব নয়। দাম বাড়াতেই হবে। সমস্ত জিনিসের দাম বেড়ে গিয়েছে। শহরের বাসিন্দা পল্লব ভট্টাচার্য বলেন, গরিবের ভরসা স্বর্ণ। এই চালের দাম বেড়েছে। সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

See also  সহায়ক মূল্যে ধান বেচা কেনায় সমস্যা নিয়ে আলোচনা পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের খাদ্য স্থায়ী সমিতির সভায়

 

রাইসমিল মালিকদের একাংশের দাবি, বর্ষার সময় ধানের জোগান কম থাকে। তাছাড়া এইসময় চাল তৈরি করাও বেশ ঝক্কির। দাম বেশি পাওয়ার আশায় একসময় রাইসমিল মালিকরা গোডাউনে আগে থেকে চাল মজুত রাখত। কিন্তু গত ১০ বছরে এই পদ্ধতি পুরোপুরি বদলে গিয়েছে। এখন প্রতিটি রাইসমিলে ‘ড্রায়ার’ চলে এসেছে। বর্ষাকালে ধান শুকাতে অসুবিধা হয় না। সারা বছরই চাল উৎপাদন করা যায়। মিডিলম্যানরা রাইসমিল থেকে চাল নিয়ে গিয়ে মজুত করে। পরে তারা তাদের ইচ্ছেমতো দাম ঠিক করে।

 

 

কৃষিদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, পূর্ব বর্ধমান জেলায় রেকর্ড পরিমাণ স্বর্ণ ধান উৎপাদন হয়। এখান থেকেই বিভিন্ন জেলায় চাল যায়। গত দু’বছরে ধানের উৎপাদনও ভালো হয়েছিল। রাজ্যের অন্যান্য জেলায়ও উৎপাদনে খামতি ছিল না। তারপরও দাম ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন।

krishna Saha

আমার নাম কৃষ্ণ কুমার সাহা, আমি ফুল টাইম সাংবাদিকতা করি।গত ৮ বছর ধরে এই পেশায় আছি