আবহাওয়া দক্ষিণবঙ্গ শিক্ষা লাইফ স্টাইল স্বাস্থ্য ভ্রমন ধর্ম কৃষি কাজ ক্রাইম

বর্ধমান রাজবাড়ির পতনের কারন ? খন্ড -১

By krishna Saha

Published :

WhatsApp Channel Join Now

অবিভক্ত বাংলার উচ্চশ্রেণির জমিদাররা নিজেদের রাজা পরিচয় দিয়ে গর্ববোধ করতেন ! স্বাভাবিক ভঙ্গিমায় বিস্তৃন্ন অবিভক্ত বাংলা বিহার উড়িষ্যা ছিল “বর্ধমান রাজপরিবারের” অধীনে !শুরুটা সেই শাসক শ্রেণী বাংলার নবাবরা ১৭১৭ সালের মাঝামাঝি থেকে ১৮৮০ সাল পর্যন্ত দিল্লির “মুঘল সাম্রাজ্যের” অধীনে এলাকা শাসন করেছিলেন ! মুর্শিদাবাদের নবাব “মুর্শিদকুলি জাফর খান” তার সামন্ত প্রধানদের মাধ্যমে এলাকা শাসন করতেন ! জমিদাররা মূলত ভূমিপতি বা জোতদার নামে পরিচিত ছিলেন, যা সমসাময়িক ইউরোপ মহাদেশের “দাসত্ব ব্যবস্থার” সমকক্ষ !

রাজ্যে অধিকাংশ গ্রামে জমিদারদের আধিপত্য এবং দুর্দান্ত প্রতাপ ছিল ! ১৪৯৮ সাল থেকে বাংলার “গাইন” পরিবার ছিল বিশিষ্ট জমিদার, যাদের প্রচুর জমিজায়গা এবং ধনসম্পত্তির মালিকানা ছিলেন !সম্ভ্ৰান্ত কায়স্থ জমিদার পরিবারটি ধান্যকুরিয়ায় তাদের পৈতৃক রাজ্দুর্গ তৈরি করেছিলেন !
সেকালীন বিহার প্রদেশের হাজিপুরে ঠাকুর হরিবংশ নারায়ণ সিং প্রায় সাড়ে বাইশ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা শাসন করেছিলেন, কিন্তু পরবর্তীকালে মোট ভূসম্পত্তির ৭০% ইংরেজ পরিচালিত “ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি” দখল নিয়ে নেয় !গঙ্গাবক্ষে হাওড়ার পশ্চিমে অন্তর্গত “দত্তচৌধুরী” বনেদি জমিদার পরিবার ছিলেন সমগ্র মুজাফরপুরের একছত্র মালিকানাধীন !

আরো পড়ুন –  বর্ধমান রাজবাড়ির পতনের কারন ? খন্ড -২

বর্ধমানের রাজঘরানার পূর্ববর্তী মহারাজারা “খত্রী” সম্প্রদায়ভুক্ত ছিলেন ! বংশপরম্পরায় পাঞ্জাবের “কাপুর” জাতিগত সম্পদায়ের অন্তর্গত !তৎকালীন মহারাজা “ভাদুর তেজ চাঁদ রায়” দত্তক নেন “চুনিলাল কাপুর” কে ! যিনি পরে বর্ধমানের জমিদারির মালিকানা গ্রহণ করেন !

মহারাজা “সংগ্রাম রায়” উড়িষ্যার দেবতার শহর পুরীতে তীর্থযাত্রার জন্য গিয়েছিলেন !তারপর বর্ধমান শহরের কাছে “বৈকুণ্ঠপুরে” স্থায়ীভাবে বসবাস করতে থাকেন !তিনি এবং পুত্র বঙ্কু বিহারী বিশিষ্ট অর্থ ব্যবসায়ী হিসাবে ব্যাপকভাবে সমৃদ্ধ হন !

১৬৫৭ খ্রিষ্টাব্দে মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের শাসনামলে বঙ্কু বিহারীর পুত্র আবু রায়কে বর্ধমান জেলার রেকাবি বাজার ও মুগলটুলির রাজস্ব আদায় এবং জনগণের আইন শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিযুক্ত করা হয় !

বর্ধমানের রাজ্ পরিবারটি বাণিজ্যে উন্নতি লাভ করতে থাকে এবং আবু রায়ের পুত্র বাবু রায় বৃহৎ সম্পত্তি অর্জন করে পরিবারের প্রতিপত্তি দ্বিগুন বাড়িয়ে তোলেন ! তিনি এলাকার একজন গুরুত্বপূর্ণ জমিদার রাম রায়ের কাছ থেকে মূল্যবান তিনটি সম্পত্তি ক্রয় করেন !ঘনশ্যাম রায়ের পুত্র কৃষ্ণরাম রায় ১৬৮৯ খ্রিস্টাব্দে ঔরঙ্গজেবের কাছ থেকে চিঠিমারফত এস্টেটের “জমিদারের” স্বীকৃতি লাভ করেন !

See also  কলকাতার আঙ্গিকে পূর্ব বর্ধমানের গৃহিনীদের জন্য আয়োজিত হল রন্ধন প্রতিযোগীতা

কৃষ্ণরাম রায়কে কৃষকদের কাছ থেকে রাজস্ব আদায় সীমাবদ্ধ রাখতে ও চাষাবাদকে উৎসাহিত করতে এবং আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল ! কৃষি জমির জন্য নজরানা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৫০ টাকা !

বাংলার “চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের” সময় ব্রিটিশদের খুশি করার জন্য বর্ধমানের মহারাজারা বৃহৎ অংকের খাজনা সংগ্রহ করতেন ! তারা কনোদিন “চেম্বার অফ প্রিন্সের” সদস্য ছিলেন না এবং ব্রিটিশ সরকারের সাথে তাদের কোন চুক্তি ছিল না !

বর্ধমানের মহারাজারা যে জমিগুলি থেকে খাজনা সংগ্রহ করতেন সেগুলি সরাসরি ভারতীয় সিভিল সার্ভিস অফিসারদের দ্বারা পরিচালিত হতো !এইভাবে রাজা ও মহারাজা উপাধি নিয়ে সার্বভৌমত্বের কোনো নিদর্শন রাখেন নাই !সেই অর্থেই “বর্ধমানের মহারাজারা” অভিজাত বা প্রকৃত বনেদিয়ানা ছিলেন না, যদিও তারা ছিল অত্যন্ত ধনী এবং প্রভাবশালী ব্যবসায়ী !

ARTICLE PUBLISHED BY রথীন রায়

দ্বিতীয় খন্ডের জন্য অপেক্ষা করুন ১২/০১/২২ – পড়ুন

krishna Saha

আমার নাম কৃষ্ণ কুমার সাহা, আমি ফুল টাইম সাংবাদিকতা করি।গত ৮ বছর ধরে এই পেশায় আছি