উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়, সুন্দরবন: শতাব্দী প্রাচীন এন্ডোফ্রেজারের বাংলো সমুদ্রের করাল গ্রাসে বিলীন হতে বসেছে,সংরক্ষণ নিয়ে মাথা ব্যাথা নেই প্রশাসনের।দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার নামখানা ব্লকের ফ্রেজারগঞ্জ কোস্টাল থানার ঢিল ছোড়া দূরত্বে শতাব্দী প্রাচীন এন্ডোফেরজারের বাংলোর ধ্বংসস্তূপ দেখলে পর্যটক থেকে এলাকাবাসীর একটাই প্রশ্ন সংস্কার কি করা যেত না, সমুদ্রের করাল গ্রাস থেকে কি উদ্ধার করা সম্ভব নয়, তবে এ প্রশ্নের উত্তর না মিললেও কয়েক মাসের মধ্যেই এখানে এন্ডোফ্রেজারের মূর্তি স্থাপিত হবে সেটার আশ্বাস মিলেছে।

উল্লেখ্য এক সময় এইফ্রেজারগঞ্জ অত্যাচারী ইংরেজদের পদধ্বনিতে কম্পিত হয়েছিল। পদদলিত হয়েছিল এদেশের মান সম্মান সংস্কৃতি। তৎকালীন সময়ে এই নামখানা ব্লকের ফ্রেজারগঞ্জ এলাকায় আবির্ভাব হয়েছিল ইংরেজ এন্ডোফ্রেজারের।ফ্রেজারগঞ্জ হল পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার অন্তর্ভুক্ত কাকদ্বীপ মহকুমার নামখানা ব্লকের একটি গ্রাম, বর্তমানে বকখালির সি বিচ লাগোয়া।অত্যাচারী ইংরেজ শাসক স্যার এন্ডেফ্রেজারের নাম অনুসারে নামাঙ্কিত এই জায়গাটি এখনো ইতিহাসের শেষ সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে।ফ্রেজার সাহেবের অতিথি শালার একটি ধ্বংসাবশেষ অবশিষ্ট এখানে।


সালটা ১৯০৩ উড়িষ্যা থেকে বাংলার ছোট লাট লেফটেন্যান্ট গভর্মেন্ট হয়ে গেলেন এন্ডোফ্রেজার। তবে শাসন করার আগেই তিনি এ সমস্ত ঘটনা সমস্ত রাজত্ব কি পরিভ্রমন করার বাসনা নিয়ে বঙ্গোপসাগরের কূলে একটি ছোট্ট গ্রাম আবিষ্কার করেন যার নাম নারায়ন তলা।আর যার প্রেমে পড়ে ফ্রেজার সাহেব তৈরি করলেন বিলাসবহুল বাংলো।বাংলোর চারিদিকে হাজার হাজার নারকেল গাছ বসিয়ে নারকেল বাগান তৈরি করে ফেলেন। পরবর্তীকালে ফ্রেজার সাহেবের নাম অনুসরণ করে নারায়ণতলা হয়ে ওঠে ফ্রেজারগঞ্জ। জনশ্রুতি আছে কলকাতায় যাওয়ার সময় ফ্রেজার সাহাবের জাহাজ এই জায়গায় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে।
তাকে মৃত অবস্থায় এক গ্রাম্য কিশোরী তাকে উদ্ধার করে। সুস্থ হবার পর ফ্রেজার সাহেব এই জায়গায় থাকা শুরু করেন।তারপর ও শাসক দলের লোক জন ওই ফ্রেজার সাহেবকে নিয়ে কলকাতায় ফিরেন।তবে যে কিশোরী ফ্রেজারসাহেব কে সেবাকরে শুশ্রূষা করে বাঁচিয়ে ছিলেন তার আর খোঁজ মেলেনি, কেউ বলেন খুন করা হয়েছে,কেউ বলেন বেপাত্তা, তবে সঠিক কি কারণ তাও এখনো জানা যায়নি। তবে বঙ্গোপসাগরে উপকূল হওয়ায় দিনের পর দিন ভূমিক্ষয় হওয়া শুরু করে।তবে ১৯০৮ সালে গভর্নর বদল হবার পর আর কোন ব্রিটিশ অঞ্চল টি সংরক্ষণে আগ্রহ দেখায়নি। ১৯১১ সালে ভারতের রাজধানী কলকাতা থেকে দিল্লিতে স্থানান্তরিত হলে অন্ধকারে তলিয়ে যায় এই সমস্ত এলাকা।
তারপর সময় যত এগিয়েছে উত্তাল সমুদ্র আস্তে আস্তে গ্রাস করেছে এই বাংলোকে, আর শেষ সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে থাকা ফ্রেজার সাহেবের বাংলোকে অসহায় ভাবে আত্মসমর্পণ করতে হয়েছে সমুদ্রের কাছে। বিশাল বাংলো নারকেল বাগান তলিয়ে যাবার পর কেবলমাত্র অতিথি শালার ভগ্নাবশেষ টুকরো টুকরো ইট এখনো আছে ইতিহাসের শেষ সাক্ষী হিসাবে।হয়তো আর কিছু দিনের মধ্যে সে ও সমুদ্রে বিলীন হয়ে যাবে। তবে স্বাধীনতার পর যে সমস্ত সরকার এসেছে এই বাংলো বাঁচাবার কোন চেষ্টা করেছিল কিনা তা জানা যায়নি।
তবে বর্তমান সরকারের সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রীর চেষ্টায় আর কিছু দিনের মধ্যে তৈরি হবে স্যার এন্ডোফ্রেজারের মূর্তি।যা জানান দেবে বিগত দিনে ছিল আজ ও দাঁড়িয়ে রয়েছে ইতিহাসের শেষ সাক্ষী হিসেবে।তবে এটি কে বাঁচানোর শেষ চেষ্টা করার দাবি তুললো ইতিহাস প্রেমী মানুষ জন।