প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় বর্ধমান ২ জুলাই

ইডি অফিসার সেজে দেড় কোটি টাকার প্রতারণা !
সেই অভিযোগে তৃণমূলের প্রভাবশালী নেতা ,মন্ত্রী,
বিধায়কদের ঘনিষ্ট পূর্ব বর্ধমানের রায়নার ক্ষেমতা গ্রাম নিবাসী জিন্নার আলীর বাড়িতে হানা দিল ইডি
।বুধবার সাত সকালে ভারী সংখ্যায় কেন্দ্রীয় বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে শেখ জিন্নার আলীর বাড়িতে পৌছে যায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি-র অফিসাররা। ক্ষেমতা গ্রামে থাকা জিন্নার আলীর প্রাসাদোপম বাড়ি ঘিরে রাখে কেন্দ্রীয় বাহিনী। বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করেই তল্লাশী শুরু করে দেন ইডি-র অফিসাররা। কলকাতা সহ রাজ্যের আরও একাধীক জায়গায় থাকা জিন্নার আলীর অপর পাঁচটি বাড়িতেও ইডি অফিসাররা এদিন হানা দেয় । জিন্নার আলীর ব্যবহার করা দামি একটি চার চাকা গাড়ি এদিন বিকালে ক্ষেমতা গ্রামের বাড়ি থেকে ইডি বাজেয়াপ্ত করে কলকাতায় নিয়ে যায়।
প্রায় একই সময়ে অন্য ইডি অফিসাররা জিন্নার আলীকে তাঁর কলকাতার নিউটাউনের বাড়ি থেকে আটক করেছে ।
এদিকে তৃণমূলের প্রভাবশালী নেতা ,মন্ত্রী ও বিধায়কদের ঘনিষ্ট জিন্নার আলীকে ইডি আটক করার খবর চাউর হতেই রাজনৈতিক মহলে শোরগোঢ় পড়ে যায়। কড়া ভাষায় তৃণমূলকে বেঁধা শুরু করে দেয় বিজেপি।বিজেপি নেতারা তৃণমূলের প্রভাবশালী নেতা ,মন্ত্রী ও বিধায়কদের সঙ্গে অভিযুক্ত জিন্নার আলীর ঘনিষ্টতার ছবি সামনে এনে কড়া ভাষায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানানো শুরু করে দিয়েছে। জেলা বিজেপির সহ সভাপতি মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বলেন,“জিন্নার আলীর মত ব্যক্তিরা তৃণমূলের সম্পদ। ভোট আসলে জিন্নার আলীর মতো ব্যক্তিরা তৃণমূলকে ফাণ্ডিং করে। তাই তৃণমূলের বিধায়ক ও মন্ত্রীদের সহায়তায় রাজ্য বিধানসভা থেকে শুরু করে আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় জিন্নার আলী পৌছে যেতে পেরেছে“। যদি বিজেপি নেতা মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্রর আনা এই অভিয়োগ মানতে চাননি তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যের মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস। তিনি দাবি করেন,বিধায়ক ও নেতা , মন্ত্রীদের সঙ্গে অনেকেই
ছবি তোলে । তার মানে এটা নয়, ছবি তোলা ওই ব্যক্তির করা কোন অপকর্মের সঙ্গে তৃণমূলের নেতা,মন্ত্রীরা যুক্ত ।
ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে,জিন্নার আলী নিজেকে
’ন্যাশনাল এন্টি ট্রাফিকিং কমিটির’ চেয়ারম্যান
বলে দাবি করতেন । যদিও সেটা আসলে একটি এন জি ও সংস্থা। ইডি সূত্রে আরো জানা গিয়েছে,“শেখ জিন্নার আলীর বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ এনেছেন এক বালি কারবারী। নিজেকে সিজিও কমপ্লেক্সের ইডি অফিসার পরিচয় দিয়ে জিন্নার আলী ওই বালি ব্যবসায়ীর কাছ থেকে দেড় কোটি টাকা আদায় করেছেন বলে অভিযোগ। অভিযোগকারী বালি ব্যবসায়ীর দাবি,’ তাঁকে একাধিক বার হুমকি দিয়ে সিজিও কমপ্লেক্সে হাজির হতে বাধ্য করার চেষ্টা করে জিন্নার আলি।
এই অভিযোগ সামনে আসতেই নড়ে চড়ে বসে ইডি
।
অভিযোগের ভিত্তিতে দিল্লি থেকে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের একটি বিশেষ তদন্তকারী দল এদিন শেখ জিন্নার আলীর ক্ষেমতা গ্রামের বাড়ি সহ রাজ্যের আরও পাঁচ জায়গায় থাকা জিন্নার আলীর বাড়িতে হানা দেয়। তদন্তকারী ইডি অফিসাররা এদিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ক্ষেমতা গ্রামের বাড়িতে টানা তল্লাশী চালিয়ে নানা নথিপত্র সংগ্রহ করার পাশাপাশি দামি একটি চারচাকা গাড়ি বাজেয়াপ্ত করে।
রায়নার বাসিন্দাদের কথায় জানা গিয়েছে,’মাত্র আড়াই বিঘা জমি আর কুড়ে ঘর ছিল জিন্নার আলীর সম্পদ । কিন্তু শাসক দলের নেতাদের সঙ্গে সক্ষতা গড়ে তুলে জিন্নার আলী কয়েক বছরে রাতারাতি কোটিপতি বনে যায় । রাজ্যের মন্ত্রী মলয় ঘটক সহ বর্ধমান উত্তর বিধানসভার বিধায়ক নিশীথ কুমার মালিক, জামালপুরের বিধায়ক অলোক মাঝি, কেতুগ্রামের বিধায়ক শেখ শাহনওয়াজ, মঙ্গলকোটের বিধায়ক অপূর্ব চৌধুরী, তৃণমূল নেতা কাজল শেখ সহ একাধিক নেতার সঙ্গে জিন্নার আলীর ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ছবি এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখাযায় ।
রায়নার ক্ষেমতা গ্রাম থেকে শুরু করে বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর, সটলেক, নিউটাইন, রাজারহাট প্রভৃতি জায়গায় জিন্নার আলী যে সব বাড়ি করেছেন তার আর্থিক উৎস এখন ইডি খুঁজছে বলে জানা গিয়েছে।