আবহাওয়া দক্ষিণবঙ্গ শিক্ষা লাইফ স্টাইল স্বাস্থ্য ভ্রমন ধর্ম কৃষি কাজ ক্রাইম

নাগাড়ে বৃষ্টিতে কার্যত বানভাসি পূর্ব বর্ধমান- ক্ষোভ বাড়ছে জেলাবাসীর

By krishna Saha

Published :

WhatsApp Channel Join Now

প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় বর্ধমান ২ আগষ্ট

নাগাড়ে বৃষ্টি। আর তাতেই কার্যত যেন বানভাসি অবস্থা তৈরি হয়েছে রাজ্যের শস্যগোলা হিসাবে পরিচিত পূর্ব বর্ধমান জেলার বিস্তির্ণ অংশে । জেলার পৌর এলাকা থেকে শুরু করে পঞ্চায়েত এলাকা , সর্বত্র এখন জল থইথই অবস্থা। এরই মধ্যে আবার বৃষ্টির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বিদ্যুৎ বিপর্যয় ।এমন অবস্থায় জল যন্ত্রনায় জেরবার জেলার আট থেকে আশি সকলেই ।

বৃষ্টির জলে এখন জলমগ্ন কাটোয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা।জলের দাপটে কাটোয়া শহর ও শহর লাগোয়া এলাকায় বিঘ্নিত যান চলাচল । কাটোয়া ১ নম্বর ব্লকের গাফুলিয়া ব্রিজের উপর দিয়ে বইছে জল।তার কারণে বন্ধ বাস চলাচল। একই ভাবে
টানা বৃষ্টির জেরে কাটোয়া এক নম্বর ও দু’নম্বর ব্লক জলমগ্ন হয়ে পড়ায় বেশ কিছু কাঁচা বাড়িও
ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কাটোয়া শহরের নিচু এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে জল ঢুকে পড়ায় সমস্যায় পড়েছেন সাধারণ মানুষ।এছাড়াও কাটোয়া শহরের কাছারি রোড, সার্কাস ময়দান, ১৪ নম্বর ওয়ার্ড, কুড়ি নম্বর ওয়ার্ড জলমগ্ন।

নাগাড়ে বৃষ্টিতে কালনা মহকুমার বিভিন্ন এলাকাও জল প্লাবিত হয়ে পড়েছে । কালনা শহরে ড্রেনের জল ছাপিয়ে রাস্তার উপর দিয়ে বইছে । রাস্তায় এখন হাটু সমান জল । শুধু তাই নয়,কালনা মহকুমার পাঁচটি ব্লকেই সড়কপথ-কৃষিজমি প্লাবিত হয়েছে। বেশ কিছু কাঁচা বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সমস্ত কৃষি জমি জলের তলায় চলে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।

যদিও কালনা মহকুমা কৃষি আধিকারিক ডক্টর পার্থ ঘোষ জানান,আমন ধান জমি প্লাবিত হয়ে গেলেও দুই একদিনের মধ্যে জল নেমে গেলে ধানের কোন ক্ষতি হবে না। পাটের পক্ষে এই বৃষ্টি আশীর্বাদ। পাট কেটে কৃষকদের জাগ দিতে আর অসুবিধা হবে না। তবে এই বৃষ্টি সবজি ফসলের ক্ষেত্রে ক্ষতি করবে বলেই আমাদের ধারণা।

জলপ্লাবিত হয়ে রয়েছে ভাতারের বিভিন্ন এলাকা ।
ভাতার বাজার সহ সংলগ্ন এলাকা জলমগ্ন হয়ে রয়েছে। বর্ধমান কাটোয়া রাজ্য সড়কের উপর দিয়ে তীব্র জলের স্রোত বইছে।জল থইথই অবস্থার ভাতার বাজারের বেশকয়েকটি পাড়ায় বাসিন্দারা গৃহবন্দি হয়ে পড়েছে। ভাতার, বলগোনা,মুরাতিপুর প্রভৃতি বাজার এলাকায় দোকানপাট জলে ডুবেছে‌। ভাতার বাজারে মুদিখানা ব্যবসায়ী স্বরূপ চক্রবর্তী দাবি করেছেন,তাঁর গোডাউন জলে ডুবে যাওয়ায় প্রায় ৩৫ লক্ষ টাকার সামগ্রী নষ্ট হয়ে গিয়েছে।ভাতারের কুমারুন গ্রামে গোয়াল ভেঙে ছয়টি গবাদিপশু মারা গিয়েছে ‌‌। ভাতার এলাকায় বেশকিছু মাটির বাড়ি ভেঙে পড়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে।

See also  দেখা মিললো বৃষ্টির, খুশি কৃষক পরিবারে

ভাতারের পাশাপাশি গুসকরা শহরও ডল প্লাবিত ।গুসকরা পুর এলাকার ৭ টি ওয়ার্ড জলমগ্ন। বৃষ্টি বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত এমন পরিস্থিতির পরিবর্তন সম্ভব নয় বলেই ধরে নিয়েছেন গুসকরার বাসিন্দারা।মেঘভাঙ্গা বৃষ্টিতে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে গুসকরা শহরের ৮, ৯,১২, ১৩, ১৫, ৪ এবং ৫ নম্বর ওয়ার্ড।পুরসভার পক্ষ থেকে জরুরি ভিত্তিতে কর্মীদের নামানো হয়েছে। হাঁটুজল জমেছে অনেকে এলাকাতেই। কিছু কিছু বাড়িতে জল ঢুকেও গেছে। ৮ ওয়ার্ডের রাস্তা দিয়ে যেন নদী বয়ে যাওয়ার মত অবস্থা তৈরি হয়েছে।রাস্তায় কোমর সমান জল । এলাকাবাসী জানাচ্ছেন,
ডিভিসি জল ছাড়ায় ক্যানেলগুলো এমনিতেই ভর্তি ।তার উপরে নাগাড়ে বৃষ্টির ফলে ফলেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

নাগাড়ে বৃষ্টির প্রভাব পড়েছে বর্ধমান শহরেও। জল জমেছে বেশ কিছু এলাকায়। শহরবাসী স্পষ্ট জানাচ্ছেন ,ঢাকঢোল পিটিয়ে নিকাশী ব্যবস্থার কাজ হয়েছে বলেছিল পুরসভা। কিন্তু প্রথম পরীক্ষাতেই ডাহা ফেল বর্ধমান পুরসভা বলে অভিযোগ শহরবাসীর। শহরের শুলিপুকুর, ষাঁড়খানা গলি, শ্যামসায়র পাড়, শ্যামলাল,
ঝাপানতলা সহ বেশ কিছু এলাকা এখন কার্যত জলভাসি।শুলিপুকুরের বাসিন্দা গণেশ সেন জানান, জল নামার ব্যবস্থা নেই। পুকুরের জল পাড়ায় ঢুকেছে। কাউকে বলেই কাজ হচ্ছে না।কেউ খোঁজ নেয়নি।অপর বাসিন্দা আসিফ খান বলেন, কাউন্সিলরের পাত্তা নেই।আমরা রাত জেগে আছি।জল না নামলে কাজেও বেরোতে পারছি না ।শহরের আর এক বাসিন্দা রাণা জানান, পুকুর বুঝিয়ে সমস্যা বাড়ানো হয়েছে।নালাগুলোর সংস্কার হয়নি। ডিভিসির ছাড়া জল বেরিয়ে যাবার পথ বুঁজে গেছে।পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় শহরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাজেপ্রতাপপুর ও সংলগ্ন এলাকা গুলির অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন স্থানীয় অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে।

অন্যদিকে শহর লাগোয়া রায়ান ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের পালিতপুর, ডাঙ্গাপাড়ার বিস্তীর্ণ এলাকাও জলমগ্ন।রাস্তাগুলিও জলভাসি। এক হাঁটু জল পেরিয়েই যাতায়াত করতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রাম বসন্তপুর সিলুটের রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। কাদরের জল রাস্তায় উঠে গেছে।এই রাস্তা শুধুমাত্র আউশগ্রামের সঙ্গে যোগাযোগ নয়,বীরভূমের সঙ্গেই যোগাযোগের অন্যতম রাস্তা। কিন্তু রাস্তা এখন জলের তলায়।অন্যদিকে বর্ধমান বোলপুর জাতীয় সড়কের ভেদিয়া রেলওয়ে আণ্ডারপাশ জলমগ্ন হওয়ায় যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে ।বাদশাহি রোডের মুরাতিপুরে নালা সংস্কার সহ একাধিক দাবীতে শুক্রবার রাস্তা অবরোধ করেন গ্রামের বাসিন্দারা। তাদের দাবী দীর্ঘদিন ধরে নালা সংস্কার হয় নি।বারে বারে আবেদন করেও সংস্কারে কেউ উদ্যোগ নেয় নি।নালা সংস্কার না হওয়ায় মুরাতিপুরের বিভিন্ন জায়গা জলমগ্ন হয়ে গেছে। বাদশাহি রোড অবরোধ করায় বাস সহ বিভিন্ন যানবাহন আটকে পড়ে।

See also  চৈত্র সংক্রান্তির দিন হালকা ঝোড়ো হাওয়া এবং বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টির পূর্বাভাস

জেলা পরিষদের সভাধিপতি শ্যামাপ্রসন্ন লোহার বলেন, গোটা জেলাতেই বন্যা পরিস্থিতির মত অবস্থা তৈরি হয়েছে। তবে ডিভিসির সেচ খালে জল ছাড়া বন্ধ হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টার রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে জেলায়।বৃষ্টির পরিমাণ ২০২.৫ মিলিমিটার।আমরা পরিস্থিতির উপর নজর রাখছি ।

krishna Saha

আমার নাম কৃষ্ণ কুমার সাহা, আমি ফুল টাইম সাংবাদিকতা করি।গত ৮ বছর ধরে এই পেশায় আছি