নীলঝড়
এখন সরকার দুয়ারে ঘুরছে-যেটা কিনা খুবই সুখের কথা; হোক না সে মূলত শিক্ষা শ্রী,কন্যাশ্রী,রপশ্রী,ঐক্যশ্রী কিংবা লক্ষীভাণ্ডারের জনে্য;এই আর্থিক সুবিধা বা অন্য কিছু অফিসিয়াল কাজে কর্মে মানুষ যদি পাড়ায় বসে সুবিধা পায় সেটা কম কি; কিন্তু এটা সেই পুষ্টি হীন মুখে প্রসাধন মেখে চকচকে হবার মতই সত্য;যার স্হায়িত্ব ক্ষণিক;এবং তাতে প্রকৃত সৌন্দর্য পরিস্ফুট হয় ই না।

আমাদের প্রকৃত সৌন্দর্য গুলি র মধ্যে অন্যতম প্রধান হল কৃষি–যার বিধাতা হলেন কৃষক;এখনো পযর্ন্ত কৃষির প্রগতিশীল উন্নতির জন্যে সরকার কে দুয়ারে-পাড়ায় , নিদেনপক্ষে গ্রামেও নামতে দেখা গেল না।কৃষি উন্নয়ন দপ্তর জেলা শহরের(রাজধানীতে তো বটেই) ধোপ দস্তুর ঘরে,আরো বেশি হলে ব্লকে চোখ বুজে বসে আছে।আমাদের বর্ধমান জেলা ধান পাত্র;আমনধানের সাথে উত্তর বর্ধমান এ প্রধানতঃ ক্যানেলের সুবিধা যুক্ত এলাকায় বোরো চাষ শুরু হয়;পরে অন্যত্র;এবং আরো; অগভীর নলকূপ এর সাহায্যে জল তুলে চাষ হতে শুরু করল;জলস্তর নেমে যেতে ১০-১২ফুট গর্ত খুলে পাম্পকে নামিয়ে জল তুলতেও দেখা গেল চাষিদের। গভীর নলকূপ ও কমহলেও কোথাও কোথাও আছে;
যেখানে আছে তারা সৌভাগ্যবান কৃষি-দেবতা।ব্লক স্তর থেকে ঢালাও অনুমোদন দিয়ে মাঠে মাঠে সাবমার্সিবেল পাম্প বসানো হলো, হলো বিদ্যুতের ব্যবস্থা। কিন্তু দীর্ঘদিন এক ই জমিতে আমন-বোরো আমন-বোরো করতে করতে জমির উর্বরতা গেল কমে,মানে চূড়ান্ত শেষ সীমানায়-অপুষ্টিগ্রস্ত হারজিরজিরে মায়ের মতো; সঙ্গে যুক্ত হলো রোগ-পোকার উপদ্রব আর মরার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ; ওষুধে কাজ করছে না; তার উপর কীটনাশকের আকাশ ছোঁয়া দর!
বহুক্ষেত্রে কৃষক এই কারণে প্রায় প্রতি বছরই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কিন্তু ওই যে বলে-আশায় বাঁচে চাষা;তাই প্রতিবছর বোরো ধান–জলপাওয়া,পচা-আধপচা,আলে রাস্তায় খামারে করে ঘরে তুলতে ‘নুন আনতে পান্তা ফুরানো’র মতো অবস্হা;তখন চাষী মাঠে দাঁড়িয়ে কপালে হাত চাপড়ে বলে-আর নয় বোরো। কিন্তু আমন শেষ হতেই খাঁ খাঁ মাঠে র দিকে তাকিয়ে হু হু করে ওঠে কাদাজল ছেনে লক্ষ্মী তুলে আনা সরল সাদা সিদে কৃষকের মন; আগুনের আহ্বানে পতঙ্গের মতো, সংসার বাঁ চাতে, ছেলে মেয়ে র শিক্ষা চালু রখতে, খেতে-পরতে,রোগে-জ্বালায় চোখের সামনে জ্যান্ত হয়ে ওঠে মরা মাঠ,-যাকিনা তার একমাত্র ভরসার জায়গা, একমাত্র ব্যাঙ্ক-ব্যালেন্স;এই আদিম হাতছানি- কে সে রদ করবে কেমনে করে! চোখের সামনে দিনের পরদিন নাগালের বাইরে চলে যায় অনিয়ন্ত্রিত বাজার দর, সেখানে আর পাঁচজনের মতো ই তাকে যেতে হয় থলি হাতে।
ধান তাদের কাছে মালক্ষী;এক বছর ক্ষতি হলে পরের বছর পুষিয়ে দেবে মা-এক বুক আশা; কিন্তু বাস্তবে সেদিন-সে বছর আর আসে না তার পোড়া কপালে;অথচ বিকল্প নানান উপায় হাতের কাছে থাকতেও তাতে হাত লাগাতে সাহস হয় তার।কে দেবে তাকে ভরসা,কে দেবে সাহস!!সেটা করার কথা কল্যানকামী সরকারের। এখানে দুয়ারে রেশন পাওয়া যায়, সম্প্র্রতি পাড়ায় পাড়ায় মাস্টারো; তবে কেন–কৃষি দপ্তর কিংবা কৃষি গবেষণা র সাথে যুক্ত কর্মীরা চাষিদের পাড়ায় গিয়ে তাদের নতুন চিন্তা ধারা য় উদ্বুদ্ধ করছেন না!সত্যি কথা বলতে করানো হচ্ছে না;যেটা সবার আগে ই করা দরকার।
এক ই জমিতে প্রতিবছর বোরো চাষ না করে বিকল্প চাষে তাদের উৎসাহিত করে তিল তিসি সূর্য মুখী জাতীয় তৈল বীজ এবং ডাল শস্য চাষ করা। এতে খরচ অনেক কম;লাভ ভালো; দরকার শুধু পরিকল্পনা; এখানে সবচেয়ে কম খরচ জলের;যেজলের জন্যে অদূরভবিষ্যতে হাহাকার দেখা দেবে;তারো সংরক্ষণ জরুরী যখন। অতদূর যেতে হবে না ;গ্রীষ্মকালেই আমাদের ব্যবহৃত নলকূপ ব্যবহার যোগ্য থাকে না; জলস্তর যায় নেমে; ফিল্টারের হ্যাঙ্গিগ বাড়িয় ও মেলেনা পানীয়জল। বোরো চাষে অপর্যাপ্ত জলের অপচয় হয় ফি বছর;এটা বন্ধ করতে এবং কৃষি আর কৃষককে বাঁ চাতে বিকল্প এর খোঁজ করতে ই হবে।