কৃষকসেতু ,সমুজ্জ্বল সামন্ত , মদনপুর :- হুগলি জেলার মানচিত্রে ‘সামন্ত’ পরিবার এক ঐতিহাসিক নাম। তাঁদেরই পূর্বসূরি প্রাণকৃষ্ণ সামন্তের নামে ষাটের দশকে একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন যতীন সামন্ত। স্থানীয় মানুষের চিকিৎসার সুবিধার্থে তিনি সে সময় রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল সেনের (যিনি ‘আরামবাগের গান্ধী’ নামে পরিচিত) সরকারের কাছে ৫০,০০০ টাকা দান করেন। সেই অর্থে মদনপুরে ‘প্রাণকৃষ্ণ সামন্ত স্বাস্থ্যকেন্দ্র’-এ ৮টি বেড চালু হয়। প্রফুল্ল সেন নিজে উপস্থিত থেকে এর উদ্বোধন করেন। পরবর্তীকালে আরও কিছু বেড যুক্ত হয় এবং হাসপাতালটি এলাকার নির্ভরযোগ্য চিকিৎসাকেন্দ্র রূপে পরিচিতি লাভ করে।

এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ডাক্তারদের থাকার কোয়ার্টার, মানসিক রোগের চিকিৎসা, এমনকি জটিল অস্ত্রোপচারের সুবিধাও ছিল। এলাকার বাইরে থেকেও বহু মানুষ এখানে চিকিৎসা করাতে আসতেন। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে অজানা কারণে বন্ধ হয়ে যায় বেড পরিষেবা। হাসপাতালে ধীরে ধীরে ভাঙনের ছবি দেখা দেয়। বর্তমানে এখানে কেবলমাত্র জ্বর, পেটের সমস্যা ইত্যাদির প্রাথমিক চিকিৎসা হয়। তাও সপ্তাহে মাত্র দুই দিন, চার ঘণ্টার জন্য একজন ডাক্তার আসেন।
বহুবার আবেদন জানিয়েও কোনো সুরাহা না পাওয়ায় হতাশ এলাকাবাসী। অসুস্থতা দেখা দিলে ২৮ কিলোমিটার দূরের আরামবাগ সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে যেতে হয়, যেখানে পৌঁছনোর আগেই অনেক রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হয়ে ওঠে, কেউ কেউ অ্যাম্বুলেন্সেই প্রাণ হারান।

এই পরিস্থিতিতে স্থানীয়দের স্পষ্ট আবেদন—সরকার যেন দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা দানের টাকা কাজে লাগিয়ে দ্রুত বেড পরিষেবা পুনরায় চালু করে, স্থায়ী ডাক্তার ও প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো ফিরিয়ে আনে। মানবিকতার স্বার্থে অবহেলিত, দরিদ্র মানুষদের চিকিৎসার অধিকার ফিরিয়ে দিতে এই পদক্ষেপ এখন সময়ের দাবি।