আবহাওয়া দক্ষিণবঙ্গ শিক্ষা লাইফ স্টাইল স্বাস্থ্য ভ্রমন ধর্ম কৃষি কাজ ক্রাইম

বর্তমান পরিস্থিতি ও বিদ্যালয়

By krishna Saha

Published :

WhatsApp Channel Join Now

লক্ষ্মীদাস দত্ত ( তনু ) :- এবার বিদ্যালয় খোলার সময় হয়ে এসেছে আর নয় অনেক করণা অমিক্রণ হলো, এবার বিদ্যালয় টা খোলো। বিদ্যালয় এ শুধু পড়াশোনাই হয়না আমাদের জীবন তরঙ্গে অনেক কিছু শেখানো হয় এই বিদ্যালয়ে। আমরা যারা বড় হয়েছি অথবা বড় হয়েছি তারা জানি আমাদের জীবনে বিদ্যালয়ের ভূমিকা, বিদ্যালয়ের পাঠরত ছাত্র-ছাত্রীরা সকলেই পড়াশোনা করে না তারা বিদ্যালয় এ এসে অজান্তেই অনেক কিছু শেখে যেমন প্রথমেই যে পার্থনা টি হয় যেখানে আমাদের দেশের জাতীয় সংগীত সুরে অথবা বে সুরে গাওয়া হয় অল্প হলেও সেখানে থেকেদার দেশভক্তি জন্ম নেয়, পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত প্রতিদিন প্রার্থনা সবাই জীবনী পাঠ বা বাণী পাঠ করা হয় সেখান থেকে তারা অনেক কিছু শেষ হয়ে যেগুলি ভবিষ্যতের জীবনে তাদের পাথেয় হয়ে উঠে। স্কুলের এক পোশাক পরে তারা যখন দিনের পর দিন আসতে থাকে তখন তাদের মধ্যে ভেদাভেদ হীন একাত্ম বোধ জাগ্রত হয় যেটা আমাদের জীবনে কম পাওনা নয়।

আমরা দেখতে পাই স্কুলের একটি ভাল ছেলে পড়াশোনায় ভাল রেজাল্ট করে যখন কোন সম্মান পায় তখন পড়াশোনায় খারাপ ছেলেটির ও মনে আনন্দ হয় ও গর্ব হয়, এবং তার মধ্যে একটা খিদে জন্মায় সেও মনে মনে তাকে ছুঁতে চায় এবং আমরা দেখেছি একটি পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়া ছেলে পড়াশোনায় ভালো হয়ে ওঠে। আবার পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়া ছেলেটি যখন খেলাধুলায় সুনাম অর্জন করে তখন তার বন্ধু যে পড়াশোনায় ভালো তার ওই পিছিয়ে পড়ার ছেলেটির জন্য গর্ভাশয় আনন্দ হয়, একজন ভালো নাটক করে একজন ভালো কবিতা আবৃতি করে একজন ভাল মিমিক্রি করে একজন ভাল অভিনয় করে হয়তো তারা অনেকেই পড়াশোনায় ভালো নয় কিন্তু তাদের প্রতিভা অন্যদিকে বিকশিত হয়, আর এই প্রতিভা বিকাশের ক্ষেত্র টি হল বিদ্যালয়।

See also  সাত সকালে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হলো এক স্কুল ছাত্রের


এমন অনেকেই আছে যাদের প্রথম কবিতা, প্রথম নিত্য, প্রথম গান প্রথম অভিনয় হয়েছিল এই স্কুল প্রাঙ্গনে , স্কুল প্রাঙ্গনে এমন একটি মঞ্চ যেখানে একজন অপটু ছাত্রছাত্রীকে পটু করে তোলে তার ভবিষ্যৎ জীবনে। আমরা জানি ভারতবর্ষের প্রথম প্রধানমন্ত্রী যখন স্কুলে বক্তব্য দিতেন তখন তার হাঁটু দুটি কাঁপত, সেই তিনি পরবর্তীকালে হয়ে উঠেছিলেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বক্তা। স্কুলজীবনে যে সমস্ত ব্যক্তি তাদের লেখালেখি শুরু করেছিলেন তারাই ভবিষ্যতে হয়েছিলেন বড় বড় সাহিত্যিক কবি, তাদের সাহিত্য রচনা শুরু হয়েছিল কিন্তু স্কুলের ম্যাগাজিনে লিখে। এমন অনেক বিখ্যাত বিখ্যাত খেলোয়াড় আছেন যারা স্কুলের মাঠ টি ছিল তাদের খেলার জগতে প্রথম পদার্পণ। এই পৃথিবীতে এমন কোন ব্যক্তি নেই তিনি বিখ্যাত হন নাই হন যিনি তাঁর স্কুল জীবন কে অস্বীকার করতে পারেন। আমাদের প্রত্যেকের কাছেই প্রথম শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী অর্থাৎ এই 10 বছর সময়কাল একটি সম্পদ। জীবদ্দশায় এই 10 বছর সময় কালের স্মৃতি আমাদের কাছে অতি মধুর।

যেসব পুষ্প থেকে পতঙ্গরা মধু সংগ্রহ করে জীবন ধারন করে যদি কোন কারণে সেই সমস্ত পুষ্প শুকিয়ে যায় তাহলে পতঙ্গদের কি হবে? আমরা কি আর রংবে রঙের প্রজাপতি, কালো ভ্রমর, প্রকৃতির শোভা বর্ধনকারী বিভিন্ন পতঙ্গ দেখতে পাবো? অথবা রংবেরঙের সুগন্ধি ফুল যদি শুকিয়ে যায় তাহলে পতঙ্গদের কি হবে সহজেই অনুমেয়। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সম্পর্ক বোঝাবার জন্য এটি একটি ছোট্ট উদাহরণ মাত্র, উদাহরণ দিয়েই সম্পর্কের গভীরতা মাপা যাবে না। করণা আবহাওয়া কালএ গোটা পৃথিবী জুড়ে এই সুন্দর সম্পর্কটা শেষ হতে চলেছে, একজন শিক্ষার্থীর কাছে দুই বছর সময় কাল চলে গেল, একজন নতুন শিক্ষার্থী যখন একটি নতুন বিদ্যালয় ভর্তি হয় সেই বিদ্যালয় সম্বন্ধে, সেই বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সম্বন্ধে তার অধীর আগ্রহ থাকে, নতুন বন্ধুত্বের শুভ আরম্ভ হয় এই বিদ্যালয়, একজন নতুন শিক্ষার্থী সেই স্বাদ থেকে বঞ্চিত হল।

See also  সরকারি নির্দেশ কে মান্যতা দিতে গিয়ে বাস মালিকদের কপালে ভাঁজ

আবার একজন দর্শন বা দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র ছাত্রী যখন বিদ্যালয় থেকে এডমিট কার্ড রেজিস্ট্রেশন কার্ড নিতে আসে তখন সে জেনে যায় এই বিদ্যালয় জীবনটা শেষ হতে চলেছে, সিসিসি দিনগুলো তাদের মন ভারাক্রান্ত হয়, চোখ জলে ভরে আসে, তার এতদিনের চেনা বিদ্যালয়, তার চেয়ার-টেবিল, তার বসার বেঞ্চ, তার খেলার মাঠ, তার দুরন্তপনা, প্রিয় শিক্ষক শিক্ষিকাদের বকুনি, সব মনে করতে থাকে। সেই দিন সমস্ত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের এমনকি সেই রাগী শিক্ষক টিকেও খুব আপন মনে হয়, ছেড়ে যেতে মন খারাপ করে। বন্ধুদের জন্য মন খারাপ করে, কেননা এরপর সব বন্ধু একে একে বিচ্ছিন্ন হতে থাকে। আর কোন বন্ধুদের সাথে একসাথে দশটা বছর এক ভাবে কাটানো হবে না। ছাত্র-ছাত্রীদের এই মনের ভিতর থেকে উঠে আসা আবেগ টি এই বিশেষ পরিস্থিতির জন্য আর এলোনা। করণা বা বর্তমান পরিস্থিতি গোটা পৃথিবী জুড়ে শুধু আমাদের প্রিয়জনদের কে কেড়ে নেয় নি, কেড়ে নিয়েছে ছাত্র-ছাত্রীদের বাল্যকালের, শৈশবের, কৈশোরের মূল্যবান সময়।

এমন কোন ভ্যাকসিন নেই যার দ্বারা এটি পরিপূর্ণ হবে । এই পরিস্থিতিতে মানুষ গড়ার কারিগরদের শুনতে হলো-“কি মাস্টার? বেশতো ঘরে বসে মাইনে পাচ্ছ তোমাদের আর কী, তোমাদের সুখের জীবন”। কেউ খোঁজ নিলোনা বিদ্যালয় গুলি বন্ধ হতে মাস্টারমশাইদের মনের অবস্থা কি হয়েছে। অনেক অভিভাবক অভিভাবিকা ভেবে দেখলেই না যে তাদের সন্তান গুলোকে শিক্ষক-শিক্ষিকারা নিজেদের সন্তানদের মতই ভালোবাসে, দীর্ঘদিন তাদের সাথে দেখা না হওতে তাদের মন খারাপ করে। শুধু ঘরে বসে মাইনে পাচ্ছ আর মাইনে পাচ্ছ এই কথাই শুনতে হয়। গরিব বাবার পড়াশোনায় আগ্রহী মেয়েটির এই সময়ে হয়ে গেল বিয়ে, যেহেতু স্কুল বন্ধ দামি মোবাইল নেই তাই অনলাইন ক্লাস করতে পারেনা, স্কুল কবে থেকে খুলবে তার কোন দিশা নেই, তাই কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা তার পড়াশোনা করতে চাওয়া মেয়েটিকে পাত্রস্থ করে দেয়।

See also  গঙ্গারামপুর পৌরসভা নির্বাচনের উন্নয়নই হাতিয়ার প্রশান্ত মিত্রের

লকডাউনে কর্মহীন বাবার সংসার চালানোর দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেয় পড়াশোনায় আগ্রহী ছেলেটি, যে স্বপ্ন দেখতো পড়াশোনা করে চাকরি পাবে, স্কুল বন্ধ লকডাউন তার ভবিষ্যতের স্বপ্ন টির মৃত্যু ঘটল। বর্তমান সময়ে বিদ্যালয় বন্ধ হওয়ার কারণে সৃষ্টি হয়েছে বহু শিশু শ্রমিক, হয়তো যখন স্কুল খুলবে তখন আর তাদেরকে স্কুলের আঙিনায় ফিরিয়ে আনা যাবে না, এক অপূরণীয় ক্ষতি। উচ্চ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হল বহু শিক্ষার্থী। দেশে শিক্ষার হার কমল, শিশু শ্রমিকের সংখ্যা বৃদ্ধি হল, নাবালিকার বিয়ে হল, বুদ্ধি হল বেকারত্বের, সমূলে উৎপাটিত হলো ভবিষ্যতের স্বপ্ন। হয়তো পৃথিবী আবার শান্ত হবে, নতুন রূপে নতুন সূর্য উঠবে, আবারো ছন্দে জীবন চলবে, কিন্তু যা গেল তা কি আর ফিরবে?

স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন ছাত্রছাত্রীরা স্কুলে না এলে স্কুলকে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে যেতে হবে। বর্তমান সময়ে সেই লোকটাকে নিয়ে এগিয়ে চলা হচ্ছে “পাড়ায় শিক্ষালয়”। কতটা ফলপ্রসূ হবে সেটা ভবিষ্যতে বলবে, রবি ঠাকুরের শান্তিনিকেতনে এই ধরনের পাঠদান পদ্ধতি আছে, কিন্তু তার সাথে বর্তমানে কোন খেলার মাঠে, ক্লাব প্রাঙ্গণে, শিক্ষাদান কখনো এক হতে পারেনা। দেখাযাক ভবিষ্যৎ কথা বলবে। তবে আমরা শিক্ষককুল এবং শিক্ষার্থীরা সকলেই আশাবাদী আবার স্কুল খুলবে আবার স্কুলের ঘন্টা শুনবো আবার হই হই রই রই করে মাঠে খেলব, ফিরে আসবে চেনা ছন্দে।

krishna Saha

আমার নাম কৃষ্ণ কুমার সাহা, আমি ফুল টাইম সাংবাদিকতা করি।গত ৮ বছর ধরে এই পেশায় আছি